কী আছে গ্রেটার সেই টুলকিটে

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০২:১৭ পিএম | আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:২৪ পিএম

দেশদ্রোহের অভিযোগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করা হয় ভারতের পরিবেশবাদী অ্যাক্টিভিস্ট দিশা রবিকে। অভিযোগ, সুইডেনের গ্রেটা থানবার্গের সাথে টুলকিট শেয়ার করেছেন তিনি। 

‘খালিস্তানি সংযোগ’-এর দাবি পুলিশের। এ গ্রেফতারির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা হয়েছে। আবারো আলোচনায় এসেছে ‘টুলকিট’। 

প্রশ্ন উঠেছে- কি আছে ওই টুলকিটে, যা নিয়ে এতো তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। 

কেন গ্রেফতার দিশা?

বেঙ্গালুরুর মাউন্ট কার্মেল কলেজ থেকে স্নাতক হন ২২ বছরের দিশা আন্নাপ্পা রবি। ‘ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার ইন্ডিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অন্যতম তিনি। এই সংগঠনের একটা শাখা এমএপিএর (মোস্ট অ্যাফেক্টেট পিপলস অ্যান্ড এরিয়াজ) অংশ তিনি, যারা জলবায়ু পরিবর্তনে, পরিবেশ দূষণের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে কাজ করেন।

‘ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার’হলো শিশু-কিশোরদের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন, যারা প্রতি শুক্রবার স্কুলের ক্লাস না করে রাস্তায় নামে পরিবেশের জন্য, পরিবেশ দূষণ রুখতে রাজনৈতিক কর্মসূচি দাবি করেন রাষ্ট্রনেতা ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে। এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা গ্রেটা থানবার্গ। 

পুলিশের দাবি, সুইডিশ এই পরিবেশকর্মীর সাথে একটি টুলকিট ডকুমেন্ট শেয়ার করেছেন দিশা। তারা আরো দাবি করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক ওই টুলকিট। ২৬ জানুয়ারির সহিংস ঘটনার নেপথ্যের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে এই টুলকিট ডকুমেন্টের। দিল্লি পুলিশ টুইট করেছে, ‘তিনি (দিশা) ওদের সাথে (গ্রেটা থানবার্গ ও অন্যান্য) হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ও টুলকিট ডকুমেন্ট তৈরি করেছেন।’ 

কেন টুলকিটে ভয়

টুলকিট হলো একটি সোশ্যাল মিডিয়া ডকুমেন্ট, যাতে কোনো বিষয়ে কর্মসূচি ও তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা সবিস্তারে বর্ণিত থাকে। ভারতের কৃষক আন্দোলনের ক্ষেত্রেও কৃষকদের সাথে কীভাবে কাজের মাধ্যমে সংহতি প্রকাশ করা যায়, তা বর্ণিত ছিল।

আন্দোলনরত কৃষকদের প্রতি যারা সমর্থন জানাতে চান- তাদের কি করতে হবে তার নির্দেশিকা আছে ওই টুলকিটে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, এই টুলকিটের একাধিক সংস্করণ অনলাইনে ছড়িয়েছে, একটি বড় ও আরেকটি সংক্ষিপ্ত।

এতে কীভাবে বিক্ষোভের আয়োজন করতে হবে, কীভাবে অনলাইনে প্রচারাভিযান চালাতে হবে তার প্রাথমিক পরামর্শ বা ‘টিপস’ আছে। আরো আছে কার্যকরভাবে হ্যাশট্যাগ ব্যবহারের পরামর্শ। পোস্টে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের টুইটার অ্যাকাউন্ট ট্যাগ করতেও বলা হয়েছে। কিভাবে পিটিশনে স্বাক্ষর দিতে হবে, এসব নিয়েও পরামর্শ আছে ওই টুলকিটে।

এতে ভারতের কৃষক আন্দোলন নিয়ে আগ্রহীদের কীভাবে ‘টুইটারে ঝড়’ তুলতে হবে, কীভাবে যে যেখানে আছেন তার নিকটস্থ ভারতীয় দূতাবাস বা অন্য কোন ভবনের সামনে বিক্ষোভের আয়োজন করতে হবে- এসব পরামর্শও আছে।

ঘটনার সূত্রপাত

বিভিন্ন আন্দোলনের সময় এমন টুলকিট প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে। এমনকি ভারতে সম্প্রতি নাগরিকত্ব আইন সংশোধনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলন বা ছাত্র আন্দোলনের সময়েও এমন টুলকিট প্রকাশিত হয়েছে। তবে এবার বিষয়টির গভীরতা বাড়ে এতে গ্রেটা থানবার্গের মতো সেলিব্রেটিরা সক্রিয় সমর্থন দেয়ার পর। 

গত ৪ ফেব্রুয়ারি গ্রেটা থানবার্গ ভারতের কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে একটি টুইট করেন ও তারপরে অন্য একটি টুইটে একটি টুলকিট শেয়ার করেন। পরে ওই টুইট মুছে আরেকটি টুলকিট শেয়ার করেন। লেখেন, ‘হিয়ার ইজ অ্যান আপডেটেড টুলকিট বাই পিপল অন দ্য গ্রাউন্ড ইন ইন্ডিয়া ইফ ইউ ওয়ান্ট টু হেল্প।’ 

দিশাকে দেশদ্রোহ ও টুলকিট নিয়ে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও বিদ্বেষপূর্ণ উসকানি দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী বিজেপির নেতা ও তাদের সমর্থিত সংবাদমাধ্যমে দিশা, থানবার্গ, খালিস্তানি সংযোগ নিয়ে মনগড়া উগ্র প্রচারণা চালানো হলেও, সংযুক্ত কিষান মোর্চা, প্রাক্তন পরিবেশমন্ত্রী জয়রাম রমেশ ও সারা দেশজুড়ে বহু রাজনৈতিক ও সমাজকর্মী সমালোচনা করেছেন। 

কোয়ালিশন ফর এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস ইন ইন্ডিয়া বিবৃতি দিয়েছে, ‘দিল্লি পুলিশের কাজকর্ম ভয়াবহ। তাকে (দিশা) বেঙ্গালুরু থেকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি কোথায় আছেন কেউ জানেন না, তার মা-বাবাও নন। এমন ঘটনা বেআইনি বলা যেতে পারে।’

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দিশার সমর্থনে টুইট করেন গ্রেটা। বরাবরের মতো স্পষ্ট ভাষাতেই আক্রমণ করেছেন তিনি। লিখেছেন, ‘বাকস্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল হলো অ-আলোচনাযোগ্য মানবাধিকার। এটি যে কোনো গণতন্ত্রেই মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে।’ সেই সাথে তিনি একটি হ্যাশট্যাগও জুড়ে দেন ‘#StandWithDishaRavi’।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh