শিকলে বাঁধা ভাই-বোন, অর্থাভাবে মিলছে না চিকিৎসা

আকিব হৃদয়, কিশোরগঞ্জ

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২১, ১১:০১ এএম

ছবি: কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

ছবি: কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

ঘরের খুঁটি ও গাছের সাথে শিকলবন্দি অবস্থায় বছরের পর বছর জীবন কাটছে মানসিক ভারসাম্যহীন আছমা খাতুন (২৩) ও জাহাঙ্গীর মিয়া (১৮) নামের দুই ভাই-বোনের। অসুস্থ হলেও অর্থাভাবে মিলছে না তাদের চিকিৎসা।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের গণেরগাঁও গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর ফজলু মিয়ার সন্তান আছমা ও জাহাঙ্গীর। বৃদ্ধ বাবা দিনমজুরি করে কোনোভাবে সংসার চালান। মা বয়সের ভারে ন্যুব্জ। দুই সন্তানের চিকিৎসা করানো তাদের পক্ষে অসম্ভব। তাই ছেলে-মেয়ে যাতে হারিয়ে না যায় কিংবা কারও ক্ষতি করতে না পারে এজন্য মেয়েকে পাঁচ বছর ও ছেলেকে দুই বছর ধরে শিকলে বন্দি করে রেখেছেন। 

আজ রবিবার (১১ এপ্রিল) তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শিকলবন্দি আছমা খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে আছে। লোকজনের ভিড় দেখে সে উত্তেজিত হয়ে উঠছে। খানিক দূরে গাছের সাথে শিকলবাঁধা জাহাঙ্গীর মাটিতে শুয়ে আছে। এসময় সুফিয়া কামালের ‘তুলি দুই হাত, করি মোনাজাত’ কবিতাটি পড়ে শোনান আছমা। তার আকুতি, তাকে এভাবে আটকে রাখা হয়েছে। চিকিৎসা দিলে সে ভালো হয়ে যাবে।

মা ফজিলা খাতুন জানান, চার মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে। পরিবারে কিছুটা সচ্ছলতার আশায় মাত্র ১৪ বছর বয়সে গার্মেন্টসে কাজ নেন আছমা। কিছু টাকা জমা রাখেন স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে। কিন্তু ওই ব্যক্তি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেলে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি। চার বছর ধরে তাকে শিকলে আটকে রাখা হয়। এরই মধ্যে বোনের সহযাত্রী হন ভাই জাহাঙ্গীরও। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যবসা করেছিলেন। প্রেমে পড়ে তিনিও মানসিক ভারসাম্য হারান। তাকেও শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে দুই বছর ধরে। টাকার অভাবে মিলছে না চিকিৎসা।

এলাকার সমাজকর্মী রাজিব কুমার জানান, জাহাঙ্গীর ও আছমার এ অবস্থা দেখে ক’দিন আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দেন।

তিনি জানান, বাবা ফজলু মিয়া দিনমজুর। বয়সের ভারে এখন আর কাজ করতে পারেন না। মা চোখে দেখেন না। তাদের কোনো জমিজমা নেই। একটি ছোট্ট ঘর। এমনিতেই কঠিন দারিদ্র্যতার মধ্যে তাদের দিন কাটছে। তার ওপর মানসিক ভারসাম্যহীন দুই সন্তানকে নিয়ে বিপাকে তারা। 

আশপাশের লোকজন জানান, দীর্ঘদিন ধরে বাইরেই তাদের আটকে রাখা হয়। দিন-রাত এখানেই থাকেন ভাই-বোন। চিকিৎসা ও সেবা পেলে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন।

কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুশতাকুর রহমান বলেন, আমি ক’দিন আগে বিষয়টি জেনেছি। তাদের যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

কিশোরগঞ্জ জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, কোনো অবস্থায়ই মানসিক প্রতিবন্ধীকে শিকলে বেঁধে রাখা যাবে না। আমরা খোঁজ নিচ্ছি। তাদের চিকিৎসাসহ যাবতীয় বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে। পরিবারকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়াসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh