বাগেরহাটে জমে উঠেছে বৃহত্তম চিংড়ি পোনার হাট

এস.এস শোহান

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২১, ০৫:০৬ পিএম

পোনা মৌসুমের শুরু থেকেই বাগেরহাটের ফয়লাহাটার চিংড়ি পোনার বাজার জমে উঠেছে। ইতিমধ্যে ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত পোনা ক্রয়ের জন্য ভিড় করতে শুরু করেছে চিংড়ি চাষিরা। কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের হ্যাচারি থেকে আসা পোনা বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ঘেরে পোনা ছাড়ার ভরা মৌসুম শুরু থেকে দেরি এখনো এক মাস, এরই মধ্যে প্রতিদিন অর্ধ কোটি টাকার বেশি পোনা বিক্রি হচ্ছে এই হাটে। তবে সম্ভাবনাময় এই হাটের নানা সংকটের কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা।

খুলনা-মোংলা মহাসড়কের বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার ফয়লা নামক স্থানে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম এই চিংড়ি পোনার হাট। এই হাটে ২ শতাধিক পোনার আড়ত (দোকান) রয়েছে। পোনা গণনা, পরিবহনসহ নানা কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন আরো সহস্রাধিক মানুষ। দিনে ৫০০ থেকে হাজার টাকা টাকা পর্যন্ত আয় করেন তারা। যাতায়াত ব্যবস্থা সুবিধাজনক হওয়ায় প্রতিদিন ভোর থেকে বাগেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চিংড়ি চাষিরা ছুটে আসেন এই চিংড়ি পোনার আড়তে। এখান থেকে পোনা কিনে নিয়ে চলে যান মৎস্য ঘেরে। হ্যাচারির পোনার পাশাপাশি ও প্রাকৃতিক উৎস থেকে আহরণকৃত পোনাও বিক্রি হয় এই হাটে। তবে হ্যাচারির চেয়ে গুণগত মান ও উৎপাদন ভালো হওয়ায় নদী থেকে পাওয়া পোনার চাহিদা বেশি। তাই দামও দ্বিগুণ। প্রতি হাজার হ্যাচারি পোনা বিক্রি হয় ৩৫০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে। আর নদীর পোনা বিক্রি হয় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত। তবে হাটকে কেন্দ্র করে এই এলাকায় যে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তা ধরে রাখার জন্য হাটের অবকাঠামোর উন্নয়নসহ প্রশাসনের হয়রানি বন্ধের দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাকৃতিক উৎসের মাধ্যমে আহরিত পোনা গাড়িতে করে আসে এই হাটে। এখান থেকে পোনা ক্রয় করে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার অনৈতিক চাহিদা না মেটানোর কারণে এই পোনা ঢেলে ফেলে দেয়। এতে চাষিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক সময় নদীর পোনার ব্যবসায়ীদের হাড়িও ফেলে দেয় ঠুনকো অজুহাতে।

ব্যবসায়ী মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ফয়লাহাট বাজারটি এমন একটা যায়গায় অবস্থিত যে বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে মানুষ সহজে আসতে পারেন। কিন্তু প্রায় তিন বছর ধরে গোবিন্দপুরের পথে ফয়লা হাটে প্রবেশের ব্রিজটি নির্মাণ কাজ চলছে। যার ফলে বাইপাস সড়ক দিয়ে আসতে ক্রেতাদের খুব কষ্ট হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষসহ বাজারের নানা অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানান তিনি।


পোনা ব্যবসায়ী শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, ভোর বেলা থেকে এখানে পোনা বিক্রি শুরু হয়। বাগেরহাট জেলার ৯টি উপজেলা, ৭৫টি ইউনিয়নসহ সকল গ্রাম থেকে এখানে পোনা কিনতে আসেন চাষিরা। জেলার বাইরে সাতক্ষিরা, পাইকগাছা, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকার চিংড়ি চাষিরা এখান থেকে পোনা ক্রয় করে ঘেড়ে ছাড়েন।

মাছ ক্রয় করতে আসা ঘের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের আগ্রহ থাকে নদীর পোনার উপর। কিন্তু বিভিন্ন কারণে নদীর পোনার সংকট থাকায় আমরা বাধ্য হয়ে হ্যাচারির পোনা ক্রয় করি। তবে নদীর পোনার উৎপাদন ভালো হয় বলে দাবি করেন তিনি।

কচুয়ার চিংড়ি চাষি শেখ রুস্তম আলী বলেন, ১৭ বছর ধরে এই হাট থেকে পোনা কিনে ঘেরে ছাড়ি। পোনার দাম ও মান দুটোই আমাদের পছন্দের মধ্যে থাকে। তবে অনেক সময় দুই তিন দিন আগের হ্যাচারির পোনা আমাদের কাছে বিক্রি করা হয়। ওই পোনাগুলো পরবর্তীতে ভালো ফল দেয় না। এই বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারির দাবি জানান তিনি।


ফয়লাহাট বাজার মৎস্য সমিতির সভাপতি গাজী রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, বাগেরহাটসহ আশপাশ এলাকার হাজার হাজার চাষি এই হাট থেকে পোনা ক্রয় করেন। আমাদের ফয়লাহাটে প্রায় দুই শতাধিক মাছের পোনার আড়ৎ (দোকান) রয়েছে। পোনা পরিবহন, পোনা গোনাসহ বিভিন্ন কাজের সাথে সহস্রাধিক মানুষ যুক্ত রয়েছে। এই হাট থেকে প্রতিবছর ৩৫০ কোটির উপরে পোনা বিক্রি হয়। কিন্তু অনেক সময় প্রশাসনের লোকজন হাটের ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের অহেতুক হয়রানি করে থাকে যা মোটেই কাম্য নয়। হয়রানি বন্ধে মৎস্য বিভাগ ও বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেন এই মৎস্য নেতা।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম রাসেল বলেন, বাগেরহাটের সব থেকে বড় পোনার হাট ফয়লাহাট। এখানকার পোনার উপর চাষিরা অনেকটা নির্ভরশীল। কোনোভাবে এই হাট ও হাটের উপর নির্ভর করা চাষিদের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা যাবে না। এ বিষয়ে একটি সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh