নার্সারিতে নিতুর সাফল্য

এইচ আলিম

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৫১ এএম | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২১, ০৮:১৫ পিএম

করোনাকালে ঘরে বসে কিছু করার তাগিদে নার্সারি গড়ে তুলেছেন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী তানজিম তারবিয়াত নিতু। পরিবারের সহযোগিতায় নার্সারি ব্যবসার শুরুতে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০টি ফুল ও ফলের চারা বিক্রি করতে পারলেও এখন তিনি প্রতিদিন গড়ে ১২০টিরও বেশি চারা বিক্রি করেন। গত কয়েক মাসে তিনি প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন। করোনাকালে নার্সারি ব্যবসায় সফলতা পাওয়া কলেজছাত্রী নিতু এখন স্বপ্ন দেখছেন একটি আধুনিক সবুজ দেশ গড়ার।

বগুড়া শহরের মাটিডালি এলাকার ব্যবসায়ী আরিফুজ্জামান আরিফ ও নাজনিন আকতারের কন্যা তানজিম তারবিয়াত নিতু। নিতু বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ (কমার্স) শ্রেণির ছাত্রী। নিতুর পরিবার ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ী পরিবারের তানজিম তারবিয়াত নিতু ছোটবেলা থেকেই স্বাধীনচেতা। পরিবারের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন বিষয়ে মতামত দিয়ে থাকেন। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির পরেও সে ভাবতে পারেনি যে, ছাত্রকালেই ব্যবসায়ী হয়ে উঠবে। 

২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনাভাইরাসের প্রভাবের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে অন্য শিক্ষার্থীদের মতো সেও ঘরবন্দি হয়ে যায়। ঘরে বসে বসে লেখাপড়া করার পরেও তার প্রচুর সময় থাকত। সে অবসর সময় তার কাছে থমকে দাঁড়াতো। নিতু কোনো রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই নার্সারি ব্যবসা শুরু করেন। তার সামনে শুধু ব্যক্তিগত বাগান গড়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি প্রথম দিকে শুধু ফুলের চারা বিক্রি শুরু করেন। 

অনলাইনে শুরু করে দেখতে পান তাতে খরচ বেশি আয় কম। ফুলের চারা বিক্রিতে ক্রেতাদের চাহিদার ভিত্তিতে নিজেদের প্রায় ৫ বিঘা জমির অর্ধেক অংশে তিনি চারা উৎপাদন শুরু করেন। আর তার নার্সারি ব্যবসার নাম দেন ট্রি ওয়ার্ল্ড নার্সারি। ফুলের পাশাপাশি, বিভিন্ন জাতের ফল, ওষুধি, ক্যাকটাস, অর্কিড, মসলাজাতীয় চারা উৎপাদন শুরু করেন। তিন মাস পর নিজের নার্সারি থেকে তৈরিকৃত চারা ক্রেতাদের মাঝে বিক্রি শুরু করেন। বিক্রির এক পর্যায়ে তিনি আলাদা একটি দোকান বা কার্যালয়ের প্রয়োজন অনুভব করেন। এরপর তিনি মাটিডালি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে একটি চারা বিক্রির জন্য রীতিমতো শোরুম দিয়ে বসেন। গত ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে তার নার্সারি ব্যবসার প্রসার ঘটলে বগুড়া সদর উপজেলার মানিকচক এলাকায় তিনি বাবার সহযোগিতা নিয়ে ১৬ বিঘা জমি ক্রয় করেন। কৃষি জমি কিনে তিনি সেখানে বিভিন্নজাতের আমসহ ফলের চারা করেছেন। বিভিন্নজাতের আরও ফুলের চারা তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছেন। 

নিতু জানান, শুরুতে এতটা চিন্তা না থাকলেও ক্রেতাদের চাহিদার কারণে বগুড়া, সাভার, যশোরের ফুলগ্রাম থেকে কিছু কিছু ফুলের জাত সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলোকে বিভিন্ন উপায়ে চারা করা হয়েছে। করোনাকালে ঘরে বসে না থেকে পরিবারের সহযোগিতায় নার্সারি ব্যবসাটা শুরু করেন। নিজের গড়া নার্সারিতে এখন রয়েছে অর্ধশতাধিক জাতের ফুলের চারা। এর মধ্যে ২০ প্রকার গোলাপের চারা, ৩০ প্রকার ফলের চারা। রয়েছে বেশ কিছু মসলা, অর্কিড, ক্যাকটাস ও ওষুধি চারা। মান ও চারার বয়স অনুযায়ী তিনি সর্বনিম্ন ৫০ টাকায় বিক্রি করে থাকেন। তার নার্সারিতে হাজার টাকা মূল্যের চারাও রয়েছে। 

নিতু তার প্রকল্পগুলো ঘুরিয়ে দেখানোর পর বলেন, বেড অনুযায়ী তার কাছে সব মিলিয়ে এখন প্রায় ৫৫ হাজার চারা রয়েছে। প্রতিটি চারা গড়ে ৫০ টাকা করে ধরা হলে আর্থিক হিসাবে দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ২৭ লাখ টাকা। 

নার্সারি গড়ে সফল শিক্ষার্থী নিতু এখন স্বপ্ন দেখছেন সবুজ বাংলাদেশ গড়ার। এ জন্য শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি কৃষি বিষয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। তিনি সরকারের কৃষি অফিসের সহযোগিতা কামনা করেছেন। যেন কৃষির বিভিন্ন দিক প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। পরিবারের সহযোগিতা নিয়ে করোনায় ভিতু হয়ে থাকা নিতু এখন সফল নার্সারির উদ্যোক্তা। সফলতা পাওয়ার কারণে বেশ কিছু নারী ও পুরুষ তার নার্সারি দেখে উৎসাহিত হয়েছেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh