সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১২:২৬ পিএম
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়েছে। জানুয়ারির প্রথম তিন সপ্তাহে সারা বিশ্বে প্রায় ছয়কোটি মানুষ ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজটি নিয়েছেন। যদিও ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কতোদিন বহাল থাকবে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এখনো নিশ্চিত নন।
করোনার যেসব রূপ দেখা গেছে, এ ভ্যাকসিন আদৌ সেসব মোকাবেলা করতে পারবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। এতোসব সংশয় ও আশা-নিরাশার দোলাচলের মধ্যেও ভ্যাকসিন দেশের সাধরণ মানুষের কাছে মহামারির বিভীষিকাময় অন্ধকারে আশার আলো বয়ে এনেছে।
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির গবেষণায়-উৎপাদনে অধিকাংশক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় করেছে ধনী দেশগুলোয় অবস্থিত সম্পদশালী কোম্পানিগুলো। মাহামারির হাত থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করার চেয়ে তাদের অধিক মনোযোগ মুনাফা বাড়ানোয়। বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো এইসব কোম্পানির উৎপাদিত ভ্যাকসিনের উপর নিরর্ভশীল। বিষয়টি কেবল গরিব দেশগুলোর জন্যে বেশি দাম দিয়ে ভ্যাকসিনের কেনার উপর নির্ভর করছে না।
এর সাথে সংশ্লিষ্ট দেশের কূটনৈতিক বোঝাপড়ার সম্পর্কও রয়েছে। কারণ চাহিদার তুলনায় ভ্যাকসিনের উৎপাদনের পরিমাণ অনুল্লেখযোগ্য। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধের হিসেব মতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য ১৯৪টি দেশে মোট ভ্যাকসিনের প্রয়োজন ১৫০০ কোটি ডোজ। এ পরিমান ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
নিবন্ধে আরো বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের মোট ২৭৩টি ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণায় মাত্র ১২টি ভ্যাকসিন গবেষণার তৃতীয় ধাপ পেরিয়েছে। এ ভ্যাকসিনগুলোর কার্যকারিতা ৭০% থেকে ৯৫% শতাংশ। এর মধ্যে ছ’টি ভ্যাকসিনকে বিভিন্ন দেশে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া ভ্যাকসিনগুলোর মধ্যে রয়েছে ফাইজার-বায়োএনটেক কোম্পানির টোজিনামেরান, মডার্না কোম্পানির এমআরএনএ-১২৭৩, সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের দুটি ভ্যাকসিন, গামালেয়া রিসার্চ ইন্সটিটিউটের তৈরি একটি ও অক্সফোর্ড -অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি একটি ভ্যাকসিন।
বাংলাদেশ আমদানি করছে অক্সফোর্ড -অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনটি। প্রথম ধাপে ভারত থেকে ভ্যাকসিন আমদানিতে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিলো তা আপাতত নিরসন হয়েছে। এখন চলছে ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের নিবন্ধন। প্রশ্ন উঠেছে নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে। নিবন্ধনের পর মাঠ পর্যায়ে ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য যথেষ্ট মাত্রায় জনবলেরও ঘাটতিও রয়েছে। ফলে মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য জনমনে আশা সঞ্চারকারী ভ্যাকসিন কবে মিলবে তার জন্যে প্রত্যাশার প্রহর গোনা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকছে না।
দেশের প্রায় ১৪ কেটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। যার মধ্যে প্রথম পর্যায়ের দুই ধাপে ১০ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিনের আওতায় আসবেন। প্রথম পর্যায়ে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে অগ্রাধিকার পাবেন স্বাস্থ্যকর্মী, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন এমন বয়স্ক মানুষ, শিক্ষাকর্মী ও জনপরিবহনের কর্মীরা।
কে কখন ভ্যাকসিনের আওতায় আসবেন তার একটা বিবরণ হাজির করা হয়েছে মাত্র। নিবন্ধন প্রক্রিয়া চূড়ান্তকরণ, ভ্যাকসিনের সরবরাহ ও সংরক্ষণ নিশ্চিতকরণ, ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য কর্মী নির্বাচনের কাজগুলো কিভাবে সম্পন্ন করা হবে তা সরকারের তরফ থেকে সুস্পষ্টভাবে জানানো হয়নি। ফলে জনমনে ভ্যাকসিন নিয়ে ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের উচিত অনতিবিলম্বে জনগণের মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়ে সব বিভ্রন্তি দূর করা।