ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৯:৫৮ এএম
ভারতে এখন আন্দোলন হলে বা কোনো সমস্যা হলেই ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। চার বছরে ৪০০ বার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়েছে ভারতে।
কিছুদিন আগে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়ার অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু ভারতের মানুষ কি এই অধিকার ভোগ করতে পারছেন? প্রশ্ন উঠছে- কারণ টপ টেন ভিপিএনের রিপোর্ট বলছে, ভারতে গত চার বছরে ৪০০ বার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এমন নয় যে, সারা ভারতে পরিষেবা বন্ধ ছিল। পরিষেবা বন্ধ করা হয় কখনো কোনো রাজ্যের একটি নির্দিষ্ট এলাকায়, অথবা পুরো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে।
রিপোর্ট অনুসারে গত এক মাসে সাতবার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে। তার মধ্যে পাঁচবার বন্ধ করা হয়েছে- দিল্লি, ঝজ্জর, সোনেপত, পলওয়ালের মতো জায়গায় কৃষক বিক্ষোভের জন্য। দিল্লির সীমানায় থাকা কৃষকরা বেশ কয়েকবার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকার অভিযোগ করেছেন।
কৃষকদের অভিযোগ, তাদের আন্দোলনে বাধা দেয়ার জন্যই এই ব্যবস্থা নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। আর সরকারের দাবি, লালকেল্লার ঘটনার পর সহিংসতা যাতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করার জন্য এই পদক্ষেপ।
সবচেয়ে বেশিদিন ধরে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছিল অবশ্য জম্মু ও কাশ্মীরে। ৩৭০ ধারা বিলোপ এবং জম্মু ও কাশ্মীরকে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার পর কাশ্মীর উপত্যকায় ২৩৩ দিন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। এতদিন ধরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকা ভারত তো বটেই বিশ্বের আর কোনো দেশে হয়নি। সিএএ ও এনআরসিবিরোধী আন্দোলন চলার সময়ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছিল।
তবে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করার কাজটা যে শুধু কেন্দ্রীয় সরকার করে তা নয়, অনেক রাজ্য সরকারও করে থাকে। বিশেষ করে কোনো কারণে উত্তেজনা দেখা দিলে সাথে সাথে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। আর এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। ২০২০ সালের হিসাব, আট হাজার ৯২৭ ঘণ্টা ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল ভারতে।
জম্মু ও কাশ্মীর ছাড়া উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, হরিয়ানা ও পশ্চিমবঙ্গে নেট পরিষেবা বন্ধ করার ঘটনা বেশি ঘটে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে নেট পরিষেবা বন্ধ করার তালিকায় ভারতের স্থান একেবারে উপরে।
ইন্টারনেটশাটডাউন ডটকমের হিসাব, জম্মু ও কাশ্মীরে ২২৩ বার, রাজস্থানে ৬৫ বার, উত্তর প্রদেশে ২৭ বার, হরিয়ানা ও পশ্চিমবঙ্গে ১২ বার, মহারাষ্ট্রে ১০ বার ইন্টারনেট বন্ধ ছিল।
ভারতে আইন অনুযায়ী কেন্দ্র বা রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবের নির্দেশে সাময়িকভাবে টেলিকম পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া যেতে পারে। অ্যাকসেস নাওয়ের রিপোর্ট বলছে, ভারতে অনেক সময় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। ২০১৭ সালে ইন্টারনেট শাটডাউনের ৭৯টি ঘটনার মধ্যে ৬১টি ছিল সতর্কতামূলক।
গতবছরের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে ভারতের নরেন্দ্র মোদির সরকার। এরপর বিক্ষোভ প্রতিরোধের নামে ওই এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। এখনো তা অব্যাহত আছে। কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের শাসনামলে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার এটিই সবচেয়ে দীর্ঘ ঘটনা।
ইন্টারনেট বন্ধ রাখার একটা আর্থিক মূল্যও আছে। হিসাব বলছে, ভারতে এক ঘণ্টা নেট বন্ধ থাকলে ২ কোটি রুপি করে ক্ষতি হয়। ফলে প্রায় নয় হাজার ঘণ্টা ইন্টারনেট বন্ধ থাকার ফলে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। -ডয়চে ভেলে