পুরুষশূন্য শাল্লার ৪টি গ্রাম

জাহাঙ্গীর আলম

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২১, ১০:০৩ এএম

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুরের ঘটনায় পৃথক পৃথক ভাবে চারটি মামলার পর গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে চার গ্রাম। ওইসব মামলায় মামলার প্রধান আসামি শহীদুল ইসলাম স্বাধীন মেম্বারসহ ৩৯ জনকে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। 

এদিকে পুলিশি গ্রেফতার আতঙ্কে ওই গ্রামগুলো পুরুষশূন্য হয়ে পড়ায় গ্রামগুলোর নারী ও শিশুরা খাদ্যাভাব ও রাতে নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সমস্যায় উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় সময় পার করছেন। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, গ্রামগুলো একবারেই পুরুষ শূন্য নয়, বলা যায় অভিভাবক শূন্য। বাড়িতে যারা আছেন কয়েকজন বয়ষ্ক, নারী ও ছোট শিশুরা। অভিভাবকহীন হয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে।  গ্রেফতার আতঙ্কে কোনো আত্মীয় স্বজনও তাদের বাড়িতে আসছেন না।  

জানা যায়, ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে গত ১৭ মার্চ শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে হিন্দু বাড়িঘরে দিরাই উপজেলার নাচনী, চন্ডিপুর, ধনপুর ও শাল্লা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের কিছু লোকজন হামলা করার অভিযোগ ওঠে। এতে নোয়াগাঁও গ্রামের হিন্দু কয়েকটি বাড়িঘর, আসবাবপত্র ভাঙচুর হয়। 

এ নিয়ে গত ১৮ মার্চ রাতে শাল্লা থানায় দুটি মামলা হলে দিরাই উপজেলার নাচনী, চণ্ডীপুর, ধনপুর ও শাল্লা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের পুরুষরা গ্রেফতার এড়াতে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। গ্রামের পুরুষরা অন্যত্র থাকায় তাদের পরিবারে দেখা দিয়েছে খাদ্যের অভাব, রাতে নিরাপত্তার অভাবসহ নানা সমস্যা।  জেলার হাওর বেষ্টিত দিরাই উপজেলার নাচনী, চন্ডিপুর, ধনপুর ও শাল্লা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের নারী ও শিশুদের মাঝে বিরাজ করছে এই অনিশ্চয়তা। আর ক’দিন পরেই বৈশাখে নতুন ধান কাটা শুরু হবে। কিন্তু এই গ্রামগুলোর বোরো ফসল ঘরে উঠবে কি-না তা নিয়েও চিন্তিত রয়েছেন পুরুষশূন্য গ্রামের নারীরা।

নাচনী গ্রামের বৃদ্ধ আমির মিয়া বলেন, আমরা বড় অভাব আর হতাশার মাঝে আছি। কোন রকম দিন কাটলেও রাতে থাকি ভয়ে। কি জানি হয়। 

একই গ্রামের রত্ন বেগম বলেন, আমার কিছু হাঁস-মুরগি ছিল এগুলো বিক্রি করে কয়দিন ধরে চলছি। পরে কি করব জানি না। আমার স্বামী কই আছেন তাও আমি জানি না। কোন যোগাযোগ নাই। কি করি বুজে আসছে না। 

সবাই তো অপরাধ করেনি, নিরপরাধ মানুষ হয়রানির শিকার হবে না ওই সব গ্রামের নারী শিশুদের জানিয়ে  দেওয়া হয়েছে বলে জানান শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক। 

তিনি আরও বলেন, তদন্তের আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে বয়স্ক পুরুষজন বাড়িতে আছে। আমরা কোনো নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করব না। যারা মনে করবে অপরাধ করেনি তারা বাড়িতে আসলেই হয়।  

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh