পদ্মার চরে স্বপ্ন বুনেছেন চাষীরা

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২১, ১০:৩০ এএম

কমেছে পদ্মা নদীর পানি। জেগে উঠছে চর। সেই চর নিয়ে চাষিদের মনে জেগেছে রঙিন স্বপ্ন। এ স্বপ্ন তপ্ত বালুচরে সোনার ফসল ফলাবার। তাই বিস্তীর্ণ চরে এখন শুরু হয়েছে চাষিদের হাড়ভাঙা পরিশ্রম। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় পদ্মার বুকে জেগে উঠা চরে এখন চাষিদের কর্মব্যস্ততা।

চারঘাট উপজলার গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা লিটন আলী একজন মৎস্যজীবী। পদ্মায় যখন থৈ থৈ পানি, তিনি তখন নদী থেকে মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে পদ্মায় পানি কমে গেলেই পেশা বদল হয় তার। জাল-নৌকার বদলে হাতে তুলে নেন কোদাল-কাস্তে। চরের জমিতে ফলান সোনার ফসল। এবারও পদ্মায় পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যস্ততা শুরু হয়েছে।

লিটন জানান, দেড় মাস আগে থেকে তাদের নদীর পানি কমে চর জেগে উঠেছে। সেই জমিতে তিনি পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। পেঁয়াজ শেষে আবাদ করবেন পাট ও ধনচের। তার কিছু দিন পরই নদীতে আসবে পানি। তখন আবার জাল নিয়ে নদীতে নামবেন মাছ শিকারে।

শুধু চারঘাট নয়, জেলার গোদাগাড়ী, বাঘা ও পবা উপজেলার পদ্মা নদীতে হাজার হাজার বিঘা আবাদী জমির সৃষ্টি হয়েছে চর জেগে। পদ্মাপাড়ের হাজার হাজার কৃষক এখন উদ্যোগী হয়েছেন গম, মসুর, মটর ও ছোলাসহ নানা জাতের ফসল ফলাতে। বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে কৃষক সমিতি। এই সমিতির আওতায় কৃষকরা একত্রিত হয়ে শত শত বিঘা জমিতে চাষাবাদে নেমেছেন।

এমনই একটি সমিতি রয়েছে চারঘাট উপজেলার পিরোজপুর গ্রামে। এই সমিতির তাজমল হক জানালেন, পদ্মার পানি কমে গেলে শত শত বিঘা জমি জেগে ওঠে। তার মধ্যে যেসব জমি চাষের উপযোগী, সেখানে থাকে ঝাউগাছসহ নানা ধরনের ঝোপঝাড়ের জঙ্গল। সেগুলো একা কোনো ব্যক্তির পক্ষে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। তাই তারা একত্রিত হয়ে চাষ করেন।

তিনি জানান, সমিতিতে সব কৃষক সমানভাবে কাজে অংশ নেন। চাষাবাদের খরচও দেন সবাই সমান। উৎপাদিত ফসলের বণ্টনও হয় সমান। এখন এই পদ্মার চরের জমিতেই শত শত ব্যক্তির জীবিকা চলছে। তারা সবাই অপেক্ষায় থাকেন পানি কমার। পানি কমে চর জেগে উঠলেই তারা চাষাবাদে নেমে পড়েন সেই চরে।

চারঘাটের চন্দন শহর এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, চরের পলি মাটি খুব উর্বর। চাষাবাদে সার-কিটনাশক লাগে না বললেই চলে। তাই তাদের এলাকায় শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে পানি তুলে চরের জমিতে ধানেরও চাষাবাদ হয়। বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি থাকায় এবার চরে পেঁয়াজের আবাদ বেশি হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার বলেন, প্রতিবছর নতুন নতুন চর সৃষ্টি হচ্ছে। আবার অনেক জায়গায় আগের বছরের চরে পানি থাকছে। তবে চরের জমিতে চাষাবাদ করে অনেকেরই জীবন চলে। চাষাবাদে সব রকম সাহায্য সহযোগিতা করা হয়। চরে উৎপাদিত ফসল বড় ভূমিকা রাখে অর্থনীতিতে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh