শিরোপা জিতেই অলিম্পিকের প্রস্তুতি সিদ্দিকুর রহমানের

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২১, ১০:১৩ এএম

সিদ্দিকুর রহমান

সিদ্দিকুর রহমান

করোনায় খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গলফারদের। কারণ সবচেয়ে দীর্ঘসময় কোর্টের বাইরে ছিলেন তারা। এবার ঘরোয়া আসর দিয়ে নবযাত্রা হয়েছে সিদ্দিকুর রহমান, জামাল হোসেন মোল্লার। 

দীর্ঘসময় কোর্টের বাইরে থাকার হতাশাটা কেটেছে প্রায় এক বছর পর। আর্মি গলফ কোর্সে প্যারাগন ওপেন গলফে শিরোপা জিতেই ফেরাটা রাঙিয়েছেন দেশসেরা খেলোয়াড় সিদ্দিকুর। অথচ প্রথমদিন পিছিয়ে পড়েছিলেন। পরে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় শিরোপা জিতেই নতুন সময়কে স্বাগত জানিয়েছেন। এই আসরে জামাল হোসেন মোল্লাও শিরোপা জিততে পারতেন; কিন্তু ভাগ্য বিধাতা তার হয়ে কথা বলেনি। 

আর্মি গলফ কোর্সের নয় নম্বর হোলের ঠিক মাঝখানে একটি তালগাছ রয়েছে। তিন স্ট্রোকের এই হোলে গাছটিকে পেছনে ফেলে বল গ্রিনে ফেলাটা বেশ কঠিন কাজ। সেটি করতে গিয়েই জামালের মারা বল আটকে যায় গাছে। পরে সেটি আর নিচে পড়েনি! প্রথম শটটি গাছের মাথায় পড়ার পরই নিয়মানুসারে দুই শট জরিমানা দিতে হয়েছে। এরপর পারের সমান হোলে শট শেষ করলেও দুই শটের জরিমানার কারণেই পিছিয়ে পড়েন জামাল। সব মিলিয়ে শেষ হোলে জামালের ডাবল বগি। অন্যদিকে শেষ হোলে বগি করেন সিদ্দিকুর। আর শেষ দিকে জামালের ডাবল বগির সুবাদে তিন রাউন্ড মিলিয়ে দুই শট এগিয়ে থেকেই শিরোপা উল্লাসে মাতেন সিদ্দিকুর।

জামাল শেষ ওই হোলে তখন খেলছেন পাঁচ আন্ডার পার নিয়ে। সিদ্দিকুর সেখানে ছয় আন্ডার পার। শিরোপা লড়াইয়ে এই দুই তারকার লড়াই তখন মাত্র এক শটের। সেখানে অন্য টুর্নামেন্টের মতোই সিদ্দিকুর কিছুটা নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন। জামাল পারের সমান খেলতে পারলেও লড়াইটা প্লে অফে নিয়ে যেতে পারতেন; কিন্তু ওই তালগাছই তার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। টি থেকে আবার মেরে পারে শেষ করলেও টুর্নামেন্ট শেষ করলেন তিন আন্ডার পারে। আর সে কারণেই পাঁচ আন্ডার পারে খেলা সিদ্দিকুরই হাসলেন শেষ হাসি। 

দ্বিতীয় দিন সবার ওপরে ওঠার পরই শিরোপা জেতার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এভাবে, ‘আমার কাছে কোর্সে ফেরাটা ছিল প্রথম কাজ। সেটি করে শিরোপা জিততে পারায় আগামীর টুর্নামেন্টগুলোর জন্য আত্মবিশ্বাস পেয়েছি। তবে শেষ হোলটায় জামালের দুর্ভাগ্যই আমার জন্য সৌভাগ্য নিয়ে আসে। ঘরোয়া টুর্নামেন্ট হলেও এখানে শিরোপা জিততে পেরে দারুণ ভালো লাগছে। ফেরার আসরটা তাই আমার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকল’। করোনাভাইরাসের কারণে এই আসরটি তিন রাউন্ডের হয়েছে। সাধারণত চার রাউন্ডের খেলা হয়ে থাকে। শেষদিনে সিদ্দিকুর সাতটি বার্ডি ও চারটি বগি করেন। 

রানার্সআপ হওয়া জামাল পাঁচটি বার্ডি, একটি বগি ও একটি ডাবল বগি করেন। খেলা হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে সাত নম্বর হোল থেকে জমে ওঠে নাটকীয়তা। দু’জনের স্কোর সমান হওয়ায় কে শিারাপা জিতবে বলা মুশকিল ছিল। এরপর আট নম্বর হোলে সিদ্দিকুর বার্ডি করেন আর জামাল পারের সমান খেলেন। শেষ হোলে সিদ্দিকুর বগি করার কারণে জামাল পারের সমান খেললেই ম্যাচটি গড়াত প্লে অফে; কিন্তু জামালের বলটি তালগাছে আটকে গিয়ে শিরোপাও হাতছাড়া হয়ে যায়। 

এই আসরে জয়-পরাজয় ছাপিয়ে কোর্সে গলফ ফেরাটিকে বড় করে দেখছেন সবাই। দারুণ আর জমজমাটভাবেই টুর্নামেন্টটি শেষ হওয়ায় সবার কাছেই এটি উপভোগ্য হয়েছে। ঘরোয়া টুর্নামেন্ট হওয়ায় দেশের প্রায় সব খেলোয়াড়ই এখানে খেলেছেন। 

কারণ দীর্ঘ এক বছর অপেক্ষার করার পর টুর্নামেন্ট খেলতে নামে বাংলাদেশি গলফাররা। টুর্নামেন্টে রেফারির দায়িত্ব পালন করা মেজর (অব.) মাহমুদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘গলফের সাথে জড়িত থাকার কারণে আমার নিজেরও খারাপ লেগেছে এতটা সময় কোনো খেলা না হওয়ায়। এখন কোর্সে খেলা শুরু হওয়ায় খুবই স্বস্তি লাগছে। পৃষ্ঠপোষকদের ধন্যবাদ এমন অবস্থার মধ্যেও তারা আমাদের সঙ্গে থাকছেন।’ 

করোনা মহামারির পর অন্য খেলাগুলো মাঠে গড়ালেও অতিরিক্ত সতর্কতার কারণে বাংলাদেশ প্রফেশনাল গলফার’স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএ) কিছুটা সময় হাতে নিয়ে টুর্নামেন্টটি মাঠে গড়িয়েছে। অবশেষে তাদের উদ্যোগে গলফ টুর্নামেন্ট চালু হওয়ায় স্থানীয় গলফাররা ভীষণ খুশি হয়েছেন।

গত বছর মার্চে অন্য খেলার পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যায় গলফও। ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় বেশ কটি এশিয়ান ট্যুর খেলতে পারেননি সিদ্দিকুর। সে কারণে অলিম্পিকে সরাসরি খেলার অপেক্ষাও বাড়ছে তার। তবে শিরোপা জেতার মাধ্যমে অলিম্পিক গেমসের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার কাজটিও শুরু করেছেন সিদ্দিকুর।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh