ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:৪৪ এএম
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষের এক বিক্ষোভ সমাবেশে করার পর সামরিক শাসকরা দেশটির ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।
দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে আজ রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) এ সমাবেশ করে বিক্ষোভকারীরা।
শহরটিতে সাধারণ মানুষ ‘সামরিক একনায়ক, ব্যর্থ, ব্যর্থ; গণতন্ত্র, জয়, জয়’ বলে স্লোগান দেয়। পরে পুলিশ দাঙ্গার ঢাল হাতে শহরের কেন্দ্রস্থলের প্রধান সড়কগুলো অবরুদ্ধ করে দেয়।
এদিকে দেশটির পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা নেটব্লকস ইন্টারনেট অবজারভেটরি বলেছে, সাধারণ পর্যায়ে সংযোগ ১৬%-এ নেমে যাওয়ার মাধ্যমেই এই ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট কার্যকর হয়।
সাধারণ মানুষ যেন কোনো বিক্ষোভ সমাবেশ করতে না পারে এজন্য সামরিক বাহিনী টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয়। এর কয়েক ঘণ্টা পরে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। দেশটির সবচাইতে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল আগেই।
ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে অনেক ব্যবহারকারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উপর থেকে সেনাবাহিনীর এই নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে গিয়েছিলেন, তবে সাধারণ ব্ল্যাকআউট এই ক্ষেত্রেও বড় ধরণের বাধার সৃষ্টি করেছে।
নাগরিক সংস্থাগুলো এই ব্ল্যাকআউট আদেশকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য ইন্টারনেট সরবরাহকারী ও মোবাইল নেটওয়ার্কের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধের এই পদক্ষেপকে ‘জঘন্য ও বেপরোয়া’ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এতে মিয়ানমারবাসীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি হতে পারে।
তবে দেশটির সামরিক বাহিনী এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ইন্টারনেট বন্ধ রেখেও সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দমিয়ে রাখা যায়নি। মিও উইন (৩৭) নামে জন বিক্ষোভকারী বলেন, আমরা এগিয়ে যাবো ও গণতন্ত্র না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের দাবি জানানো অব্যাহত রাখবো।
অপর প্রতিবাদকারীরা যেসব ব্যানার বহন করছিল তাতে লেখা ছিল, আমরা সামরিক নেতৃত্ব চাই না। মিয়াত সু কায়ো নামের ২৭ বছর বয়সী এক প্রতিবাদকারী বলছিল, দীর্ঘসময় ধরে সামরিক একনায়কতন্ত্র আমাদের দেশে শেকড় গজিয়ে বসেছে। আমাদেরকে অবশ্যই এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
ইয়াঙ্গুন ইউনিভার্সিটির কাছে সমাবেশ স্থলে পুলিশ মোতায়েন ছিল। কাছাকাছি দাঙ্গা পুলিশও অবস্থান নিয়েছিল।
এদিকে গতকাল শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে কারখানার শ্রমিক, তরুণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার বিক্ষোভকারীরা দেশটির নির্বাচিত নেতা অং সান সুচিসহ সেনাবাহিনীর হাতে আটক অন্য নেতাদের মুক্তির আহ্বান জানায়। তারা ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় মিছিল করে যায়, এ সময় সিটি বাস বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে হর্ন বাজায়।
পথচারীরাও তিন আঙুল তুলে হাঙ্গার গেমসের স্যালুটটি দেয়। এই স্যালুট কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এছাড়া অনেকেই বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে না হয় হাঁড়ি-পাতিল বাজিয়ে বিক্ষোভের প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করে। -বিবিসি ও এএফপি