অর্থ ও মানবপাচারের বিচার দেশেই করতে হবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৯:৫৮ এএম

কুয়েতে অর্থ ও মানবপাচারের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার প্রায় সপ্তাহ তিনেক পর দেশের জাতীয় সংসদের সদস্য পদে অযোগ্য ঘোষিত হলেন কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল। 

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের কোনো সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে সাজাপ্রাপ্তির ঘটনা এটিই প্রথম। 

পাপুল একজন সাধারণ নাগরিক নন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সম্মানিত সদস্য। তার দুর্নীতির বিচার দেশের অভ্যন্তরে সম্ভব হলে জাতির ভাবমূর্তি এরকমভাবে খর্ব হতো না। একজন সংসদ সদস্যের বিদেশের মাটিতে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্তির কলঙ্ক এড়ানো সম্ভব হতো। 

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে কুয়েতের সংবাদপত্রে মানবপাচারকারীদের নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। প্রকাশিত সে খবরে বাংলাদেশি নাগরিকদের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। যদিও সে সময় বাংলাদেশের তরফ থেকে এ খবরের সত্যতা অস্বীকার করা হয়। ভুয়া সংবাদ হিসেবে উড়িয়ে না দিয়ে খবরটির সত্যতা আমলে নিলে দেশের অভ্যন্তরেই এ সংসদ সদস্যের বিচার সম্ভব হতো। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্যের দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্তির লজ্জাজনক অধ্যায় আমাদের প্রত্যক্ষ করতে হতো না। গত বছর জুনে কুয়েতে পাপুলের আটক হওয়ার ঘটনা নিয়ে নানারকম নাটকীয় বক্তব্য হাজির করা হয়েছিল। 

পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলামও একজন সংসদ সদস্য। কুয়েতে পাপুলের গ্রেফতারের পাঁচ মাসেরও বেশি সময়ের পর পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন)। ১১ ফেব্রুয়ারি তাদের মামলায় স্থায়ী জামিন দেয়া হয়েছে। জামিন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছে দুদক। 

কুয়েতের সংবাদপত্রে অর্থ ও মানবপাচারের সাথে পাপুলের জড়িত থাকার খবর প্রকাশের পরও দুদকসহ সংশ্লিষ্টদের টনক নড়েনি। সঠিক সময়ে তৎপরতার অভাবে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্যের সাজাপ্রাপ্তির লজ্জাজনক অধ্যায় সূচিত হলো। 

সবশেষে কুয়েতে অর্থ ও মানবপাচারের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত পাপুলের সংসদ সদস্য পদ খারিজ হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে পাপুল পরিবারের ৬১৭টি ব্যাংক হিসাব। এর মধ্যে পাপুলের ১৪৮টি, তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামের ৩৪৫টি, মেয়ে ওয়াফা ইসলামের ৭৬টি ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধানের ৪৮টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। একইসাথে তাদের ৯২টি তফসিলভুক্ত সম্পত্তি ক্রোকের আদেশও দেয়া হয়েছে। 

এ ধরনের লজ্জাজনক অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি রোধে সংশ্লিষ্টদের আগাম তৎপর হতে হবে। সব অর্থ ও মানবপাচারকারীর বিচার দেশের মাটিতেই করতে হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh