নওশাদ রানা সানভী
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২১, ০৪:৫৫ পিএম
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ঝিনাই নদীর ওপর বাঁশের এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন ২০ হাজার মানুষের যাতায়াত। সাঁকোটি ফতেপুর বাজারের পাশেই। এটি পাড় হয়ে চলাচল করে মির্জাপুর, বাসাইল ও সখীপুর উপজেলার ১৭টি গ্রামের মানুষ। যুগের পর যুগ চলছে এ অবস্থা। ফতেপুর হাটে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাকেও যেতে হয় ৮ বাঁশের প্রশস্থ এই সাঁকো দিয়েই। চলাচল করতে হয় শিক্ষার্থীদেরও। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। উপজেলার ফতেপুর বাজারের পাশে থলপাড়া এলাকায় ঝিনাই নদে সেতু নেই।
এলাকাবাসী বলেন, মির্জাপুরের সুতানড়ী, বানকাটা, থলপাড়া, পোড়াবাড়ি, গোবিন্দপুর, বন্যাতলী, রামপুর, তরফপুর, পাথরঘাটা ও গাজেশ্বরী বাসাইলের সিংগারডাক, রাশড়া ও মটেশ্বর এবং সখীপুর উপজেলার চাকদহ, বেড়বাড়ি, হাতীবান্ধা ও কামিলাচালা গ্রামের মানুষ এ এলাকা দিয়ে চলাচল করে। ফতেপুর বাজার ঘিরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বাজারের পাশে রয়েছে হাট ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফতেপুর উচ্চবিদ্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কার্যালয় ও ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়।
গ্রামগুলোর মানুষ সড়কপথে মির্জাপুর ও আশপাশের এলাকাসহ টাঙ্গাইল জেলা সদরে যেতে এ রাস্তা ব্যবহার করেন; কিন্তু সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে জনসাধারণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অনেকেই দুর্ভোগ এড়াতে নদের ওপার থেকে স্থানান্তর হয়ে বাজার এলাকায় বাড়ি করেছেন। লোকজন হেঁটে বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদ পার হচ্ছেন। ঝুঁকি নিয়ে শিশু শিক্ষার্থীরাও নদ পার হচ্ছে। ছোট নৌকা দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপার করা হচ্ছে।
নৌকার মাঝি কর্ন তরনী জানান, ২২ বছর ধরে তিনি এখানে নৌকা চালান। বর্ষাকালে কর্ণ তরুণী, রবিদাস নামের দুইজন বড় নৌকা চালান। বাঁশের সাঁকো দিয়ে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার লোক পারাপার হয়। তিনি কমপক্ষে ২০০ মোটরসাইকেল পার করেন। এছাড়াও তাদের আরেক ভাই বিজয় দাসসহ ৩ ভাই মিলে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বাশের সাকো ও নৌকা চালানো পরিচালনা করে।
সুতানড়ী গ্রামের বাসিন্দা জানান, নদটির স্থানীয় নাম বউমরা নদী। এর পশ্চিম পারে ফতেপুর গ্রাম। পূর্বপারে বারকাঠি বিল। সেখান থেকে কৃষকেরা ফসল কেটে সময়মতো বাড়ি নিতে পারেন না। জমির পাশে উঁচু জায়গায় কিংবা অন্যের বাড়িতে ফসল মাড়াই করতে হয়। কেউ ফসল বাড়ি নিতে চাইলে বর্ষায় নৌকাযোগে আর গ্রীষ্মে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে ভ্যানযোগে থলপাড়া-হিলরা হয়ে নিতে হয়। নদের পূর্বপারের লোকজনকে ফসল বাজারে আনতে হলে নৌকা কিংবা ভ্যান ভাড়া দ্বিগুণ গুনতে হয়। আর বাড়ি থেকে বিক্রি করতে চাইলে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে কম দাম পাওয়া যায়।
ফতেপুরের ঝন্টু মিয়া বলেন, অন্ধকার রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি যেতে খুবই কষ্ট হতো। ভয় করত। বর্ষায় মাঝেমধ্যে নৌকা পাওয়া যেত না। এ কারণে ১৫ বছর আগে থলপাড়া থেকে এসে ফতেপুরে বাড়ি করেছি। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেখানেই থাকি।
ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রৌফ বলেন, এ এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ করা খুবই জরুরি। এতে শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়ন, ব্যবসা বৃদ্ধিসহ এলাকাবাসীর সার্বিক উন্নতি ঘটবে।