শাল্লায় সাম্প্রদায়িক হামলকারীদের ছাড় নয়: র‌্যাব

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২১, ০২:৫৫ পিএম | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২১, ০২:৫৬ পিএম

ছবি: সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

ছবি: সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

র‌্যারের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিকারী দুষ্কৃতিকারীদেরকে ছাড় দেয়া হবে না। 

তিনি বলেন, আমরা যুগযুগ ধরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে সম্প্রতির বন্ধে আবদ্ধ হয়ে বসবাস করে আসছি। যারা এই ন্যাকারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে আর জড়িত আছে তাদের খোঁজ বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। 

তিনি আরো বলেন, আপনরা সবাই নিজ নিজ বাসস্থানে নিশ্চিন্তে থাকবেন, আমি আপনাদের বলে যাচ্ছি আপনাদের আর কেউই কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি আছে। 

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় সুনামগঞ্জের শাল্লায় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামে হামলার ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপজেলার হবিবপুর নয়াগাঁও মধ্যহাটিতে সংবাদ সম্মেলন করে র‍্যাবের মহাপরিচালক এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন, এই হামলা, লুটপাট যারা করেছে তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যেকোনো সময় ওই লোকজনদের গ্রেফতার করা হবে। আজই এই ঘটনার মামলা করা হবে। আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। আপনাদের ভয়ের কারণ নেই আর। ভবিষ্যতে এমন জঘন্য ঘটনা ঘটাতে না পারে তার সবোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ আমাদের ঘায়েল করতে পারেনি। বড় বড় জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদ যখন আমাদের ঘায়েল করতে পারেনি, তখন এখানকার উগ্রবাদীরা দীর্ঘদিনের সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট করতে পারবে না। বাংলাদেশ অপরাধ দমনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে বিশ্বদরবারে সুনাম অর্জন করেছে। সেভাবে অচিরেই সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের কালো হাত ভেঙে দেয়া হবে।

এসময় সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানসহ সাংবাদিক, বীর মুক্তিযুদ্ধা ও গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ সুপার মিজানুর বলেন, আমরা গ্রামে এসে সবার সাথে কথা বলেছি। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের ছাড় দেয়া হবে না। আর কেউ যাতে হামলা না করতে পারে গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করেছি। এ ব্যাপারে প্রচলিত আইনে মামলা হবে।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এ ঘটনাটি ন্যাক্কারজনক। আমরা দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। তাছাড়া যেসব মন্দির, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের তালিকা করে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছি।

এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত এ ঘটনায় কোন মামলা হয়নি। কোনো আটকও নেই। তবে আটক ঝুমন দাস আপনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন, বুধবার সকালে ওই গ্রামে হামলা চালিয়ে ৬০-৭০টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও আসবাবপত্র তছনছ করে হেফাজতে ইসলামীর অনুসারীরা। খবর পেয়ে শাল্লা থানা পুলিশসহ ও দিরাই থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সুনামগঞ্জ জেলা শাখা। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট বিমান কান্তি রায় ও সাধারণ সম্পাদক বিমল বণিক এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, এমন ঘটনা ন্যাক্কারজনক। আমরা হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সেই সাথে ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে এ জন্য প্রশাসনকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।

গত সোমবার দিরাই উপজেলায় হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত সম্মেলনে যান হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। সম্মেলনে মামুনুল হকের দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে স্থানীয় এক হিন্দু যুবক ফেইসবুকে একটি পোস্ট দেন বলে পুলিশ জানায়।

শাল্লা থানার ওসি নাজমুল হক বলেন, ওই ঘটনাকে ধর্মীয় উসকানি আখ্যায়িত করে ওই এলাকার মামুনুল হকের অনুসারীরা মঙ্গলবার রাতে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সেই রাতেই ওই যুবককে আটক করে। পরে গতকাল বুধবার (১৭ মার্চ) সকালে কাশিপুর, নাচনী, চণ্ডিপুরসহ কয়েকটি মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামের হেফাজত নেতা মামুনুল হকের কয়েক হাজার অনুসারী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে নোয়াগাও গ্রামে অতর্কিত হামলা চালায়। হাজারো মানুষের আক্রমণে গ্রাম ছেড়ে আত্মগোপনে যায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এই সুযোগে হেফাজত নেতার অনুসারীরা গ্রামে প্রবেশ করে তছনছ করে। লুটপাট করে বিভিন্ন বাড়িতে।

তবে ওই হামলার সাথে হেফাজতে ইসলামের ‘কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই’ দাবি করে সংঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন বলেছেন, সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে ওই যুবকের বাড়িতে হামলা করেছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh