বসতবাড়ির আঙিনায় সমন্বিত খামার সংখ্যা বাড়ছে

শেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২১, ০৪:৪৯ পিএম

ছবি: শেরপুর প্রতিনিধি

ছবি: শেরপুর প্রতিনিধি

বসতবাড়ীর আঙিনায় সবজি চাষ, হাঁস-মুরগি, গবাদি পশুপালন, মাছ চাষ, মাঠ ফসল চাষাবাদের মাধ্যমে সবন্বিত খামার ব্যবস্থাপনায় ফসলের নিবিড়তা ও আয় বাড়ে। 

এর মধ্য দিয়ে কৃষক পরিবারের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পুরণের পাশাপাশি আর্থিক স্বাবলম্বিতা অর্জনের ফলে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ঘটে। ফলে কৃষকদের এতে আগ্রহ বাড়াচ্ছে।

শেরপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণায় এমন চিত্র পাওয়া গেছে। সম্প্রতি সদর উপজেলার কামারিয়া এলাকায় সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষকের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বসতবাড়ীর আঙিনায় সবজি উৎপাদনের ওপর এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। 

স্থানীয় কৃষক মোহাম্মদ আলী (৬৫) জানান, আগে তিনি কৃষি ফসল আবাদ করে তেমন লাভবান হতে পারছিলেন না। কিন্তু এ প্রকল্পের আওতায় প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে ২০ শতক জমি চাষাবাদ করে প্রতিমাসে প্রায় ২০/২২ হাজার টাকা করে আয় করছেন। এখন তিনি তার বসতবাড়ির এক শতক পতিত জমিতে ছয়টি বেড করে বছরে পর্যায়ক্রমে ১৬টি ফসল আবাদ করছেন। দুই ফসলি জমিতে এখন চার ফসল করছেন। হাঁস-মুরগি পালন ও পুকুরে মাছের চাষ করছেন। 


আরিফ (২৪) নামের এক যুবক বলেন, আমাদের খুব বেশি জমি নেই। ফসল আবাদ করে তেমন লাভ হতো না। একপর্যায়ে আমার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছিলো। কিন্তু সরেজমিন কৃষি গবেষণার এ প্রযুক্তি সহায়তা পেয়ে আমি ছাগল ও কবুতর লালন-পালন শুরু করি। বাড়ির আঙিনার পতিত জমিতে নানা ধরনের সবজির আবাদ শুরু করি। গত তিন বছরে এখন আমি স্বাবলম্বী। মাসে অন্তত ১০ হাজার টাকা আয় হয়। নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছি। পরিবারকেও সহায়তা করছি। গরুর খামার করেছি, ছাগল পালছি, কবুতরও রয়েছে অনেকগুলো। স্থানীয় কৃষকরাও এ প্রযুক্তি দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন ও তাদের নিকট এর কলাকৌশল জানতে চাচ্ছেন।  

কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন শেরপুর খামার বাড়ীর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোহিত কুমার দে। বারি সরেজমিন গবেষণা বিভাগ শেরপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সামছুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন। আরো বক্তব্য রাখেন কৃষি বিজ্ঞানী ড. মো. আসাদুজ্জামান, কৃষিবিদ ফরিদুল ইসলাম, কৃষিবিদ জিয়াদুন নূর টিটো, কৃষক মোহাম্মদ আলী প্রমুখ। 

সামছুর রহমান বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে ‘নারকেলি মডেলে’ বসতবাড়ির ১৭টি স্থানে বছরব্যাপী কৃষি আবাদ করা যায়। এতে ফসলের নিবিড়তা যেমন বাড়ে, তেমনি কৃষকের আয়ও বাড়ে। এই মডেলে মাত্র আধা শতক জমিতে ছয়টি বেড তৈরি করে সারাবছর খাওয়ার উপযোগী ১৭ ধরনের শাক-সবজি আবাদ করা যায়। এছাড়া কৃষকরা পাঁচটি কম্পনেন্ট মাঠ ফসল, হাস-মুরগি পালন, পশুপালন, মাছ চাষ ও বসতবাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষাবাদ করে নিজেদের খাবারের যোগান ছাড়াও বিক্রি করে লাভবান হতে পারেন। এই প্রযুক্তিটিই সরেজমিনে এখানকার কৃষকদের মাধ্যমে গত তিন বছর ধরে বাস্তবায়ন করে দেখাতে চেষ্টা করেছি। 

এ এলাকায় ১২ কৃষক সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন ও তারা এখন স্বচ্ছলভাবে জীবনযাপন করছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh