বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় ৫ হাজার ট্রাক

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২১, ০৫:১৫ পিএম | আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২১, ০৫:১৮ পিএম

দেশের সর্ববৃহৎ স্থল বন্দর বেনাপোল, ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আমদানি পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৫ হাজার ট্রাক। ফলে দুই দেশের আমদানি রফতানি বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।
 
বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশে পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে এ ধরনের জটিলতা ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরী করে ট্রাক থেকে প্রতিদিন আদায় করা হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার চাঁদা। আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছে।

বেনাপোল বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বন্দর দিয়ে প্রতিবছর ভারতের সাথে ২৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। বছরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে বেনাপোল কাস্টমস হাউস। দেশের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৭/৮০০ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো ভারতে থেকে। বর্তমানে তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩/৪০০ ট্রাকে। ওপারে বনগাঁও পৌরসভার মেয়র শংকর এন্ড ডাকু কালিতলা পার্কিং নামে একটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন পার্ক তৈরী করে সেখানে আমদানি বোঝাই ট্রাকগুলো জোর করে প্রবেশ করানো হচ্ছে। প্রতি ট্রাক থেকে ড্যামেজ বাবদ ২ হাজার  টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। বর্তমানে একটি ট্রাক বাংলাদেশে আমদানি হতে ১৫/২০ দিন করে সময় লাগছে। যার পুরো চাঁদার অর্থ বাংলাদেশি আমদানি কারকদের পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে মোটা অংকের লোকসানের কথা ভেবে অনেকেই বেনাপোল বন্দর থেকে মুখ ঘুড়িয়ে নিচ্ছে।

বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা জানান, দেশের ৭৫ ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচা মালামালের পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য আসে এই বন্দর দিয়ে। ওপারে পণ্য আমদানিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর এর প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়ছে। গত ২ মার্চ সকালে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান আমদানিকৃত ট্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও রাজস্ব আয় বাড়াতে ভারতীয় ব্যবসায়ী ও কাস্টমস এর সাথে বৈঠক করেছেন।

বেনাপোল কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, বেনাপোলের ওপারে এখন ভয়াবহ পণ্যজট লেগে রয়েছে। প্রায় ৫ হাজার ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে বন্দরের ওপারে অপেক্ষায় রয়েছে। পেট্রাপোলের কালিতলা পার্কিং থেকে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতে এখন প্রায় ১৫ দিন লেগে যাচ্ছে। ফলে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তেমনি বেড়ে যাচ্ছে আমদানি ব্যয়।
 
ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে স্থল পথে পণ্য আমদানি করতে বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বনগাঁও পৌর সভার মেয়র শংকর এন্ড ডাকুর নেতৃত্বে তার লোকজন প্রতিটি পণ্যবোঝাই ট্রাক থেকে প্রতিদিন ২ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে। পণ্যবোঝাই একটি ট্রাক ২০ দিন ওপারে আটকে থাকলে তাকে ৪০ হাজার রুপী পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে আমদানিকারকরা মোটা অংকের আর্থিক লোকসানে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে।

বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, দেশের ৭৫ ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচা মালামালের পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য আসে এই বন্দর দিয়ে। পণ্য আমদানিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর এর প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়ছে।

বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মো. আজিজুর রহমান জানান, ভারতীয় প্রেটাপোল কালিতলা পার্কিং এ বর্তমানে ৫৫০০ পণ্য বোঝাই ট্রাক আটাকে আছে। আমরা রাজস্ব আয় বাড়াতে ও ট্রাক সংখ্যা বৃদ্ধি করতে ভারতীয় কাস্টমস ও ব্যবসায়ীদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে যাচ্ছি।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh