ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২১, ০৩:২৪ পিএম | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২১, ০৩:২৫ পিএম
পর পর চার বছর বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের শীর্ষ অবস্থানে আসন গেড়ে আছে ফিনল্যান্ড। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট নামে এক বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
আজ ২০ মার্চ (শনিবার) বিশ্ব সুখ দিবসে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানও আগের চেয়ে কিছু ভাল হয়েছে। বাংলাদেশ আছে তালিকার ১০১ নম্বরে। এর আগের জরিপে ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০৭তম। সে হিসেবে বাংলাদেশ র্যাংকিংয়ে ছয় ধাপ এগিয়েছে।
তবে মানুষ তার ব্যক্তিগত জীবনে কতোটা সুখী সেটার গড় মূল্যায়ণে বাংলাদেশ তার প্রাপ্ত স্কোর অনুযায়ী তালিকার ৬৮ নম্বরে স্থান পেয়েছে। যা ২০১৭-২০১৯ সালের স্কোরের চাইতে ৯ ধাপ এগিয়ে এসেছে।
২০১৮-২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ১৪৯টি দেশে জরিপ চালিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডেনমার্ক রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। এরপরেই রয়েছে সুইজারল্যান্ড, আইসল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস।
অন্যদিকে আগের অবস্থান থেকে চার ধাপ পিছিয়েছে যুক্তরাজ্য। আগে তার অবস্থায় ১৩তে, থাকলেও ২০২০ সালের এই প্রতিবেদনে তা ১৭-তে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া তালিকার ১৯তম অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। হ্যাপিনেস র্যাংকিং-এ শীর্ষ ১০ এর তালিকায় থাকা একমাত্র নিউজিল্যান্ডই একমাত্র ইউরোপের বাইরের দেশ।
অ্যানালেটিক রিসার্চ গ্যালাপ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এবারে নবমবারের মতো হ্যাপিনেস রিপোর্ট প্রকাশিত হল। মূলত ১৪৯টি দেশের মানুষজনকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে তাদের সুখ পরিমাপ করা হয়েছে। সুখের পরিমাপক হিসেবে- দেশটির সামাজিক সুযোগ-সুবিধা, সামাজিক উদারতা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি, গড় আয়ু ও দুর্নীতির মাত্রা বিষয়গুলোকে সামনে রাখা হয়। তবে এবার সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে করোনাভাইরাস মহামারিতে মানুষের সার্বিক পরিস্থিতিকে।
এসব মানদণ্ডে বিশ্বের সবচেয়ে অসুখী দেশ হিসেবে আফগানিস্তানের নাম উঠে এসেছে। তারপরেই রয়েছে লেসোথো, বোতসোয়ানা, রুয়ান্ডা ও জিম্বাবুয়ে।
মহামারির কারণে বিশ্বে মানুষে সুখের ওপরও এর প্রভাব পড়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৪৯টি দেশের এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে নেতিবাচক আবেগ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে ২২টি দেশের পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভাল হয়েছে।
আগের বছরের র্যাঙ্কিংয়ের চেয়ে এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের অবস্থান বেশ ভালো। এরমধ্যে বাংলাদেশ যেমন আছে, তেমনি চীন ৯৪তম থেকে ৮৪তম স্থানে উঠে এসেছে। অর্থাৎ ১০ ধাপ এগিয়েছে।
আবার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অসুখী দেশ হিসেবে আফগানিস্তানের পরেই ভারতের অবস্থান। ১৪৯টি দেশের মধ্যে ভারত রয়েছে ১৩৯তম অবস্থানে।
১২৯তম স্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, সামরিক অভ্যুত্থান ও গণআন্দোলনের জোয়ারে ভাসা মিয়ানমার আছে তালিকার ১২৬-এ ও ১০৫ তম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান।
এবারের প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী দলে ছিলেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার অধ্যাপক জন হেলিওয়েল। তিনি বলেন, আশ্চর্যের বিষয় হলো- এই জরিপে অংশ নেয়া প্রত্যেকেই যখন তাদের নিজের জীবন দিয়ে সুখ মূল্যায়ন করলেও, তাদের গড় ভালো থাকা বা সুস্থ থাকার ব্যাপারটি কমেনি।
এর একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে যে সাধারণ মানুষ হয়তো কভিড-১৯’কে একটি সাধারণ রোগ হিসেবে মেনে নিয়েছে। এই সময়ে বাইরে বের হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ার বিষয়টি প্রত্যেকে প্রভাবিত করেছে এবং এটি মানুষের সাথে মানুষের সংহতি ও সহানুভূতির বাড়িয়ে তুলেছে।
ফিনল্যান্ড মহামারিকালীন জীবন ও জীবিকা রক্ষা সেইসাথে পারস্পরিক আস্থার মানদণ্ডে সবচেয়ে উচ্চ অবস্থান অর্জন করেছে, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, ৫৫ লাখ জনসংখ্যার নর্ডিক দেশটি মহামারিকালীন ইউরোপের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর চাইতে অনেক বেশি ভালভাবে কভিড পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৭০ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৮০৫ জন।
প্রতিবেদন অনুসারে ১০টি সুখী দেশ হলো- ১. ফিনল্যান্ড, ২. ডেনমার্ক, ৩. সুইজারল্যান্ড, ৪. আইসল্যান্ড, ৫. নেদারল্যান্ডস, ৬. নরওয়ে, ৭. সুইডেন, ৮. লুক্সেমবার্গ, ৯. নিউজিল্যান্ড ও ১০. অস্ট্রিয়া। -বিবিসি