পুরুষ সহকর্মী নারীর প্রতি কতোটা সহানুভূতিশীল

আরিফুল ইসলাম

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২১, ০৯:৪৭ এএম

কর্মজীবী নারীর দিনের একটি বড় সময় কাটে সহকর্মীদের সাথে। কর্মক্ষেত্রে মেয়েরা সহকর্মীর মাধ্যমে নানান অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। অনেক নারী তাদের পুরুষ সহকর্মীর কাছ থেকে সহযোগিতা পান। তখন সহকর্মীও হয়ে যায় বন্ধুর মতো। 

আবার কোনো কোনো নারী পুরুষ সহকর্মীর দ্বারা এমন বিরূপ আচরণের শিকার হন যে, চাকরি করাই কঠিন হয়ে যায়।

আমাদের সমাজে কর্মজীবী নারীকে সংসার ও চাকরি দুটি দায়িত্বই একসাথে পালন করতে হয়। সংসারের গৃহস্থালি কাজে পুরুষের সহযোগিতা নেই বললেই চলে। ফলে পুরুষের চেয়ে নারীর দায়িত্ব অনেক ক্ষেত্রেই বেশি। সবকিছু সামলিয়ে চাকরি করতে গেলে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় নারীকে।

নারীর জীবনের সাথে যে বিষয়গুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত যেমন- গর্ভধারণ, সন্তান লালন, রান্না করা, সাংসারিক অন্যান্য কাজ, অতিথি আপ্যায়ন, শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দায়িত্ব পালন করা ইত্যাদি। তাছাড়া সন্তান জন্মের পরও অনেক মা বিষণ্নতায় ভোগেন। গর্ভপাতও নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ ব্যাপারগুলো নারীর জীবনের অংশ।

সায়মা রহমান একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। গর্ভধারণের সময় পুরুষ সহকর্মীর নেতিবাচক আচরণের কারণে নানা মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে তাকে। তিনি বলেন, গর্ভধারণের পর কখনো কখনো শরীরটা একটু খারাপ লাগত। অফিসে একদিন হঠাৎ বেশি খারাপ লাগলে পুরুষ সহকর্মীকে বলে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যেতে চাই। তখন সেই পুরুষ সহকর্মী আমাকে বলেন, আমার স্ত্রী দুটি সন্তান জন্ম দিয়েছে। কোনোদিন তার শরীর খারাপ লাগেনি। আপনার এত শরীর খারাপ লাগে কেন?’ 

সায়মার মতো অনেক কর্মজীবী নারী পুরুষ সহকর্মীদের কাছ থেকে এমন বিদ্বেষী আচরণ পান। ফলে একটা সময় চাকরি করাটাই কঠিন হয়ে যায়। অনেক নারী চাকরিও ছেড়ে দেন।

অনেক পুরুষ সহকর্মী মনে করেন, মেয়েরা কম কাজ করে বেশি সুবিধা পায়। অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে মেয়েদের ভালো সম্পর্ক থাকে। এতেই মেয়েদের দ্রুত পদোন্নতি হয়। পুরুষ সহকর্মীর পদোন্নতিকে স্বাভাবিক চোখেই দেখা হয়। মনে করা হয়, পুরুষের যোগ্যতা বেশি। নিজের যোগ্যতায় তারা পদোন্নতি পায়। এক্ষেত্রে একটি বিষয় অনেকেই ভুলে যান, কর্মক্ষেত্রে যে কোনো পদে নারী পুরুষ সমান যোগ্যতা নিয়ে আসেন। তবুও নারীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। 

নারী সহকর্মীদের সমস্যাগুলোকে কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে সরকারি কর্মকর্তা শাহীন আলম জানান, আসলে প্রতিটি সম্পর্ক পারস্পরিক। একজন নারী সহকর্মী যদি পুরুষের প্রতি সহযোগী হন তাহলে পুরুষও নারী সহকর্মীর প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখাবে। তবে অনেক সময় পুরুষরা তাদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে চায়। অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নারী হোক, এটা অনেক পুরুষ মানতে পারে না। অর্থাৎ নারীর অধীনে কাজ করার মানসিকতা অনেকের নেই। তবে অফিসে নারী-পুরুষের পদ যখন একই থাকে তখন এত সমস্যা হয় না।

ইমরান আজিম কাজ করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। নারী সহকর্মীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দিনের বেশিরভাগ সময় অফিসে থাকি। সুতরাং অফিসকেও একটি পরিবার ভাবা উচিত। পরিবারের সদস্যদের যেমন অনেক সমস্যা থাকে তেমনি অফিসের সহকর্মীদেরও সমস্যা থাকে। নারী সহকর্মীদের সমস্যাগুলোকে আমি ইতিবাচকভাবে দেখার চেষ্টা করি। কারণ আমি মনে করি, আমার স্ত্রী যেসব দায়িত্ব পালন করে, আমার একজন নারী সহকর্মীকেও সেসব দায়িত্ব পালন করতে হয়।


সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh