পাঠকপ্রিয় হচ্ছে আমিন সাদীর পাঠাগার

আকিব হৃদয়

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২১, ০৪:২৭ পিএম

সাদী নামে বেশি পরিচিত হলেও পুরো নাম আমিনুল হক সাদী। একটি পাঠাগারের উদ্যোক্তা। নিজের বাড়িটিকেই পাঠাগার হিসেবে একটি আদর্শ বাড়িতে রূপান্তরিত করেছেন। মুজিববর্ষের অঙ্গীকার ঘরে ঘরে পাঠাগার স্লোগানে এলাকার পাঠকদের দৃষ্টি কেড়েছে তার প্রতিষ্ঠিত ‘মহিনন্দ ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ পাঠাগার’। এক দশক যাবত গ্রামীণ জনপদে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে পাঠাগারটি।

পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা লেখক ও গবেষক আমিনুল হক সাদী। বইয়ের সংগ্রহশালা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল ‘মহিনন্দ ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ পাঠাগারের কার্যক্রম প্রথমে তার নিজ বাড়িতে শুরু করেন। সম্প্রতি পাঠাগারটি স্থানান্তরিত করে নীলগঞ্জ-তাড়াইল সড়ক সংলগ্ন নিজস্ব জমিতে নতুন ঘর তৈরি করে আরও সম্প্রসারণ করেছেন।

এ পাঠাগারে রয়েছে সহস্রাধিক বই। বইয়ের তালিকায় রয়েছে-স্থানীয়, জাতীয় এবং বিশ্বখ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তিত্বের জীবনী, রবীন্দ্র রচনাবলী, নজরুল রচনাবলীসহ সাহিত্যের বিভিন্ন গ্রন্থ যা এই গ্রন্থাগারটিকে করেছে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। পাঠাগারে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নারও স্থাপন করা হয়েছে।

পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ হোসেন জানান, প্রথমে পাঠাগারটি ব্রিটিশ আমলের নায়েব আ. মতিন নায়েব সাহেবের বাড়ি প্রাঙ্গণে যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেখানে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় সমাজকর্মী মো. নুরুল হক পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা আমিনুল হক সাদীকে কিছু জমি লিখে দেন। উক্ত জমিতেই এ পাঠাগারটির নতুন ঘর নির্মাণ করে তিনি পাঠাগারের কার্যক্রমকে সম্প্রসারিত করেছেন।

পাঠাগারের নিয়মিত পাঠক মো. হাবিবুল্লাহ, সুমন মিয়া ও শহীদ মিয়া বলেন, আমাদের ইউনিয়নের কৃতী সন্তান সাংবাদিক ও লেখক আমিনুল সাদী ভাইয়ের প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারে এসে অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। একটা সময়ে অনেক ঘোরাঘুরি ও আড্ডা দিতাম। ফেসবুক ও মোবাইল নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটাতাম; কিন্তু পাঠাগারে এসে সে অভ্যাসটা দূর হয়ে গেছে। তাই সকাল ও বিকালে সময় কাটাতে পাঠাগারে এসে বই পড়ে মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সঠিক এবং বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছি। এছাড়াও সাধারণ অনেক প্রকারের বই পড়ে অতিরিক্ত জ্ঞানার্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখছে পাঠাগারটি।

মহিনন্দের তরুণ শিল্পী নিরব রিপন বলেন, পাঠাগারের সারি সারি বইয়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলি। পাঠাগারের পাঠক কিশোরগঞ্জ পুলিশ লাইন্স উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আবুল কাশেম শামীম বলেন, জ্ঞান অর্জন ও চরিত্র গঠনে বইয়ের বিকল্প নেই। আমি নিজেও একজন পাঠক এতদঞ্চলের আমার ছাত্ররাও এ পাঠাগারের বই পড়ে উপকৃত হচ্ছে। আমি পাঠাগারটির প্রতিষ্ঠাতা আমিনুল হক সাদীসহ পাঠাগারের সার্বিক সমৃদ্ধি কামনা করছি।

পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা আমিনুল হক সাদী বলেন, বিখ্যাত কবি আল্লামা শেখ সাদীর লিখা কিতাবে পড়েছিলাম ‘আমি মরে যাব কিতাবের ওপর, মৃত্যুর পর আমার কাফন হবে কিতাবের কাগজ দ্বারা’। এ বাণীটি সব সময় আমাকে তাড়িত করত। যে কারণে নিজ বাড়িতেই পাঠাগার প্রতিষ্ঠার জন্য আগ্রহী হই। জ্ঞান অর্জনে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। একটি পাঠাগার এলাকার শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনে যথেষ্ট সহায়ক।

জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের সহকারী পরিচালক আজিজুল হক বলেন, মহিনন্দ ইউনিয়নের গয়ালাপাড়ার আব্দুল মতিন নায়েব সাহেবের বাড়িতে প্রথমে যখন ‘মহিনন্দ ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ পাঠাগার’ ছিল তখনও পরিদর্শনে গিয়েছি। সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের নীলগঞ্জ-তাড়াইল সড়ক সংলগ্ন পাঠাগারটির আনুষ্ঠানিক ফলক উন্মোচন করেছি। এ পাঠাগারের উদ্যোগে জেলার শতাধিক পাঠাগারের ইতিহাস নিয়ে একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। পাঠাগারের কার্যক্রম দেখে অভিভূত হয়েছি। পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা আমিনুল হক সাদী জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh