যাত্রামোহনের বাড়ি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হচ্ছে

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২১, ১১:৩৯ পিএম

চট্টগ্রামে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িতে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ করবে সরকার। এ জন্য জেলা প্রশাসেনর সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে শনিবার (২৩ জানুয়ারি) নগরের বাকলিয়া সার্কেলের রহমতগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক এই ভবনের বিভিন্ন অংশে নোটিশ লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) ড. বদিউল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এসএম জাকারিয়া, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তার, বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল হাসান, কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল হাসান জানান, যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন স্থাপনা। সংবিধানের ২৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎপর্যমণ্ডিত স্মৃতি নিদর্শন, বস্তু বা স্থাপনাসমূহ বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ থেকে রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এছাড়া এই বাড়ি রক্ষায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব এবং আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি রক্ষায় সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। এই বাড়িকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হিসেবে নির্মাণ করা হবে। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমরা আজকে নোটিশ লাগিয়ে দিয়েছি। অন্য আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হিসেবে তৈরি করা হবে।

নগরের বাকলিয়া সার্কেলের রহমতগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িটি মুক্তিযুদ্ধের পরে বেদখল হয়। পরে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নিয়ে শামসুদ্দিন মো. ইছহাক নামে এক ব্যক্তি সেখানে ‘বাংলা কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরে নাম বদলে সেই ভবনে ‘শিশুবাগ স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।  

৪ জানুয়ারি সকালে এম ফরিদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির ছেলেরা আদালতের আদেশ নিয়ে বাড়িটির দখল নিতে আসেন। পুলিশের উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের নাজির আমিনুল হক আকন্দ ‘দখল পরোয়ানা’সহ কাগজপত্র নিয়ে তাদের বাড়িটি বুঝিয়ে দেন। দুপুরে বুলডোজার দিয়ে ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি ভাঙা শুরু হলে অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তের নেতৃত্বে স্থানীয়রা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তারা ঐতিহাসিক এই ভবনটি না ভেঙে সংরক্ষণের দাবি জানান।

খবর শুনে ঘটনাস্থলে হাজির হন জেলা প্রশাসনের বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল হাসান। তিনি নথিপত্র পর্যালোচনা শেষে সাংবাদিকদের জানান, জমিটি সরকার লিজ দিয়েছে। ইজারা দেয়া জমির বিষয়ে আদালতের কোনো আদেশ হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। আমরা এখন তালাবদ্ধ করে যাব। এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এরপর থেকে সেটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়।

৬ জানুয়ারি জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ির দখল ও অবস্থানের উপর স্থিতাবস্থা জারি করেন। ঐতিহাসিক বাড়িটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে সংরক্ষণ করার ব্যর্থতাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ওই স্থাপনাকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে ৭ জানুয়ারি যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি ভাঙার উপর নিষেধাজ্ঞা দেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পাশাপাশি বাড়িটি ভাঙার সঙ্গে জড়িতদের ২০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর আদেশও দেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh