বাংলাদেশ করোনার নতুন ঢেউ দেখতে পারে

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২১, ০৮:৪৭ এএম | আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২১, ০৯:০১ এএম

ছবি: স্টার মেইল

ছবি: স্টার মেইল

দেশে গত পাঁচদিন ধরে প্রতিদিন করোনাভাইরাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি মহামারি ভাইরাসের নতুন ঢেউয়ের ইঙ্গিত হতে পারে। 

তারা বলেছেন, মাস্ক না পরা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মগুলো মানতে জনগণের উদাসীনতা, অত্যন্ত সংক্রমিত যুক্তরাজ্যের নতুন ধরন ও স্বল্প সংক্রমণ হারের কারণে আত্মতৃপ্তি কভিড-১৯ বাড়ার পেছনে মূল কারণ হতে পারে।

তারা আরো বলেন, ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জনগণকে স্বাস্থ্য সতর্কতা অবলম্বন করতে উৎসাহ প্রদান, অপ্রয়োজনীয় জনসমাবেশ এড়াতে সরকারকে গণ-প্রচারণা বাড়াতে হবে ও শতভাগ মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা উচিত।

গত ১৮ জানুয়ারি ভাইরাস সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসে। এমনকি এটি ৩ শতাংশের নিচেও নেমে এসেছিল। তবে গতকাল সোমবার (১৫ মার্চ) সংক্রমণের হার বেড়ে ৯.৪৮ শতাংশ হয়েছে। গত বুধবার সংক্রমণের হার ছিল ৫.৯৮ শতাংশ, বৃহস্পতিবার ৫.৮২ শতাংশ, শুক্র ও শনিবার যথাক্রমে এ হার ছিল ৬.৬২ ও ৬.২৬ শতাংশ আর রবিবার সংক্রমণের হার ছিল ৭.১৫ শতাংশ।

বুধবারের আগে প্রতিদিন করোনা শনাক্ত এক হাজারেরও নিচে ছিল। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৭৭৩ জনের শরীরে নতুন করে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও হেলথ অ্যান্ড হোপ হসপিটালের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান এম এইচ চৌধুরী (লেনিন) বলেছেন, কোভিড সংক্রমণ ফের বাড়ছে যা উদ্বেগের বিষয়। করোনার সংক্রমণ নতুন করে বৃদ্ধি ইঙ্গিত দেয় যে আগামী দিনগুলোতে দেশ একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে। যদি ভাইরাসগুলোর ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান প্রবণতা পরবর্তী দুই সপ্তাহ অব্যাহত থাকে, তবে আমরা এটিকে কভিড-১৯ এর একটি নতুন ঢেউ বলবো।

তিনি বলেন, দীর্ঘ সময়ের জন্য স্বল্প সংক্রমণের হার মানুষকে এমন ধারণা দিয়েছে যে এই মারাত্মক রোগটি খুব শিগগিরই নির্মূল হচ্ছে। আবার অনেকেই ভাবছেন যে গণটিকা দেয়ার কার্যক্রম চলছে তাই ধীরে ধীরে ভাইরাসটি দুর্বল হয়ে পড়ছে। এজন্যই মানুষ স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রোটোকলগুলোকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলেছে। তারা মাস্ক পরেনি, শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখে না। জনগণ পর্যটন স্পটগুলোতেও যাচ্ছে ও জনসমাবেশে যোগ দিচ্ছে এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক কাজগুলোও যথারীতি চলছে, যা ভাইরাসের সংক্রমণের হারকে বৃদ্ধি করছে।

তিনি আরো বলেন, যুক্তরাজ্যের নতুন ধরনের করোনাভাইরাস জানুয়ারিতে বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছিল। গত দু'মাস ধরে এটি প্রতিরোধের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়ায় সম্ভবত এখন এই রূপটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের তিনটি ধরন ছাড়াও ভারতে গত মাসে দুটি উচ্চতর মিউট্যান্ট ভাইরাসের ধরন- এন ৪৪০ কে ও ই ৪৮৪ কিউ শনাক্ত হয়েছে। এই ধরন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলছেন, ভ্যাকসিনপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাসহ সবাইকে ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। জনগণকে মাস্ক পরতে ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি বজায় রাখতে উত্সাহিত করার জন্য সরকারের উচিত একটি প্রচার চালানো। সরকারকে এখন অবিলম্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা উচিত যাতে মানুষ মাস্ক পরতে বাধ্য হয়। এছাড়াও সরকারের উচিত তদারকি বাড়ানো যাতে সরকারি ও বেসরকারি সব অফিসের শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়।

তিনি সরকারকে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ প্রচার আরো বেগবান করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, জনগণ এখন ধীরে ধীরে এই ভ্যাকসিন গ্রহণে কম আগ্রহ দেখাচ্ছে। এই ভ্যাকসিন গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এই অভিযান আরো জোরদার করা উচিত। ভ্যাকসিন গ্রহণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে জনপ্রতিনিধিদের মানুষের বাড়ি বাড়ি যাওয়া উচিত যেমনটা তারা ভোটের আগে করে থাকেন। এছাড়া ভ্যাকসিন প্রদানের কেন্দ্রও বাড়াতে হবে, যাতে করে মানুষ সহজেই ভ্যাকসিন পেতে পারেন।

লেনিন বলেন, সরকার এখনো ভাসমান মানুষ, বস্তিবাসী, দিনমজুর, কৃষক ও নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে পারেনি। এই গ্রুপের জন্য আমাদের দ্রুত ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এছাড়া নারীদের একটি বড় অংশ এখনো করোনার ভ্যাকসিন নেয়নি। নারীরা করোনার ভ্যাকসিন নিতে কম আগ্রহ দেখাচ্ছে। নারীদের ভ্যাকসিন নিতে উতসাহ দিতে সরকারের নজর দেয়া উচিত।

ডিজিএইচএসের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. বে-নাজির আহমেদ বলেছেন, দেশে কোনো গবেষণা ও জরিপ না থাকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনের কারণগুলো নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে দেশে যুক্তরাজ্যের নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে ও এটি অবশ্যই ধীরে ধীরে নতুন সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে কারণ।

তিনি আরো বলেন, গ্রীষ্মকাল করোনাভাইরাসের অনুকূল হতে পারে কারণ গত বছর একই সময়কালে করোনাভাইরাস বৃদ্ধি পেয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের একটি আশঙ্কা ছিল যে শীতকালে ভাইরাসটি দেশে মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাবে, তবে তা হয়নি। করোনা ছড়িয়ে পড়ার জন্য বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন অবস্থা উপযোগী কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য একটি গবেষণা করা উচিত।

স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান বলেছেন, করোনা সংক্রমণ উত্থানের পেছনে মানুষের অসতর্কতা প্রধান কারণ। তবে এটি গত বছরের মতো দীর্ঘকাল ধরে চলবে না। করোনাভাইরাস সংক্রমণ নতুন করে বেড়ে যাওয়া নিয়ে আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়েছি। তবে আমরা আশাবাদী যে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সংক্রমণ আবার যথেষ্ট হ্রাস পাবে।

তিনি বলেন, সংক্রমণের হার বাড়লেও মৃত্যুর হার এখনো খুব কম। ‘আমরা মৃত্যুর হার কম রাখার জন্য কাজ করছি। মাস্ক পরা ও ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য জনগণকে উত্সাহিত করতে গণ-প্রচার আরো বাড়ানো হচ্ছে। -ইউএনবি

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh