লিনাহ ছফি
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২১, ০৫:৫০ পিএম
সৌদি আরবের তরুণ শিল্পী লিনাহ ছফি। থাকেন আমেরিকার সানফ্রান্সিসকোতে। এখানে বসে আঁকা-আঁকি করেন। জগৎজোড়া খ্যাতি তার ‘ব্লুজ সিরিজ’র জন্য। তিনি নিজের সম্পর্কে বলছেন-“আমি সান ফ্রান্সিসকো বেই (নধু) এলাকাভিত্তিক সৌদি শিল্পী। আমি যখন সান ফ্রান্সিসকোতে প্রথম আসি, তখন শিল্পকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলাম। নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে নীলের প্রতি আক্রান্ত হই। নতুন শহরে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি। কঠোর অভিবাসন আইন আমাকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করতে বাধা দিয়েছে! সে সময় আমার যমজ বোন আমাকে এমন প্রতিভা স্মরণ করিয়ে দেয়, যা আমি এত দিন উপেক্ষা করেছিলাম। সে আমাকে ক্যানভাস এবং পেইন্টিং ব্রাশের সেট পাঠিয়ে দিল। আর একটা ছোট্ট নোট দিল- ‘সব সময় আমার ইচ্ছে তুমি শিল্পী হও’। এই ইচ্ছের কাছে এক সময় লীন হয়ে যাই। আর তার ফল হচ্ছে আমার জীবনে এলো- ‘মাই ব্লুজ’।” লিনাহ ছফির একটি সাক্ষাৎকার মুসলিম শিল্পীদের ওয়েবজিন সালামি ডট কম থেকে ভাষান্তর করেছেন কবি ও আরবি ভাষার গবেষক মহিউদ্দীন মোহাম্মদ।
সালাম। লিনাহ আপনার সঙ্গে কথা বলে বেশ আনন্দ লাগছে। সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন এ জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি বেশ সম্মানিত বোধ করছি।
জনাকীর্ণ নগর ক্যালিফোর্নিয়াতে আপনার শিল্পীজীবন কেমন কাটছে; আর সেখানকার শিল্পের পরিবেশ সম্পর্কে বলবেন?
(ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গ রাজ্যের) সানফ্রান্সিসকো শিল্পীদের শহর। এত শিল্পীর ভিড়ে নিজেকে জাহির করা অতটা সহজ নয়। এটাই হলো আমার মূল্যায়ন। একই সঙ্গে বলব, অনেক চ্যালেঞ্জ ও অনুপ্রেরণার নগর এটি। বৈচিত্র্যময় শৈল্পিক পরিবেশের জন্য এখানকার খ্যাতি রয়েছে দুনিয়াজুড়ে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো গ্যালারিতে হচ্ছে আর্ট ফেস্টিভ্যাল অথবা ইভেন্ট। প্রত্যেকটি সরণির কোণায় শিল্পীর দেখা মেলে। এখানকার দেয়ালচিত্র বিশ্ববিখ্যাত। এমন একটি নজির মিশন জেলায় রয়েছে, যাতে প্রকাশ পেয়েছে অভিবাসীদের সংগ্রামের অভিব্যক্তি। অনুরূপ এখানকার নান্দনিক পরিবেশে শিল্পীরা অনুপ্রাণিত হন- যেটি অচিন্ত্যনীয় ব্যাপার। আমরা একে অন্যের চিত্রকল্প উপভোগ করি।
ইসলামিক অলংকরণ শিল্পের (Illumination art) এই প্রিয় রূপটির সঙ্গে আপনি কীভাবে যুক্ত হলেন?
হ্যাঁ, গেল বছর এটা আবিষ্কার করার পর এই মাধ্যমটি আমার প্রিয় হয়ে উঠেছে। আমি এখনো এটার অনেক কিছু শিখছি, আর এই শেখার কাজটি অব্যাহত রেখেছি। নকশাকলা ও জ্যামিতির মধ্যে আকর্ষণ খুঁজে পাওয়ার কারণ হচ্ছে, আমি মুসলিম। আমি এসেছি সৌদি আরব থেকে। প্রাকটিসিং মুসলিম হিসেবে বিষয়টি নিয়ে আমি গর্ব করি। তাছাড়া আমি আমেরিকায় বাস করি, আমার সব যোগাযোগ ইংরেজিতে, এতে আমার আশঙ্কা হয় আমার অস্তিত্ব হারিয়ে যেতে পারে! এই চিন্তায় আমার শিরদাঁড়া খাড়া করেছি। একজন আরব ও মুসলিম হিসেবে আমি আমার এখানকার প্রতিদিনকার অনেক অভ্যাস পাল্টাতে থাকি। আর তখন কাজ হিসেবে বেছে নিই আমাদের লোকেদের শিল্পকলা। সর্বোপরি, বিশ্বে সবার মাঝে সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যম শিল্প ছাড়া আর সেরা বিকল্প কী হতে পারে বলেন!
একইভাবে আপনি বিস্ময়কর বিমূর্ত কাজ করেছেন, এ দিয়ে আপনি কী প্রকাশ করতে চান?
বেশির ভাগ কাজে আমি নিজে থাকি। বিমূর্ত (abstract) প্রকাশ করে ব্যক্তি আমিকে। আমি খুব ডিটেইলের লোক নই। আমি বিরাট ছবি দেখি। তবে আমি চাই গল্পের সারৎসার। আমার চাওয়া ফলাফল। অন্য কোনো পন্থাকে থোড়াই কেয়ার করি। ইসলামিক অলংকরণ বা নকশাকলা শিল্প ও জ্যামিতি নিয়ে যেহেতু লড়াই করছি, এই সমস্ত কাজ অনেক বিশদ ও যথাযথ। এরা আমাকে ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে, আমার চোখকে বিশদ শেখাচ্ছে। যেটিকে আমি মনে করি মুসলিম হিসেবে শিখছি। কোরআনে ধৈর্যকে বিরাট পুরস্কারের জন্য পুণ্যকাজ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
সৌদি মহিলা ও শিল্পী হিসেবে আপনার কেমন লাগছে?
আমি স্বস্তি অনুভব করছি। বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার ফলে সেখানকার বেশিভাগ লোক বিভিন্ন সংস্কৃতি ও শিল্প দ্বারা আগ্রহী। প্রায়ই বিষয়টি নিয়ে আসি টেবিলে। লোকেরা আমার দেশ সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী। তারা সৌদি আরবে সংঘটিত নারীর ক্ষমতায়ন আন্দোলনে অংশ হতে চায়।
আপনার শিল্পকর্মে কী জাতীয় করণকৌশল ব্যবহার করেন?
আমার ব্লু সিরিজ ও বিমূর্ত চিত্রের জন্য এক্রেলিক ও বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করি। নিজে তৈরি করি টেকচার। কারণ এটা দ্রুত শুকায়।
আপনি কি দ্য ব্লুজ উপভোগ করছেন; এটা কীভাবে আপনার শিল্পকে প্রভাবিত করে?
‘ব্লুজ’ হল চার বছর ধরে আঁকা ও তৈরি করা আর্টের একটি সংগ্রহ। সৌদি আরবের জেদ্দা সিটির প্রতি আমার যে আকুল আকাঙ্ক্ষা অনুভূত হয়েছে তা প্রতিফলিত করে আমি প্রকল্পটি শুরু করেছি। যেহেতু আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে এসেছি, আমি বুঝতে পেরেছি যে মুসলিম মহিলা হিসেবে আমার মধ্যে থাকা সৌদি আরব-বিশেষত সবসময়ের জেদ্দা, তার সমুদ্র ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত থাকবে।
বিশ্বজুড়ে যারা একদম শুরুর দিকের চিত্রশিল্পী- এদের কাছে আপনার মূল্যবান পরামর্শ কী?
কোনো বই বা অনলাইনে পাওয়া তথ্যের ভাগাড়ে নিজেকে বিস্মিত হতে দেবেন না। এরকম একটি অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার ঝুড়িতে। শেষ পর্যন্ত কূল-কিনারা পাচ্ছিলাম না-কোথা থেকে শুরু করব, কী দিয়ে শুরু করব! আপনি আপনার নিজের শুরু বিন্দুটা থেকে এগোবেন এবং নিজের চিন্তাকে সেখানে নিয়ে যাবেন। শিল্প আসলে জ্ঞান ও তথ্যের সাগর।