এক তরুণ চিত্রশিল্পীর ব্যঞ্জনা

মাহমুদ সালেহীন খান

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২১, ১০:৪৫ এএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরের জাফরপুর গ্রামে বেড়ে ওঠা জাহেদুর রহমান রবিন স্বভাবজাত চিত্রশিল্পী। 

কাজের সন্ধানে দেশ ছেড়ে আবুধাবিতে থেকেছেন দীর্ঘসময়। বন্ধুবৎসল রবিন বিদেশে গিয়ে খুব একা হয়ে পড়েন। কাজের ফাঁকে নিজের একাকিত্ব ঘোঁচাতে হাতে তুলে নন রঙতুলি। ক্যানভাসে নানা রঙের খেলায় মেতে ওঠেন এই শিল্পী। নতুন নতুন সৃষ্টির অন্বেষায় একাকীত্ব দূর করেন ও ছবির প্রতি ভালোবাসা জন্ম নেয় তার মনে। 

মা-বাবার বড় ছেলে রবিন বাবার মৃত্যুর পর গ্লাস পেইন্টিংয়ের কাজ নিয়ে পাড়ি জমান দুবাইয়ে। স্কুল জীবন থেকে আঁকাআঁকি, অভিনয় আর কবিতায় হাতেখড়ি। পেয়েছেন অনেক পুরস্কারও; কিন্তু তুলির সঙ্গে সখ্য গড়ে অন্যগুলোকে জানাতে হয়েছে বিদায়। তার কিছুটা খেদ রয়ে গেছে প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ না থাকায়। 

ধর্মভীরু পরিবারে মনে করা হতো, চারুকলায় পড়লেই ছেলের সর্বনাশ হবে; কিন্তু অন্তরে যার নেশা, তাকে তো আর দমিয়ে রাখা যায় না। তিনি শুরু করলেন ছবির পাঠ। দেশি-বিদেশি নানা বই পড়া। একই সঙ্গে চীন-মিসরসহ বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের সঙ্গে গড়ে তুললেন সখ্য। শিখলেন তাদের কাছ থেকে। আর চাকরির ফাঁকে ফাঁকে চলছে রঙতুলির সঙ্গে সংসার। দুবাইয়ের বড় বড় হোটেল বা ধনীদের বাড়িতে অফিসে শোভা পাচ্ছে রবিনের পেইন্টিং।

রবিন মনে করেন, আমাদের শিল্পসাহিত্যকে যারা সমৃদ্ধ করেছেন তাদের অনেকেরই প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ছিল না। নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, জয়নুল কিংবা এসএম সুলতানের কথা আমরা উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি। আঁকতে পারি আমরা আসলে সবাই। প্রতিটি আয়নায় তো আমাদের নিজের ছবি। দৃষ্টিভঙ্গি প্রখর হলে আঁকাটা সহজ হয়ে যায়। 

রবিন ভালোবাসেন মানুষ আঁকতে। কারণ এর মাধ্যমেই তিনি দেখতে পান ভেতরের মানুষটিকে। পরিচিত হয়ে ওঠেন ওই ভেতরের মানুষটির সঙ্গে। বাংলাদেশের অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তির ছবি মূর্ত হয়ে উঠেছে তার তুলিতে। পোর্ট্রেট বেশি আঁকলেও তিনি তার সৃষ্টিকর্মকে সীমাবদ্ধ রাখেননি একমুখিতায়। 

রবিন আরো একটি কাজ করে চলছেন। বিদেশি মানুষের কাছে তুলে ধরছেন আমাদের সময় আর সমাজকে। নিজের দেশকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন বহির্বিশ্বের কাছে। 

রবিন বলেন, বিদেশে জুতার কালি করা থেকে শুরু করে ঘরের সব কাজ নিজেকে করতে হয়। তাই একাকিত্ব মাঝে মাঝেই পেয়ে বসত। সেই একাকিত্ব ভোলার একটি চমৎকার মাধ্যম ছবি আঁকা। আমি চেষ্টা করি প্রতিটি চিত্রকর্মের মাঝে কোনো না কোনো বার্তা পৌঁছে দিতে। 

এরপরও তার চিত্র নিয়ে রয়েছে সমালোচনা। জবাবটা যেন তৈরিই রেখেছেন, যাদের নন্দন তত্ত্বের অন্ধিসন্ধি বোঝার ক্ষমতা নেই, এরাই চিত্রকর্মের পাপ খুঁজে শিল্পীদের গালি দেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh