নিজস্ব প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২১, ০৫:৩৪ পিএম
দীর্ঘ ও সফল চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে বাড়ি ফিরে গেছে জোড়া মাথার যমজ শিশু রাবেয়া-রোকেয়া।
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে রাবেয়া-রোকেয়ার গৃহে প্রত্যাবর্তন অনুষ্ঠানে রবিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী রাবেয়া-রোকেয়ার সাথে কুশল বিনিময় করেন।
এর আগে শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, আজকে রাবেয়া-রোকেয়া বাড়ি ফিরে যাবে। বাবা মার কোলে তারা হেসে-খেলে বেড়াবে, এটা সত্যিই খুব বড় পাওয়া। আমরা যেখানে মুজিববর্ষ পালন করছি, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী আমরা উদযাপন করছি, এই বছরে সেই সময়ে এত বড় একটা সফল অস্ত্রোপচার করা, সফলতা অর্জন করা, এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বিরাট অর্জন।
২০১৬ সালের ১৬ জুলাই পাবনার চাটমোহরের আটলংকা গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা খাতুন দম্পতির ঘরে জোড়া মাথা নিয়ে জন্ম নেয় রাবেয়া-রোকেয়া।
ছোট বোন শেখ রেহানার মাধ্যমে রাবেয়া-রোকেয়ার কথা প্রথম জানতে পারেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে (শেখ রেহানা) পত্রিকায় এটা দেখে সাথে সাথে আমাকে একটা মেসেজ দিলো যে তুমি দেখ, এই রকম দুটো বাচ্চা, কি করা যায়। চিকিৎসার জন্য কিছু করা যায় কিনা করো। আমি সাথে সাথেই ব্যবস্থা নিলাম।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাতেই দেশে-বিদেশে চিকিৎসা পায় দুই শিশু। হাঙ্গেরি সরকারের সহযোগিতায় অ্যাকশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল ফাউন্ডেশনের সক্রিয় অংশগ্রহণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাঙ্গেরিতে তাদের ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৮টি অস্ত্রোপচার হয়।
২০২০ সালের ১ অগাস্ট ঢাকার সিএমএইচে এই জোড়া মাথা আলাদা করার জটিল অস্ত্রোপচার শুরু হয় এবং ৩৩ ঘণ্টার পর রাবেয়া-রোকেয়াকে আলাদা করা সম্ভব হয়, যা বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক অনন্য সাফল্য বলে মনে করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আজকে সত্যিই খুব আনন্দিত এত দীর্ঘ চিকিৎসার পর রাবেয়া-রোকেয়ার সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে এবং এই মার্চ মাস বাঙালির ইতিহাসের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ মাস। এই মাসেই আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেছেন। এই মাসেই আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আবার এই মাস থেকেই কিন্তু আমাদের ভাষা আন্দোলনের যাত্রা শুরু।
তিনি বলেন, সেই মার্চ মাসেই আজকে আমাদের প্রিয় রাবেয়া-রোকেয়া নিজের ঘরে ফিরে যাচ্ছে এবং মা-বাবার কোলে আজকে দুই বোন। এটা সত্যিই খুব আনন্দের। সত্যিই অন্য রকম অনুভূতি।
দুই শিশুর চিকিৎসার ব্যাপারে শুরু থেকেই চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান, কর্মচারীসহ সবার সহানুভূতি ছিলো বলেও জানান সরকার প্রধান।
রাবেয়া-রোকেয়ার চিকিৎসায় হাঙ্গেরিয়ান প্রতিষ্ঠান অ্যাকশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল ফাউন্ডেশনের এগিয়ে আসা এবং তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীকে বার্তা পাঠিয়ে তাদের দেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করানোর কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, এটা খুব অদ্ভুত ব্যাপার। রাবেয়া-রোকেয়া যে জোড়া মাথা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যেটাকে বলে ‘ক্রেনিয় গেগাজ’। এই ধরনের ঘটনা মাঝে মাঝে দেখা যায় কিন্তু আমাদের দেশে এই জোড়া মুক্ত করা এটাও সম্পূর্ণ নতুন একটা কাজ। এটা অত্যন্ত সফলভাবে যে করতে পেরেছেন, সেই জন্য ধন্যবাদ জানাই।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল প্রান্তে এই সময় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন প্রমুখ।