মেসির বিরাট অঙ্কের চুক্তি স্বাক্ষর

খলিলুর রহমান

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৯:৫৩ এএম

গত ৩১ জানুয়ারি অতি গোপনীয় চুক্তির বিষয়টি ফাঁস করেছে এল মুন্ডো। এরপর থেকেই ফুটবল দুনিয়ার প্রধান আলোচ্য বিষয় দাঁড়ায়, ক্লাব বার্সেলোনার সাথে লিওনেল মেসির ৪ বছর মেয়াদি সর্বশেষ চুক্তিটির খবর। 

আসলে ঠিক চুক্তিটি নয়, ফুটবলপ্রেমীদের চোখ বিস্ময়ে কপালে তুলেছে মূলত চুক্তির টাকার অঙ্কটি। একজন খেলোয়াড়ের ৪ বছরের একটি চুক্তির মূল্য ৫৫৫ দশমিক ২৪ মিলিয়ন ইউরো! বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে এত দামি চুক্তি অতীতে কখনোই হয়নি।

এমন উচ্চমূল্যের চুক্তি দূরের কথা, কোনো ক্লাব একজন খেলোয়াড়ের পেছনে ৪ বছরে এত টাকা খরচ করার চুক্তি করতে পারে, এমনটা কল্পনা করাও কঠিন। কিন্তু মেসিকে ধরে রাখতে বার্সেলোনা ২০১৭ সালে এই অকল্পনীয় চুক্তিটাই করেছিল। 

২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত, ৪ বছর মেয়াদি চুক্তিটির মাধ্যমে মেসি বার্সেলোনা থেকে মোট আয় করতে যাচ্ছেন ৫৫৫২৩৭৬১৯ ইউরো! মানে প্রায় ৫৫৫ দশমিক ২৪ মিলিয়ন ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা ৫৭০২ কোটি ৮১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা! স্বাভাবিকভাবেই বিশাল অঙ্কের এই গোপনীয় চুক্তিটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বিব্রত অবস্থায় পড়ে গেছেন মেসি ও বার্সেলোনা। মেসি তো চুক্তিটি ফাঁস হওয়ায় রাগে-ক্ষোভে বার্সেলোনার সাবেক সভাপতি জোসেফ মারিয়া বার্তোমেউয়ের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকিও দিয়েছেন! শেষ পর্যন্ত মামলা তিনি করবেন কিনা কে জানে। তবে চুক্তিটি ফাঁস হওয়ায় মেসি যে ভীষণ চটেছেন, সেটি স্পষ্টই।

তার চটে যাওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে। এমনিতেই খেলোয়াড়দের সাথে ক্লাবগুলোর বেতন-ভাতাবিষয়ক চুক্তি সব সময় গোপন রাখা হয়। সেখানে মেসির সাথে বার্সার চুক্তির অঙ্কটা তো চোখ কপালে ওঠার মতো। স্বাভাবিকভাবেই বার্সেলোনা চুক্তিটি আরো বেশি গোপন রেখেছিল। কিন্তু সম্প্রতি গোপনীয়তার তালা খুলে অতি-উচ্চমূল্যের চুক্তিটি বাইরে বের করে এনেছে এল মুন্ডো। 

স্প্যানিশ পত্রিকাটি প্রতিবেদনের সাথে চুক্তির কপি জুড়ে দেয়ায় মেসি বা বার্সেলোনা খবরটিকে অস্বীকারও করতে পারেনি। চুক্তির দলিল জুড়ে দিয়ে এল মুন্ডো অস্বীকার করার উপায় রাখেনি। উপায়ান্তর না দেখে ক্লাব বার্সেলোনা তাই উচ্চমূল্যের চুক্তিটির পক্ষেই সাফাই গেয়েছে। ক্লাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চুক্তির অঙ্কটা মোটেই অযৌক্তিক নয়। বরং এই টাকাটা মেসির প্রাপ্য। কোচ রোনাল্ড কোমান বলেছেন, কেউ মেসির ক্ষতি করতে চাইছে; কিন্তু মেসি নিজের পক্ষে কি যুক্তি দেখাবেন? 

চুক্তির অঙ্কটা ফাঁস হওয়ায় মেসি ব্যক্তিগতভাবে সত্যিই ক্ষতির মুখে। তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগে মামলা হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। স্প্যানিশ কর কর্তৃপক্ষ অতীতেও মেসির বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগে মামলা করেছিল। সেজন্য আদালতে দৌড়ঝাঁপ করার পাশাপাশি বিশাল অঙ্কের জরিমানাও গুনতে হয়েছে মেসিকে। চুক্তিটি ফাঁস হওয়ায় আরো একবার সেই চক্করে পড়ার ভয় মেসির পাওয়ার কথাই। তিনি কিছুতেই বুঝতে পারছেন না, বার্সেলোনার মতো নামি ক্লাব থেকে কীভাবে চুক্তিটি ফাঁস হলো? মেসির সন্দেহ বার্সার সাবেক সভাপতি জোসেফ মারিয়া বার্তোমেউই হয়তো ফাঁস করেছেন। বার্সার এই সাবেক সভাপতির সাথে দ্বন্দ্বের কারণেই গত গ্রীষ্মে ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন মেসি; কিন্তু তাকে যেতে দেয়া হয়নি। উল্টো গত ডিসেম্বরে বার্তোমেউকেই সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।

২০১৭ সালে মেসির সাথে বিশাল অঙ্কের চুক্তিটি করেছিলেন এই বার্তোমেউই। ফলে চুক্তির বিষয়টি সবচেয়ে বেশি জানতেন তিনিই। তাই মেসির সন্দেহ, বার্তোমেউই হয়তো প্রতিশোধ নিতে চুক্তিটি ফাঁস করে দিয়েছেন! মেসি বার্তোমেউয়ের বিরুদ্ধে চুক্তি ফাঁসের অভিযোগের তীরটা আবার ছুড়েছেন টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠানে।

শুধু সন্দেহের তীর ছুড়েই ক্ষান্ত হননি মেসি। বার্তোমেউয়ের বিরুদ্ধে চুক্তির গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগে মামলার করার হুমকিও দিয়েছে। তবে বার্তোমেউ অভিযোগটি সরাসরি অস্বীকার করেছেন। এস্পোর্ত-৩-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে বার্সার সাবেক সভাপতি বলেছেন, ‘এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। একটি পেশাদার চুক্তি ফাঁস করা সম্পূর্ণ বেআইনি।’ মেসিকে পাল্টা কাঠগড়ায় তুলে বলেন, ‘টিভি চ্যানেলে কথা বলা ও কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করা খুবই সহজ; কিন্তু এটি তামাশা নয়। এর নিষ্পত্তি কোর্টেই হবে।’ পরোক্ষে তিনিও যেন মেসিকে আদালতের হুমকিই দিয়ে রাখলেন।

মেসি এমনিতেই মৌসুম শেষে বার্সা ছাড়বেন বলে জোর গুঞ্জন। তার ওপর চুক্তি ফাঁসের এত বড় কেলেঙ্কারি! মেসিকে বার্সা ধরে রাখবে কীভাবে? মেসিই বা থাকবেন কেন!


সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh