শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২১, ০৯:১৩ পিএম
ছবি: শেরপুরে লকডাউনেও কুমার পল্লীতে ব্যস্ত সময় পার করছে কুমাররা
অতি প্রাচীন শিল্পের নাম মৃৎশিল্প। আবহমান বাংলায় এই মৃৎশিল্পের বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে কুমার বা কুম্ভকার। প্রাচীন কাল থেকেই এই শিল্পের সাথে জড়িত হিন্দু সম্প্রদায়ের পাল বর্ণের লোকেরা। পালরা মাটি দিয়ে কঠোর পরিশ্রমে সুনিপুণ হাতে তৈজসপত্র তৈরির মাধ্যমে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
আশির দশকের দিকেও গ্রামের মানুষরা মাটির তৈর বিভিন্ন ধরনের হাঁড়ি, সরা, কলস, বাসন, বদনা, মুড়ি ভাজার খোলা, কোলা, ভাটি ও মঠসহ গৃহস্থালির নানা বস্তু ব্যবহার করতো। আর এসব তৈরি হতো কুমারপল্লীতে। বিশ্বায়নের ফলে ওসব এখন অচল অতীত হয়ে হয়ে গেছে। এখন কুমাররা মাটির তৈরী নার্সারির ফুলফলের টব, দইয়ের পাতিলেই আর কিছু দেবদেবীর মূর্তি বানানোর কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। ফলে অনেকেই পেশা বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। তারপরও যারা এখনো এই পেশার সাথে আছেন তাদের মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা। একে তো জীবিকার দুর্দিন তার উপর করোনা আবার এত প্রতিকূলতার মধ্যে এই জনগোষ্ঠীর নেই সরকারি সহযোগিতা। সব মিলিয়ে বড় কষ্টে দিনাতিপাত করছে কুমার সম্প্রদায়ের লোকাজন।
জানা গেছে, শেরপুর সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের পালপাড়া, বাহারির পাড়া, চেঙ্গুরিয়া ঝিনাইগাতি উপজেলার চাপাঝোড়ায় সবমিলিয়ে শ’ খানেক ঘরের তিন শতাধিক নারী-পুরুষ এ পেশায় এখনো লড়াই করে আছেন। প্রথা অনুসারে বৈশাখ মাসে এই পেশার উৎপাদন কাজ বন্ধ থাকে। তবে ওই মাসে কুমারদের তৈরী করা কিছু জিনিস পত্র শখ করে ক্রয় করে বাঙালি সংস্কৃতির অংশ। গেলো বৈশাখে করোনার লক ডাউনে কিছুই বিক্রি হয়নি। আসছে বৈশাখের জন্য মালামাল তৈরি করা হচ্ছে। আবারো করোনার ঢেউ আসতে শুরু করেছে। এবারো তাদের তৈরী করা জিনিস বিক্রি করতে না পারলে মাঠে মারা পড়বে বলে জানিয়েছে কুমার সম্প্রদায়ের লোকজন।
পাল পাড়ার কুমার আলো রানি পাল, মদন পাল, দীপেন চন্দ্র পাল বলেছেন, এই শিল্পটি আগের মত আর নেই। অনেকেই পেশা বদল করেছে। মাত্র কয়েকটি পণ্য চলে, তবে গেল করোনায় সব বন্ধ থাকায় বিক্রি হয়নি কিছুই। বৈশাখ মাসকে কেন্দ্র করে মোটামোটি ব্যস্ত সময় পাড় করছি। আবারো করোনায় লকডাউন দীর্ঘস্থায়ী হলে পথে বসার জোগাড় হবে।
কুমারদের দাবি গেল করোনায় ২/৪ জন ১০ কেজি সরকারি চাল পেয়েছেন। ২ হাজার ৫০০ করে টাকা দেয়ার তালিকা জনপ্রতিনিধি ও নেতারা করেছিল কিন্তু পরে কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুন জানিয়েছেন, সত্বর কুমার সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে যোগাযোগ করে আলাপ আলোচনা করে সরকারি সহযোগিতা করা হবে।