মোহাম্মদ তারেক
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২১, ১০:০৬ এএম
ফারুক
তিনি ঢালিউডে পথ শুরু করেছিলেন নায়ক হিসেবে। তার নামের সামনে একে একে যুক্ত হয়েছে নানা উপাধি। তিনি একাধারে চিত্রনায়ক, প্রযোজক, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী। এছাড়াও তিনি একজন সংসদ সদস্য। বর্তমান সংসদের ঢাকা-১৭ আসন দেখভালের দায়িত্ব তার।
তিনি আকবর হোসেন পাঠান দুলু। তবে সবাই তাকে ফারুক নামে চেনে। তিনি ঢাকাই চলচ্চিত্রের ‘মিঞা ভাই’।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। এনেছেন স্বাধীনতার লাল সূর্য। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ঢালিউডে কাটিয়েছেন বর্ণাঢ্য পাঁচ দশক।
১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড়পর্দায় তার পথচলা শুরু। বিপরীতে পেয়েছিলেন মিষ্টি মেয়ে কবরীকে। তাকে দেখা যায় খান আতাউর রহমানের ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ও নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’ ছবিতে। দুটি ছবিতেই তিনি ছিলেন পার্শ্ব চরিত্রে। ফারুকের ক্যারিয়ারের স্মরণীয় ছবি ‘সুজন সখী’ ও ‘লাঠিয়াল’। ১৯৭৫ সালে দুটি ছবিই ব্যবসাসফল হয়। সে বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আসরে ‘লাঠিয়াল’ ছবির জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার পান তিনি।
‘সূর্যগ্রহণ’, ‘নয়নমনি’, ১৯৭৮ সালে শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘সারেং বৌ’, আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘সাহেব’ প্রভৃতি ছবিতে প্রশংসিত হন তিনি।
ফারুকের কাছে সাদা-কালো যুগের আবেদন এখনো অটুট। তিনি এ বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমাদের সময়ে সাদা-কালো ছবি হতো। কালার ফিল্ম তৈরিই হয়নি। সাদা-কালোতে অন্যরকম মজা আছে। প্রথমবার আমেরিকা গিয়ে ফিল্মের বই কিনেছিলাম। আমি পড়তাম না। ছবি দেখতাম। ছবিতে লাইটিংসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি পাওয়া যেত। মনে হতো ছবিগুলো কথা বলছে। জীবন্ত মনে হয় ছবিগুলোকে। মূল বিষয় হলো গল্প। স্ক্রিনপ্লে, ডায়ালগ, অভিনয়, পরিবেশ সবকিছুর সংমিশ্রণে ছবি হয়। কালার ফিল্মে আরো ডিটেল বিষয়টি ফুটে ওঠে; কিন্তু সেটা এখন হচ্ছে না। এটা যখন হবে তখন আসলে বোঝা যাবে এটি কত বড় জায়গা।
ফারুক কখনো ঘটা করে জন্মদিন উদযাপন করেন না। এ প্রসঙ্গে তিনি নানা সময়ে গণমাধ্যমে বলেছেন, জন্মদিন নিয়ে কোনোদিনই আমার বাড়তি উচ্ছ্বাস ছিল না। আগস্ট শোকের মাস। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমি জন্মদিন পালন করি না। তাছাড়া আট বছর বয়সে মায়ের মৃত্যু ছোটবেলায় মনটাকে বিষিয়ে দিয়েছিল। জীবনের সংগ্রাম দেখেছি খুব নিষ্ঠুরতা আর নির্মম অভিজ্ঞতায়। তবে চলচ্চিত্র পরিবার আমার জন্মদিন পালন করে নানা আয়োজনে।
ফারুক ভালোবেসে বিয়ে করেন ফারজানা পাঠানকে। তাদের কোলজুড়ে এসেছে দুই সন্তান কন্যা ফারিহা তাবাসসুম ও পুত্র রওশন হোসেন। চলচ্চিত্র ও রাজনীতির বাইরে ‘ফারুক’ এর আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। গাজীপুরে অবস্থিত তার শিল্প প্রতিষ্ঠান ফারুক নিটিং ডায়িং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি। এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি।
ফারুককে ‘মিঞা ভাই’ নামে ডাকে অনেকেই। এ উপাধি প্রসঙ্গে ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘লাঠিয়াল’ ছবিতে আমার মিঞা ভাই ছিলেন আনোয়ার হোসেন। সেখানকার একটি সিকোয়েন্সে লোকজনের কথা ধরে আমাকে মারতে থাকেন তিনি। এক পর্যায়ে আমি চিৎকার করে উঠি ‘মিঞা ভাই’ বলে। আমার সে চিৎকারে তিনি থেমে যান ও লাঠিটি ফেলে চলে যান। এরপর থেকেই নামটি প্রচলিত হয়ে ওঠে। সবাই আমাকে ‘মিঞা ভাই’ ডাকতে শুরু করে।
তিনি আরো বলেন, কেন আমাকে ‘মিঞা ভাই’ ডাকছে প্রথমে বুঝতে পারিনি। তবে পরে বুঝলাম বিচার আচার, কারও দুঃখ কষ্টে সাহায্য করার জন্যই মানুষ আমাকে এ নামে ডাকত। এ ডাক বড় অন্তরের ডাক, হৃদয়ের ডাক। মাঝে মাঝে একটি কথা মনে হলে আনন্দ হয়। আবার কষ্টও পাই। সেটি হলো, যখন এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব তখন অনেকেই বলবেন ‘মিঞা ভাই’ আর নেই। বিষয়টি ভাবলে কষ্ট লাগে। এ পৃথিবী ছেড়ে সবাইকে চলে যেতে হবে।
ফারুকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বর্ণাঢ্য। তিনি ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। ছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন। তার অনুপ্রেরণাতেই ফারুক চলচ্চিত্র অভিনেতা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৬ সালে তিনি আজীবন সম্মাননা পুরস্কার অর্জন করেন।
ফারুকের ইচ্ছা ছবি পরিচালনা করবেন। তিনি দেশভাগ, মানবিক বিভিন্ন বিষয়, অটিস্টিকদের বিষয়ে কিংবা রাজনীতিকে উপজীব্য করে ছবি নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন একসময়। সে সময় তিনি পাবেন কিনা জানেন না।