ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২১, ০৩:০৮ পিএম
ইংল্যান্ডের 'বিগ সিক্স' বলে পরিচিত আর্সেনাল, চেলসি, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও টটেনহ্যাম হটস্পার-সহ ইউরোপের ১২টি বিখ্যাত ক্লাব একজোট হয়ে নতুন একটি প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে একমত হয়েছে, যার নাম ইউরোপিয়ান সুপার লিগ বা ইএসএল।
এই সুপার লিগের জন্য স্পেন থেকে যোগ দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও আতলেতিকো মাদ্রিদ, ইতালি থেকে ইউভেন্তুস, এসি মিলান ও ইন্টার মিলান।
প্রাথমিকভাবে, ২৩ বছরের জন্য হয়েছে এই চুক্তি। সুপার লিগের প্রথম চেয়ারম্যান হয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেস।
জার্মানি ও ফ্রান্সের কোনো ক্লাবের যোগ দেওয়ার খবর এখনও পাওয়া যায়নি। তবে এই ১২ ক্লাবের সঙ্গে আরও তিনটি ক্লাব শিগগিরই যোগ দেবে বলে জানিয়েছে সুপার লিগ কতৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠাকালীন এই ১৫ ক্লাবের সঙ্গে প্রতি বছর কোয়ালিফাই করে আসা ৫ ক্লাব, মোট ২০ দল নিয়ে হবে এই টুর্নামেন্ট।
সুপার লিগ কতৃপক্ষ বলছে, ভবিষ্যতে উয়েফা ও ফিফার সঙ্গে আলোচনা করে কাজ করতে চায় তারা।
তবে উয়েফা আগেই কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে, এই লিগে খেললে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করা হবে ওই ক্লাবগুলিকে। লিগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পরও ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে। এটিকে অসমর্থনের কথা জানিয়েছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ফিফা।
এমনকি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এই লিগের বিরোধিতা করে ও উয়েফার অবস্থানকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সরাসরি এই নতুন পরিকল্পনার সমালোচনা করে নিজের টুইটারে লিখেছেন, এটা ফুটবলের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
মি. জনসন আরো লেখেন, ‘ঘরোয়া লিগের মূলে আঘাত করবে এটা। ভক্তদের শঙ্কায় ফেলবে। এই ক্লাবগুলোর উচিৎ ভক্তদের ও ফুটবল কমিউনিটির কাছে জবাবদিহি করা।’
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বিকল্প হিসেবে
এই লিগের কথা শোনা যাচ্ছিল অনেক বছর ধরেই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলে উয়েফার কাছ থেকে যে
অর্থ পাওয়া যাচ্ছে, এর চেয়ে বেশি অর্থ বড় ক্লাবগুলি প্রাপ্য বলে তাদের দাবি অনেক দিনের।
সেই অসন্তুষ্টি থেকেই মূলত নতুন এই সুপার লিগের ভাবনা। এই লিগে স্রেফ অংশ নিলেই বিপুল
অঙ্কের অর্থ আয় হবে, এমনই লক্ষ্য ক্লাবগুলির।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০ ক্লাব দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে খেলবে। প্রতি গ্রুপের শীর্ষ তিন দল উঠবে কোয়ার্টার ফাইনালে। গ্রুপের চতুর্থ ও পঞ্চম হওয়া ক্লাবের প্লে অফ থেকে আসবে শেষ আটের অন্য দুই দল।
সুপার লিগের কাঠামো গড়ে তুলতে ও মহামারীর ধাক্কা সামলাতে ৩৫০ কোটি ইউরোর তহবিল জোগান দেবে সবগুলি ক্লাব মিলে। ফুটবলারদের জন্য এই অর্থ ব্যয় করা যাবে না।
ইউয়েফা কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্পকে 'জঘন্য' আখ্যা দিয়ে বলেছে, তারা সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেবে যাতে এটি বাস্তবায়ন না হয়।
ইউয়েফার সাথে এক বিবৃতিতে একাত্মতা প্রকাশ করেছে ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন, প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ, রয়্যাল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন, লা লিগা, ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশন এবং লেগা সিরি আ।
যেখানে বলা হয়েছে, যখন বিশ্বে সবার ফুটবলের স্বার্থে এক হওয়াটা প্রয়োজন তখন কিছু ক্লাব নিজেদের স্বার্থে এমন একটি প্রজেক্ট ভাবলো যা জঘন্য।
ফিফা ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট ছয়টি মহাদেশের ফুটবল সংস্থা, অর্থাৎ কনফেডারেশনগুলো এই সুপার লিগের সাথে জড়িত সবগুলো ক্লাবকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিল।
জুভেন্টাসের চেয়ারম্যান আন্দ্রেয়া আনেলি ইউয়েফার নির্বাহী কমিটি এবং ইউরোপিয়ান ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনের প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন
তিনি বলেন, ‘একটা সংকটের সময় ১২টি ক্লাব একসাথে হয়েছে। ইউরোপের ফুটবল বদলে দিতে দীর্ঘ পরিকল্পনা আছে আমাদের।’
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কো-চেয়ারম্যান জোয়েল গ্ল্যাজার বলেন, ‘বিশ্বের সেরা ক্লাবগুলো এবং খেলেয়াড়রা একসাথে হয়ে মৌসুমজুড়ে খেলবে। ইউরোপিয়ান ফুটবলে এটি একটি নতুন অধ্যায়। যেখানে বিশ্বমানের খেলা, সুযোগ সুবিধা ও অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যাবে, যার সুফল ফুটবল পিরামিডের সবাই ভোগ করবে।’ -বিবিসি