ওমানে পাসপোর্ট ভোগান্তিতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২১, ০১:৩৩ পিএম

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

নবায়নের জন্য দেয়া পাসপোর্ট সময় মতো না পেয়ে ওমানে সীমাহীন ভোগান্তিতে আছেন হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী।

এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকা প্রবাসীদের কষ্টের সাথে ক্ষোভ যেমন বাড়ছে, তেমনি ব্যাপক চাপে রয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস ও সার্ভিস কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা মানি এক্সচেঞ্জগুলো।

এমন পরিস্থিতির পেছনে ঢাকা থেকে পাসপোর্ট সরবরাহের ধীর গতিকে দায়ী করা হলেও চলতি মাসেই সংকট কেটে যাবে- এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস ও পাসপোর্ট অধিদফতর।

প্রবাসীরা বলেন, গত ছয় থেকে সাত মাস ধরে পাসপোর্ট সংকট দেখা দিয়েছে ওমানে। দেশে যাতায়াতে ছাড়াও ভিসা, আকামা বা রেসিডেন্ট পারমিট কার্ড, এটিএম কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নসহ নানা জরুরি কাজে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। এছাড়াও চিকিৎসা, শিক্ষা, বিভিন্ন পরিষেবা ও আইনি ঝামেলা এড়াতে রেসিডেন্ট কার্ডের প্রয়োজন অনেকগুণ বেড়েছে করোনাকালে। কিন্তু পাসপোর্ট নবায়নের দীর্ঘসূত্রিতায় কোনো কিছুই করতে পারছেন না তারা।

ছয় মাস আগে বাংলাদেশ দূতাবাস অনুমোদিত এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে পাসপোর্ট নবায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন মো. পারসুল আলম। সালালার এই বিপণন কর্মী বলেন, তিন মাস ধরে নিয়মিত এক্সচেঞ্জে ধর্না দিয়ে একটাই বার্তা পাচ্ছি- ‘আপনার পাসপোর্ট প্রিন্টিং প্রসেসিংয়ে আছে।’ কিন্তু প্রিন্ট হয়ে কবে হাতে আসবে সেই উত্তর দিতে পারছে না এক্সচেঞ্জ বা দূতাবাস।

আরেক বাংলাদেশি কর্মী মেহেদি হাসান পাসপোর্ট না পাওয়ায় ভিসা ও আকামা (ওয়ার্ক পারমিট) নবায়ন করতে পারছেন না। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, দুমাস ধরে আমি ভিসা ছাড়া আছি। যা অবৈধ অভিবাসীর সংজ্ঞায় পড়ে। সাধারণ প্রবাসীর সুবিধা পাওয়াটাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

আকামা নবায়ন না হলে প্রতিমাসে জরিমানা গুনতে হয়। যদিও করোনাকালে কিছুটা ছাড় দেয়া হয়েছে।

তবে বড় সমস্যা হচ্ছে ওমানি কোম্পানিগুলোতে বাংলাদেশি কর্মীদের প্রতি বিরূপ মনোভাব। সময় মতো ভিসা নবায়ন না হলে কোম্পানিগুলোকে দেশটির শ্রম দফতরকে কৈফিয়ত দিতে হয়। ক্ষেত্র বিশেষে কালো তালিকাতেও পড়তে হয়।

এসব তথ্য জানিয়ে চট্টগ্রাম সমিতি ওমানের সভাপতি ও দেশে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে এনআরবি-সিআইপির সরকারি মর্যাদা পাওয়া মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী বলেন, করোনাকালে রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীরা যখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের হতাশায় আছেন, সেখানে পাসপোর্ট নিয়ে এমন ভোগান্তি প্রবাসীদের দুশ্চিন্তা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। কী কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি তাদের প্রতিদিন হতে হচ্ছে তা বলে বোঝানো যাবে না।

ওমান সরকারের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, প্রায় পাঁচ লাখ ৪৭ হাজার কর্মী নিয়ে দেশটির বৃহত্তম প্রবাসী গোষ্ঠী বাংলাদেশি। এই পরিসংখ্যানের বাইরে পরিবারের সদস্য ও আকামাবিহীন প্রবাসী মিলিয়ে সাত লাখের ওপরে বাংলাদেশি রয়েছেন দেশটিতে।

ওমানের রাজধানী মাস্কাটে বাংলাদেশ দূতাবাসে একজন কাউন্সেলরের অধীনে থাকা পাসপোর্ট শাখা প্রবাসীদের সেবা দিয়ে থাকে। তারা নবায়ন বা নতুন পাসপোর্ট আবেদন এনরোলড করে ঢাকায় পাসপোর্ট অধিদফতর পাঠান। ঢাকা থেকে প্রিন্ট হয়ে যাওয়ার পরই প্রত্যাশীদের মধ্যে পাসপোর্ট বিতরণ করা হয়।

তবে এমন দীর্ঘ জটের রেকর্ড এর আগে ছিল না। প্রবাসীরা জানান, সাধারণত ৪৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যেত। করোনাকালে এসে তা তিন মাসে গড়ায়। তবে এই সময়ে বাংলাদেশি দুটি মানি এক্সচেঞ্জকে আবেদন গ্রহণ ও পাসপোর্ট বিতরণের দায়িত্বে আনায় সেবা অনেকটা সহজ হয়। কিন্তু গত নভেম্বরে হঠাৎ করেই পাসপোর্ট বিতরণে স্থবিরতার দেখা দেয় ও ফেব্রুয়ারি-মার্চে তা চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

গাল্ফ ওভারসিজ এক্সচেঞ্জের সিইও ইফতেখার হাসান চৌধুরী বলেন, গত জুনে দায়িত্ব পাওয়ার পর করোনার কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা দূতাবাসের পাসপোর্ট শাখার সাথে সমন্বয় করে রাত-দিন প্রবাসীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই গত বছরের শেষে এসে অপ্রত্যাশিত ‘জট’ লেগে যায়। এ বছরের শুরুতে সেটা আরও জটিল হয়ে ওঠে।

ঢাকা থেকে সরবরাহে ধীরগতির কথা জানিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (পাসপোর্ট) আবু সাইদ বলেন, মার্চে মুদ্রণে প্রায় ৩০ হাজার পাসপোর্ট ঢাকায় আটকা পড়ে। আমরা বারবার তাগাদা দেই। এমআরপি বই সংকটের কারণে আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও অধিদফতর সময় মতো পাসপোর্ট সরবরাহ করতে পারেনি বলে এই সংকট দেখা দেয়। এটা আগে কখনো হয়নি।

তিনি জানান, এমন পরিস্থিতিতে ওমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিজানুর রহমান চিঠি দিয়ে ও ফোনে পাসপোর্ট অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ে তাগাদা দিয়ে জট খোলার ব্যবস্থা করেন।

তিনি আরো বলেন, গত দুই সপ্তাহে পাসপোর্ট আসার পরিমাণ বাড়ছে। ফলে জট খুলতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ১০ হাজার পাসপোর্ট আমরা পেয়ে গেছি ও দ্রুত বিতরণও শুরু করেছি। এখন প্রায় ২০ হাজার পাসপোর্ট ঢাকায় মুদ্রণ প্রক্রিয়ায় আছে। আমরা আশা করছি করোনা পরিস্থিতির অবনতিতে কোনো প্রতিবন্ধকতা না হলে চলতি মাসের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যাবে পাসপোর্ট সেবা। -ডেইলি স্টার

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh