পাল্টাপাল্টি অভিযোগে ফের আলোচনায় পদ্মা ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২১, ০২:১২ পিএম | আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২১, ০২:২৯ পিএম

সাবেক চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও বর্তমান চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত

সাবেক চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও বর্তমান চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত

নতুন করে আলোচনায় এসেছে পদ্মা ব্যাংক। ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও বর্তমান চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে ‘টাকা সরানোর’ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে অভিযোগ পাওয়ার পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলেছে, বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবে। 

অনিয়ম আর ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবতে বসা ফারমার্স ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ঘটে ২০১৮ সালে। পরের বছর নাম বদলে হয় পদ্মা ব্যাংক। ব্যাংকটির নাম পরিবর্তনের পর দুর্নীতির বিষয়টা অনেকটা আলোচনার বাইরে চলে যায়। দুই বছর পর আবার আলোচনায় চলে এসেছে।

নাফিজের বিরুদ্ধে মহীউদ্দীনের পাঠানো চিঠি হাতে পাওয়ার কথা জানিয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমরা তাকে ডাকবো ও তার বক্তব্য জানব। খতিয়ে দেখে পরে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পদ্মা ব্যাংকের স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার সংসদ সদস্য মহীউদ্দীন গত ৭ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি লিখে নাফিজের বিরুদ্ধে তার অভিযোগের কথা তুলে ধরে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। চিঠির অনুলিপি অর্থমন্ত্রী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনেও পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, ২০১৫ সালের ১ নভেম্বর, মহীউদ্দীন খান আলমগীর যখন ব্যাংকের চেয়ারম্যান, তখন তার ‘অনুপস্থিতিতে’ ফারমার্স ব্যাংক পর্ষদের এক বৈঠকে একটি অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডে ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ অনুমোদন করা হয়।

চিঠিতে মহীউদ্দীন  বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত সে সময় অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান/এমডি হিসেবে বিনিয়োগের ওই অর্থ নেন। তাতে আইনের ব্যত্যয় ঘটানো হয়, কারণ তিনি তখন ব্যাংকের একজন পরিচালক ও আইন অনুযায়ী তিনি পরিচালক থাকা অবস্থায় ফারমার্স ব্যাংক থেকে কোনো তহবিল পেতে পারেন না।’

বাংলাদেশের ব্যাংকিং কোম্পানি আইনের ২৭ এর ২ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যাংক এমন কোনো প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিতে পারবে না, যেখানে ব্যাংকটির কোনো পরিচালক যুক্ত থাকবেন পরিচালক বা পার্টনার হিসেবে। আর তখনই ঋণ অনুমোদন করা যাবে, যখন বেশিরভাগ পরিচালক এর পক্ষে মত দেবেন। তবে যে পরিচালক সেই প্রতিষ্ঠানে আছেন, তার মতামত এখানে গ্রহণযোগ্য হবে না।  

মহীউদ্দীন খান আলমগীরের অভিযোগ, ওই ঋণ অনুমোদন করা হয়েছিল তার অনুপস্থিতিতে, তাকে না জানিয়ে।

অন্যদিকে একইদিনে পদ্মা ব্যাংক থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিএসইসিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এহসান খসরু স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, সিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বিনিয়োগ করার নামে আট কোটি ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী। তারা উভয়েই ব্যাংক থেকে ঋণ দেয়ার নাম করে গ্রাহকদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তদন্তেও তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঋণ প্রদানের অনিয়মের বিষয়টি উঠে এসেছে। 

পদ্মা ব্যাংক ৮৪৫ দশমিক ৪৫ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সহযোগিতা চেয়েছে বলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চিঠিতে জানিয়েছে। এই বিষয়ে আলমগীর ব্যাংকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করেননি বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

উল্লেখ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে ফারমার্স ব্যাংকের গ্রাহকদের কাছ থেকে ঘুস ও ঋণের ভাগ নেয়া এবং জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও মাহবুবুল হক চিশতীর বিরুদ্ধে। পরে ২০১৭ সালের নভেম্বরে ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড থেকে তারা পদত্যাগ করেন। ২০১৮ সালে নাফিজ ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।

২০১৯ সালে ব্যাংকটি নাম পরবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০২০ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির ৩০৯ দশমিক ৯৯ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬০ শতাংশ।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh