ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২১, ০৭:০৩ পিএম
দেশের জনগণ ও গণতন্ত্র রক্ষায় সামরিক বাহিনী দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মিয়ানমারের জান্তা সরকার ঘোষণা দেয়ার পরদিন দেশটিতে অন্তত ৯০ বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপনের মধ্যেই দেশজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে শনিবার (২৭ মার্চ) এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন ঘিরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের ‘মাথায় এবং পেছনে’ গুলি করা হবে বলে হুমকি দিলেও তা উপেক্ষা করে শনিবার দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন, মান্দালয় এবং অন্যান্য এলাকায় বিক্ষোভ করেন হাজার হাজার মানুষ।
ক্ষমতাচ্যুত মিয়ানমারের আইনপ্রণেতাদের জান্তাবিরোধী গ্রুপ সিআরপিএইচের মুখপাত্র ডা. সাসা বলেছেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর জন্য আজ লজ্জা দিবস।’ কয়েক সপ্তাহ আগে দেশটিতে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর তিন শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে সেনাবাহিনী।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাউ বলছে, শনিবার সকালের দিকে ইয়াঙ্গুনের ডালা শহরে পুলিশ স্টেশনের বাইরে বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে অন্তত চারজনের প্রাণহানি ঘটে। এতে আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ১০ জন।
রাজধানী নেইপিদোতে শনিবার সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং আবারও নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
শহরের ইনসেইন জেলায় বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে স্থানীয় একটি ফুটবল দলের ২১ বছর বয়সী এক তরুণও রয়েছে।
মিয়ানমার নাউ বলছে, নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে মান্দালয়ের বিভিন্ন শহরে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাসিও, ইয়াঙ্গুনের কাছের বাগো, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় হোপিন-সহ বিভিন্ন শহরে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর গুলিতে হতাহতের খবর এসেছে।
মিয়ানমার নাউয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবারের বিক্ষোভে কমপক্ষে ৯০ জনের প্রাণ গেছে। তবে বার্তাসংস্থা নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রাণহানির এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। এ বিষয়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্রের মন্তব্যও পাওয়া যায়নি।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং বলেন, ‘দেশের জনগণের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় সামরিক বাহিনী। অবিলম্বে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।’
‘যারা বিক্ষোভ করছেন, তারা আসলে আন্দোলনের নামে দেশে অরাজকতা করতে চাইছেন এবং মিয়ানমারের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে হুমকির মুখে ফেলছেন। তাদের এ ধরনের কার্যক্রমে নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো লাভ হবে না।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক সতর্কবাণী প্রচার করা হয়। এতে বলা হয়, আগের মর্মান্তিক মৃত্যুগুলো থেকে আপনাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত যে, আপনাদের মাথা ও পিঠে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
গত ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চিকে গৃহবন্দি করে রেখেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এছাড়া তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) পার্লামেন্ট সদস্যসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৩ হাজার নেতাকর্মীকে আটক করেছে সেনাবাহিনী।