স্ত্রী সন্তানকে দিয়ে ক্ষেতে মই দিচ্ছেন কৃষক

 ইলিয়াস আহমেদ

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২১, ০৫:৫২ পিএম

একেকটা মানুষের জীবনের গল্প একেক রকম। কখনো আনন্দ আবার কখনো বেদনার। কারও গল্পটা আবার বিষাদের। তেমনি কষ্টে ভরা গল্প ময়মনসিংহের ভালুকার কৃষক আবু বকর সিদ্দিকের। এক সময় তার সহায় সম্পত্তি থাকলেও এখন অল্প কিছু সম্পদই ভরসা। তবে চাষের জন্য নেই বলদ। তাই স্ত্রী সন্তানকে দিয়ে মই টানিয়ে প্রস্তুত করছেন ক্ষেত। ফ্যাক্টরির বিষাক্ত বর্জ্যে আবার রয়েছে সেই ক্ষেতের ফসল নষ্টের শঙ্কা।
 
ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের ছোট কাশর এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, যে কাজটি বলদ কিংবা ট্রাক্টর দিয়ে করানোর কথা, সেই কাজটি করছেন কৃষক আবু বকর সিদ্দিকের স্ত্রী মমতাজ বেগম এবং শিশু পুত্র মাহাদী হাসান সুমন। তাদের দিয়ে ক্ষেত রোপণের প্রস্তুতের জন্য মই দেওয়া হচ্ছে। এ কাজে সহযোগিতা করছেন আবু বকর সিদ্দিক।

আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ৩৫ শতাংশ জমি ট্রাক্টর দিয়ে হালের কাজ করিয়েছেন; কিন্তু টাকার অভাবে কয়েক দিন ধরে ক্ষেতে মই দিতে পারছিলেন না। অনেক জায়গায় টাকা ধার চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। পরে নিরুপায় হয়ে স্ত্রী সন্তানকে দিয়ে মইয়ের রশি টানাচ্ছেন এবং নিজে মইয়ের পেছনে ধরে সহযোগিতা করছেন। বুকভরা আশা নিয়ে ধান রোপণ করলেও ফসল তোলা নিয়ে সংশয় রয়েছে তার। ওয়ান শিসাং ইন্ডাস্ট্রির বিষাক্ত পানির জন্য গেল পাঁচ বছর ধরে ফসল ঘরে তুলতে পারছেন তিনি। তবে ক্ষেত পতিত না রেখে আশা নিয়ে এবারও রোপণের জন্য প্রস্তুত করছেন।

আবু বকর সিদ্দিকের স্ত্রী মমতাজ বেগম বলেন, ৬ সদস্যের সংসারে উপার্জনের লোক নেই। তাই কিছু টাকা বাঁচানোর জন্য স্বামীকে সহযোগিতা করছেন। এটিকে তিনি গর্বের মনে করছেন। কারও কাছে টাকা ধার চেয়ে না পাওয়া এবং পেলেও সময় মতো পরিশোধ করতে না পারলে অনেক কথা শুনতে হয়। তাই কারও কাছে মাথা নত না করে নিজের কাজ নিজে করাই উত্তম বলে মনে করেন মমতাজ।

তাদের ছেলে মাহাদী হাসান সুমন দশম শ্রেণির ছাত্র। সে জানায়, করোনার জন্য স্কুল বন্ধ। তার বাবা মূলত কৃষক। এখন তার বয়স হয়েছে তাই কাজও ঠিকমতো করতে পারে না। এলাকায় কাজের লোক পাওয়া পারিশ্রমিক দিতে হয় বেশি। তাই মাকে নিয়েই কাজে নেমেছেন।

ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নারগিস আক্তার অভাবের তাড়নায় স্ত্রী সন্তানকে দিয়ে হাল চাষ করানো দুঃখজনক দাবি করে তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh