আন্তর্জাতিক নদী রক্ষা দিবস ১৪ মার্চ

ধ্বংস ও দূষণের কবলে বাংলাদেশের নদী

ম. ইনামুল হক

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২১, ১০:৪০ এএম | আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২১, ১০:৫২ এএম

গাইবান্ধার ওপর দিয়ে প্রবাহিত যমুনা, ঘাঘট, তিস্তাসহ  বিভিন্ন নদ-নদী অস্বাভাবিকভাবে শুকিয়ে গেছে। ছবি : সংগৃহীত

গাইবান্ধার ওপর দিয়ে প্রবাহিত যমুনা, ঘাঘট, তিস্তাসহ বিভিন্ন নদ-নদী অস্বাভাবিকভাবে শুকিয়ে গেছে। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের নদীগুলো ক্রমেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আগে বলা হতো নদীর একূল ভাঙে ওকূল গড়ে। এটি যে হচ্ছে না, তা নয়; তবে নদীগুলোর উজানে মানবসৃষ্ট বাঁধের কারণে নদীর প্রবাহ কমে যাচ্ছে, নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। 

দক্ষিণাঞ্চলে ষাটের দশকে দেয়া বেড়িবাঁধ স্বাভাবিক নদীপ্রবাহ নষ্ট করেছে, ফলে নদীমুখ ভরাট হয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। সারাদেশে অনেক নদীতে পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঁধ ও স্লুইস গেট নির্মাণ ও রাস্তা তৈরি করে নদীপ্রবাহে বাধা দেয়া হয়েছে। আর এ কারণে নদীগুলো ভরাট হয়ে গেছে। 

ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মা নদী বালিতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পদ্মা নদী ভরাট হবার কারণে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের নদীগুলো মরে যাচ্ছে। এভাবে ভারত বাংলাদেশের অভিন্ন কিছু নদী যথা– তিস্তা, মহানন্দা, ধরলা, দুধকুমার, গোমতী ইত্যাদির অনেকগুলোতে ভারত ব্যারাজ ও ড্যাম নির্মাণ করে পানি সরিয়ে নেওয়ায় বাংলাদেশের অংশে এসব নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

নদী ও জলাভূমি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, ডাঙা ও জলের জীববৈচিত্র্য ও জীবনচক্র রক্ষা করে, মানুষের খাদ্য জোগায়, যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভূমিকা রাখে; কিন্তু শহর ও মফস্বলে নদীদূষণ এখন একটি সর্বগ্রাসী সমস্যা। সর্বস্তরের নাগরিকদের সামগ্রিক সচেতনতার অভাব ও ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা না করে এক শ্রেণির মানুষের হঠাৎ আয় বৃদ্ধির আকাক্ষা নদীদূষণের অন্যতম কারণ। শহরাঞ্চলে এর প্রধান কারণ শিল্প কল কারখানার অপরিশোধিত রাসায়নিক বর্জ্য এবং মনুষ্য সৃষ্ট প্লাস্টিক ও কঠিন বর্জ্য। গ্রামাঞ্চলে কৃষিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বিষ। এসবের মিলিত দূষণে সারাদেশে বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার মাছ উৎপাদন হয় না। 

ঢাকার আশপাশের তুরাগ, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও টঙ্গী নদীর পানি চরমভাবে বিষাক্ত ও আলকাতরার মতো কালো। এই বিষাক্ত বর্জ্য নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও মুন্সীগঞ্জ এলাকার নদীগুলো দূষিত করে জলজ প্রাণিসম্পদ বর্জিত করেছে। এ কারণে মেঘনা নদীর মাছ প্রায় নিঃশেষ হওয়ার পথে।

বাংলাদেশের ছোট নদীগুলো যে বিশেষ দুটি কারণে মরে যাচ্ছে– তাহলো পানি অতি উত্তোলন ও অতি নিষ্কাশন। সত্তরের দশকে খাল খনন কর্মসূচির মাধ্যমে সেচ সুবিধা বৃদ্ধির জোয়ার বয়ে যায়। এ সময় নদীর পানি লো-লিফট পাম্পের সাহায্যে উত্তোলন করে সেচ দেয়া হয় ও ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ফলে অচিরেই ছোট নদীগুলোর পানি অতি উত্তোলিত হয়ে শুকিয়ে যেতে থাকে। আশির দশকে নতুন নতুন খাল খনন কর্মসূচিতে ভাটা পড়লেও, পুরাতন খালগুলোর সংস্কারের নামে জলাভূমিগুলো নিঃশেষ করে ফেলা হয়। এভাবে জলাভূমির ভেতরে মাছের আশ্রয়স্থলগুলো শুকিয়ে ধানক্ষেতে পরিণত হয়।

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদী গঙ্গার উৎপত্তি হিমালয়ের দক্ষিণ ঢালে গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন, যা ভারতের উত্তরাখণ্ড প্রদেশের উত্তরকাশী জেলায় অবস্থিত। হিমালয়ের দক্ষিণ ঢাল থেকে উৎপন্ন আরো কয়েকটি বড় নদী যথা– যমুনা, ঘাঘরা, গন্ডক, কোশী, ফুলহার ও মহানন্দা এবং মধ্যভারতের উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন– চম্বল, কেন, বেতওয়া ও শোন নদী গঙ্গার ওপরে পতিত হয়ে (উপনদী) এর প্রবাহ বৃদ্ধি করেছে। ভারতের রাজমহল পেরোনোর পর বাংলার সমতলে গঙ্গা নদী বিভিন্ন শাখায় ভাগ হয়েছে। এর মধ্যে বড় বড় শাখানদীগুলো হচ্ছে– বড়াল, ইছামতী, ভাগিরথী, ভৈরব, মাথাভাঙ্গা, গড়াই, চন্দনা, ভুবনেশ্বর, আড়িয়াল খাঁ, জয়ন্তী ও তেঁতুলিয়া। 

গঙ্গার উপনদীগুলোর মহানন্দা বাদে সবকটি ভারতে পড়েছে; কিন্তু শাখা নদীগুলোর সবকটি বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশে প্রবেশের মুখে গঙ্গা নদী প্রায় ১১০ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ সীমানা পথে প্রবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশের ভেতরে ১৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দের কাছে গঙ্গা নদী যমুনার সাথে মিশে পদ্মা নাম ধারণ করেছে। পদ্মা নদী গোয়ালন্দ থেকে চাঁদপুর ১০৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে। গঙ্গোত্রী থেকে বঙ্গোপসাগর গঙ্গা নদীর প্রবাহপথের মোট দৈর্ঘ্য ২৫৫০ কিলোমিটার।

বাংলার বদ্বীপ অঞ্চল গঠনের পেছনে গঙ্গা নদীর অবদানই সবচেয়ে বেশি। কারণ এই নদী হাজার বছর ধরে সারা উত্তর ভারতের আবাদি জমির পলি ও কাঁদা বয়ে নিয়ে আসছে; কিন্তু বিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকে এর উপনদীগুলোর ওপর ব্যারাজ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার করা শুরু হয়। এ কারণে ব্যারাজ নির্মাণ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ড্যাম নির্মাণ অব্যাহত থাকলে, এ নদীর পানি শীত, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে কমে যেতে থাকে। ১৯৭৫ সালে ভারত ফারাক্কা ব্যারাজ চালু করে কলকাতা বন্দরের দিকে পানি প্রত্যাহার শুরু করলে, বাংলাদেশে পানি আসা একেবারেই কমে যায়। এখন বাংলাদেশের ভেতরেই এর উপনদী মহানন্দায় পানি নেই, শাখা নদী বড়ালের মুখে স্লুইস গেট দিয়ে দুর্বল করে দেয়া হয়েছে।

গঙ্গার শাখা ভৈরব নদ অতীতে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার আখেরীগঞ্জের কাছে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশের মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যেত। ১৮৬১ সালে আসাম বেঙ্গল রেল লাইন নির্মাণের কারণে ভৈরবের মূল প্রবাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর এই নদীটির মূল প্রবাহ কৃষ্ণনগরের পাশ দিয়ে খড়ি নামে ভাগিরথীতে গিয়ে মিশেছে। বাংলাদেশের দিকে গিয়ে শুকিয়ে গেলেও এই নদ তার যাত্রাপথে কতগুলো বাঁওড় ও বিলের পানিতে পুষ্ট হয়েছে। চৌগাছার তাহিরপুরের কাছে ভৈরবের মূল প্রবাহ কপোতাক্ষ নামে দক্ষিণে ঝিকরগাছা ও সাতক্ষীরার দিকে প্রবাহিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন ভৈরব যশোর শহরের দক্ষিণে আফরা নদীর সঙ্গে মিশে আবার প্রাণবন্ত হয়েছে; কিন্তু খুলনার কাছে এসে আতাই নদীর সাথে মিশে পশুর নামে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে। 

মূল ভৈরবের স্রোত মৃত অবস্থায় বাগেরহাট শহরের পাশ দিয়ে নেমে দক্ষিণে বলেশ্বর নদীতে মিশে প্রাণবন্ত হয়ে হরিণঘাটায় গিয়ে পড়েছে। ভৈরবের দুটি শাখা নদী সাতক্ষীরার বেতনা ও যশোরের মুক্তেশ্বরী মূল প্রবাহ থেকে অনেক আগেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

গঙ্গার বর্তমান প্রধান শাখা গড়াই নদী কুষ্টিয়া শহরের উত্তরে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণে মধুমতী নামে কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, মাগুরা, ফরিদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ ও পিরোজপুর জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই অঞ্চলে অতীতের প্রধান নদী কালীগঙ্গার উৎস একই স্থান থেকে। বর্তমান জিকে সেচ প্রকল্পের বাঁধ কালীগঙ্গা নদীকে মেরে ফেলেছে। পিরোজপুরে মধুমতীর সাথে মিশে কালীগঙ্গা নদী পুনরায় প্রাণবন্ত হয়েছে ও শেষমেশ কচা-বলেশ্বর নদীতে গিয়ে পড়েছে। 

গঙ্গার অপর প্রধান শাখা আড়িয়াল খাঁ পিঁয়াজখালীর কাছে উৎপন্ন হয়ে মাদারীপুর, শরীয়তপুর, বরিশাল জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তেঁতুলিয়া নদীতে গিয়ে পড়েছে। এই নদীরই শাখা হিসেবে ভাটিতে বরিশাল অঞ্চলের কয়েকটি বড় নদী প্রবাহিত হচ্ছে যথা– বাবুগঞ্জের কাছে সন্ধ্যা নদী, বরিশালের কাছে কীর্তনখোলা, বাকেরগঞ্জের কাছে বিষখালী, বরগুনা জেলার বুড়িশ্বর ও হরিণঘাটা। ভোলার কাছে এই নদী মেঘনার শাখা তেঁতুলিয়ার সাথে মিশে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান নদ ব্রহ্মপুত্র হিমালয় পর্বতমালার উত্তর ঢালে মানস সরোবর থেকে কিছু পূর্বে হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে তিব্বতের ভেতর ইয়ারলুঙ-সাংপো নামে প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে। এরপর এই নদ দক্ষিণে বাঁক নিয়ে সিয়াং-ডিহং নামে হিমালয় পর্বতমালা ভেদ করে ভারতের অরুণাচল রাজ্যে প্রবেশ করেছে। আসামের সাদিয়ার নিকট এই নদ ডিবং ও লোহিত নদের সাথে মিশে সমতলে ব্রহ্মপুত্র নাম ধারণ করেছে। 

ময়মনসিংহ জেলার গেজেটিয়ার ১৯৭৮ এর মতে, ১৭৮০ সালে সাংপো নদ হিমালয় ভেদ করে আসামে প্রবেশ করেছে। এর আগে আসাম সমভূমিতে এই নদের নাম ছিল লোহিত। ব্রহ্মপুত্র নদ আসাম সমতলে দক্ষিণ-পশ্চিমে ৮০০ কিলোমিটার প্রবাহের পর কুড়িগ্রাম জেলায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশে এই নদ আগে ময়মনসিংহ, ভৈরব, চাঁদপুর হয়ে সরাসরি সাগরে পড়ত। ১৭৮৭ সালের বন্যার পর এই নদ তার প্রবাহপথ ক্রমেই বদলে কুড়িগ্রাম থেকে দক্ষিণে যমুনার পথে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার প্রধান শাখানদী ধলেশ্বরী যার একটি শাখা টাঙ্গাইল জেলায় পুঙ্গলী নামে পরিচিত। ব্রহ্মপুত্র নদের মোট প্রবাহপথ ৩৮৪৮ কিলোমিটার।

বাংলাদেশের দুধকুমার, ধরলা ও তিস্তাই ব্রহ্মপুত্র নদের প্রধান উপনদী। এগুলোসহ ব্রহ্মপুত্র নদের সব উপনদীগুলোতেই ভারত ও চীন ড্যাম নির্মাণ করে পানি আটকে রাখছে। এছাড়া তিস্তা নদীর ওপর পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবায় ও বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার দোয়ানীতে দুটি ব্যারাজ আছে। ভারত গজলডোবা ব্যারাজের মাধ্যমে তিস্তার প্রায় সবটুকু পানি ডাইভারশন খাল দিয়ে পশ্চিমে মেচি নদীতে চালান করে দিচ্ছে।

মেঘনা নদীর উৎপত্তি বরাক নামে ভারতের নাগা পাহাড় থেকে। বরাক শুরুতে মণিপুরের ভেতর দিয়ে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে টিপাইমুখের কাছে বাঁক নিয়ে উত্তরমুখী হয়েছে। কাছাড়ের সমভূমিতে প্রবেশ করে লখিমপুরের কাছে পশ্চিমে বাঁক নিয়ে শিলচর পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশে প্রবেশের মুখে অমলশিদে বরাক, কুশিয়ারা ও সুরমা নামে ভাগ হয়ে গেছে। মেঘনা নদীর উৎসমুখ থেকে সাগর পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৯৪৬ কিলোমিটার। মেঘনার গুরুত্বপূর্ণ উপনদীর মধ্যে কংস ও সোমেশ্বরী নদীর উৎপত্তি মেঘালয়ের তুরা পাহাড় থেকে। 

মেঘালয় থেকে উৎপন্ন অন্যান্য উপনদী যথা– কুশী গাঙ, সিঙ্গ, ঢালা, উমিয়াম, নয়াগাঙ, চলতি, রক্তি ও বাউলাই সবগুলোতেই ভারত ড্যাম নির্মাণ করে পানি আটকানোর ব্যবস্থা করছে। এছাড়া ত্রিপুরা থেকে আসা সোনাই বরদল, জুরি ও মনু, খোয়াই ও গোমতী নদীর ওপর ভারত ড্যাম নির্মাণ করছে। ফলে বাংলাদেশের হাওর এলাকা আর আগের মতো জলময় নেই। বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত নদী ফেনী নদীর পানি ব্যবহার নিয়েও ভারতের সাথে বিরোধ বেঁধেছে। বাংলাদেশের সোনাগাজীর কাছে ফেনী নদীর ওপর একটি রেগুলেটর নির্মাণ করে জোয়ারের লোনা পানি প্রবেশ রোধ করা হয়েছে ও একটি মিঠা পানির হ্রদ তৈরি করা হয়েছে।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কর্ণফুলী নদীর উৎপত্তি মিজোরামের লুসাই পাহাড় থেকে। বাংলাদেশের ভেতরে কাপ্তাইয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এই নদীর ওপর একটি ড্যাম আছে। কর্ণফুলীর প্রধান উপনদীগুলোর মধ্যে– কাসালং, মাইয়ুনী, চেঙ্গী ও রানখিয়াং নদী কাপ্তাই ড্যামের উজানে পড়েছে। কাপ্তাই ড্যামের ভাটিতে পড়া প্রধান নদীগুলোর মধ্যে– ইছামতী, হালদা ও বোয়ালখালী উল্লেখযোগ্য। হালদা নদী প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন মাছের ডিম সংগ্রহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, যেটি দূষণের কারণে ধ্বংস হতে চলেছে। 

এই এলাকার শঙ্খ নদের উৎপত্তি বান্দরবন জেলার থানচি উপজেলায় আরাকান পাহাড়ের পশ্চিম ঢালে। এই নদে একটি ড্যাম নির্মাণের পরিকল্পনা আছে, যা হলে এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে। কক্সবাজারের মাতামুহুরী নদীর উৎপত্তি বান্দরবনের আলিকদম উপজেলায় আরাকান পাহাড়ের উল্টর-পশ্চিম ঢালে। এই নদীর মূল প্রবাহ মহেশখালী নদী হয়ে সাগরে পড়ার আগে চকোরিয়া সুন্দরবন নামের একটি বনাঞ্চল ছিল, যা চিংড়ি চাষের জন্য কেটে উজাড় করা হয়েছে। 

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে নাফ নদ আরাকান পাহাড়ের পশ্চিম ঢালে উৎপন্ন হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এই নদের মাঝপথ বরাবর ভাটিতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ অবস্থিত। এই অঞ্চলটি পর্যটনের আকর্ষণ হলেও এখন রোহিঙ্গা শরণার্থী ও অবৈধ ব্যবসার কারণে বেশ উত্তপ্ত হয়ে আছে।

লেখক : চেয়ারম্যান, জল পরিবেশ ইনস্টিটিউট

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh