চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:০০ পিএম
চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যাকাণ্ডের প্রায় সাড়ে তিন বছরের মাথায় আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেয়া চার্জশিট গ্রহণ করেছেন আদালত। আগামী ২৩ মে এ মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
আজ মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে অতিরিক্ত মহানগর হাকিম মহিউদ্দিন মুরাদের আদালত এ চার্জশিট গ্রহণ করেন।
এ সময় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা একজন এবং জামিনে থাকা ১৭ জনসহ মোট ১৮ জন আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অপর ৬ জন পলাতক আসামির বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
নগর পুলিশের প্রসিকিউশন শাখার সহকারী কমিশনার শাহাবুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘পিবিআইয়ের দেয়া চার্জশিটে মামলার বাদীর কোনো আপত্তি না থাকায় আদালত সেটি গ্রহণ করেছেন। আগামী ২৩ মে এ মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।’
সম্প্রতি দেয়া পিবিআইর চার্জশিটে খুনের নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে নগরীর লালখানবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের নাম উল্লেখ করা হয়। পিবিআই জানায়, দিদারুল আলম মাসুমের পাশাপাশি খুনে সরাসরি জড়িত হিসেবে খাইরুল নূর ইসলাম ওরফে খায়ের, আমির হোসেন ওরফে বাবু, মোক্তার, জিহাদসহ ২৪ জনের নাম চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়।
চার্জশিট দাখিলকারী ও পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ চাকমা বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামিদের জবানবন্দি ও সাক্ষ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে অভিযোগপত্রে ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। সাক্ষী করা হয়েছে ৭৫ জনকে। আসামিদের ১৮ জনকে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার করা হয়েছে। ছয়জন এখনো পলাতক আছেন।’
তিনি বলেন, ‘মূলত দিদারুল আলম মাসুমের পরিকল্পনা ও নির্দেশে সুদীপ্তকে খুন করা হয়েছে বলে তদন্তে স্পষ্ট উঠে এসেছে।’
২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর সকালে নগরের দক্ষিণ নালাপাড়ার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয় নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে। সুদীপ্তর বাবা মেঘনাথ বিশ্বাস বাদী হয়ে সদরঘাট থানায় অজ্ঞাত সাত-আটজনকে আসামি করে যে হত্যা মামলা করেছিলেন, এক বছর পর তারই আবেদনে আদালত এর তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে দেয়।
২০১৮ সালের ১২ জুলাই গ্রেফতার মিজান হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে মাসুমের নাম বলার পর গ্রেফতার হন মাসুমও। তিনি ছাড়াও এ মামলায় আরো ১৭ জন গ্রেফতার হয়েছেন, যারা সবাই মাসুমের অনুসারী বলে পরিচয় দিয়েছেন। এদের মধ্যে চারজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, লালখানবাজার এলাকা থেকে আটটি অটোরিকশা করে দক্ষিণ নালাপাড়া গিয়েছিল হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা। পিবিআই মামলার তদন্তভার নেয়ার পর সাতটি অটোরিকশা জব্দ করে। জব্দ করা হয়েছে একটি মোটরসাইকেলও। এসব অটোরিকশা চালকদের মধ্যে তিনজন সাক্ষী হিসেবে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ মামলায় মাসুমের নাম আসার কিছু দিন পর অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন ১৪ নম্বর লালখানবাজার ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর এফ কবির মানিক। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই মাসুমের দুইটি অস্ত্রের নিবন্ধন বাতিল করে আদেশ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ৩ অগাস্ট বিকেলে মাসুম নিজে গিয়ে নিবন্ধন বাতিল করা তার অস্ত্রগুলো খুলশী থানায় জমা দিয়েছিলেন। পরদিন ঢাকার বনানী থেকে মাসুমকে গ্রেফতার করে পিবিআই। তিনি এখন জামিনে আছেন।