সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:৪৩ পিএম | আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৯:১৩ পিএম
সুনামগঞ্জে আবারো দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন। তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের পৃথক ৫৪টি মামলা আপসে নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন।
আদেশ ঘোষণার পর স্বামী-স্ত্রীকে আদালত থেকে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। তবে ১১টি মামলায় স্বামীদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করেছেন।
সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ৬৫টি পৃথক মামলার একসাথে দেয়া রায়ে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নান্টু রায়। রায় ঘোষণার পর আদালতের পক্ষ থেকে ৫৪ দম্পতিকে ফুল দেয়া হয়েছে।
গত বছরের ২৫ নভেম্বর একই আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন একদিনে পৃথক ৪৭টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলায় ৪৭টি পরিবারকে আপসের মাধ্যমে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এ নিয়ে মোট ১০১টি পরিবার ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেলো।
আদালত সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় যৌতুকসহ নানা কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে ৬৫ জন নারী সংসার থেকে বিতাড়িত হয়ে তাদের স্বামীর বিরুদ্ধে পৃথকভাবে আদালতে মামলা করেছিলেন। দীর্ঘদিন এসব মামলার বিচারকাজ চলছিল। নির্যাতনের শিকার হয়ে নারীরা তাদের ছোট শিশুদের নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে অনিশ্চিত এক জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অনিশ্চিত জীবন থেকে ৫৪ স্ত্রীকে স্বামীর এবং সন্তানদের তাদের বাবার পারিবারিক বলয়ে আবদ্ধ করে ব্যতিক্রমী আপসের রায় দিলেন বিচারক। বিচারক উভয়ের পক্ষের বক্তব্য শুনে তাদের সন্তানদের এবং তাদের মঙ্গলের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বন্ধন এটে ৫৪টি দম্পতিকে পারিবারিক পুনর্মিলনের ব্যবস্থা করে দেন।
কিন্তু ১১টি পরিবারকে একত্রিত করতে সক্ষম না হওয়ায় এবং নির্যাতিত স্ত্রী ও তাদের সাক্ষীরা স্বামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ায় এবং স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১১ স্বামীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
আপসে নিষ্পত্তিকৃত মামলার বাদী-বিবাদী পক্ষের স্বজনদের দাবি, সংসার থেকে বিতাড়িত ছোট ছোট সন্তানাদি নিয়ে ওই নারীদের জীবন ছিল চরম দুর্দশাগ্রস্ত। এসব দুঃখ-বেদনা আর দীর্ঘশ্বাসে আদালত অঙ্গন ভারি থাকত। শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে এই রায় ৫৪টি পরিবারকে বিশৃঙ্খলার বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে দিলো। কারণ এসব মামলার সুষ্ঠু নিষ্পত্তি না হলে ছোট শিশুরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অযত্ন অবহেলায় বেড়ে ওঠে ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিপাতিত হতো। এই রায় অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার।
জেলার সচেতন মহল বলেন, এভাবে যদি বিচারকার্য চলে এবং মামলার নিষ্পত্তি হয় তাহলে বিচার ব্যবস্থার উন্নতি হবে। এবং বিচারপ্রার্থী জনগণ তাদের সুবিচার পাবে। এই রায় অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার।
সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নান্টু রায় বলেন, আদালত পৃথক ৬৫টি নারী-শিশু নির্যাতন দমন মামলায় রায় দিয়েছেন। ১১টি মামলায় ১১জন স্বামীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করেছেন। তবে ৫৪টি মামলায় স্বামী-স্ত্রীকে আপসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। এর আগেও তিনি যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন।