অমা কেটে আলো আসবেই

ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০১:২২ পিএম

ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দিন বুঝি শেষ হলো। বহুল প্রত্যাশিত টিকা এখন আমাদের নাগালের মধ্যে। অদম্য লড়াইয়ে অভ্যস্ত বাঙালি জাতি আবারো ফিরে পাবে সুস্থ-সোনালি দিন, সে প্রত্যাশা এখন আমরা করতেই পারি। 

‘অদম্য আট’ স্লোগান নিয়ে এ বছর সাম্প্রতিক দেশকাল পদার্পণ করেছে আট বছরে। প্রতি বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশের পাশাপাশি আমাদের কার্যালয়ে সর্বস্তরের মানুষের মিলনমেলা ঘটলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার সেরকম কোনো অনুষ্ঠান করিনি আমরা। শুধু সহকর্মীদের নিয়ে ২ ফেব্রুয়ারি ঘরোয়া আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে প্রতিবারের মতোই পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছে হাজির হবো প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিশেষ অনুষ্ঠান নিয়ে। 

সাম্প্রতিক দেশকালের অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের সকল পাঠক, লেখক, শুভানুধ্যায়ী, বিতরণ ও বিপণনকর্মী- সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনারা সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন।

করোনা অতিমারিতে অন্যান্য খাতের মতো আক্রান্ত হয়েছিল সংবাদমাধ্যমও। খোদ সাম্প্রতিক দেশকাল এক কঠিন সময় পার করেছে। এই ঝড়ে অনেক সংবাদমাধ্যম সাময়িক ও স্থায়ীভাবে ঝরে গেলেও সাম্প্রতিক দেশকাল সেই পরিস্থিতি বেশ পেশাদারিত্বের সাথে মোকাবিলা করেছে। এই যুদ্ধ আমরা অদম্য সাহস, সদিচ্ছা ও সক্রিয়তার সাথে সামাল দিয়েছি। আমরা একটুও থমকে যাইনি। করোনার দুঃসময়েও আমরা সার্বক্ষণিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল, সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ও ত্রৈমাসিক দেশকাল পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছি। একবারের জন্যও আমাদের প্রকাশনা কিংবা ২৪ ঘণ্টার বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের অনলাইন আপডেট থেমে থাকেনি। অতিমারি এই দুঃসময়ে জনগণের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকারকে সমুন্নত রাখতে আমরা নিরলস কাজ করে গেছি। 

প্রায় সাড়ে তিন মাস প্রিন্ট পত্রিকা ও অনলাইনের সব কাজ সহকর্মীরা বাসা থেকে করেছেন। ভয় ও আতঙ্কের মাঝেও আমরা সবকিছু হাসিমুখে মেনে নিয়েছি সৎ সাংবাদিকতার স্বার্থে। আমাদের সংবাদকর্মীরা করোনাভীতি উপেক্ষা করে মাঠে কাজ করেছেন। কাজ করতে গিয়ে আমাদের ক’জন সহকর্মী করোনায় আক্রান্তও হয়েছেন। করোনা জয় করে তারা আবার নতুন উদ্যমে দায়িত্ব পালন করছেন। এজেন্ট-হকার পত্রিকা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা সব পাঠক আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন। যার প্রমাণ, আমাদের প্রচারসংখ্যা একটুও না কমা। 

আপনাদের এই আস্থা আমাদের অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করেছে। করোনাকালে নিয়মিত প্রকাশনা অব্যাহত রাখা ছাড়াও ত্রৈমাসিক দেশকাল পত্রিকার ই-পেপার উদ্বোধন ও সাংবাদিকতার মানোন্নয়নে প্রশিক্ষণের আয়োজনসহ নানা কার্যক্রম আমরা পরিচালনা করেছি।

এত এত সংবাদমাধ্যমের ভিড়ে মানুষ যে আমাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছেন, তাতে আমরা অভিভূত। সাধারণ মানুষের প্রতি আমাদের দায় আরো বেড়ে গেল। 

এবার প্রমাণ হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ শত ঝড়-ঝঞ্ঝার মাঝেও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের পাশে থাকেন। মানুষ আস্থা রাখেন পেশাদার সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের ওপর। দুর্যোগের সময় সবাই নিরাপদে থাকলেও সংবাদ মাধ্যমকে অতন্ত্র প্রহরীর ভূমিকায় থাকতে হয়। সাম্প্রতিক দেশকাল যেভাবে প্রহরীর ভূমিকায় ছিল, ভবিষ্যতেও একইভাবে থাকবে। সময় যত ধূসরই হোক, যত হতাশাই থাকুক, যত অন্ধকারই থাকুক, যত মিথ্যার বেসাতি থাকুক- আমরা সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ তুলে ধরব। এটকে আমরা দায়িত্ব মনে করি। 

এই সময়ে আমরা হারিয়েছি দেশের বেশ কয়েকজন সেরা ও অগ্রসরমাণ মানুষকে। হারিয়েছি অনেক রাজনীতিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। তাদের সবার স্মৃতির প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। আজকের এই দিনে একজন মানুষের কথা সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে। সাম্প্রতিক দেশকালের উপদেষ্টা, ভাষাসৈনিক মো. জাহিদ হোসেন মুসা, যিনি পত্রিকাটির সূচনালগ্ন থেকেই আমাদের অভিভাবক হিসেবে পাশে ছিলেন, তিনি আমাদের সবাইকে ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। তার প্রতি সাম্প্রতিক দেশকাল পরিবারের বিনম্র শ্রদ্ধা। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে তার সন্তান রেডিয়েন্ট কোম্পানিসমূহের চেয়ারম্যান মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী আমাদের পাশে থেকে উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে চলেছেন। তার প্রতি আমাদের সবিশেষ কৃতজ্ঞতা।

করোনার কালো সময় পার হতে চলেছে। দিনে দিনে ভীতি দূর হচ্ছে, হতাশা কেটে যাচ্ছে। নতুন উদ্দীপনায় মানুষ পা রাখছেন আশার আলোয়। মানুষ ফিরতে শুরু করেছেন নতুন স্বাভাবিকতায়। এমন সুসময়ে আমরাও পা দিলাম অষ্টম বর্ষে। দুঃসময় পেরিয়ে সবক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশের জয় দেখতে চাই, সাধারণ মানুষের মুখে হাসি দেখতে চাই, দেখতে চাই একটি মুক্ত চিন্তার সমতাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। এটি সম্ভব কেবল রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মধ্য দিয়েই। 

অন্ধকার সময়ে সাম্প্রতিক দেশকাল যেমন আপনাদের সাথে ছিলো, আলোকিত সময়েও পাশে থাকবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh