৯২ বছর ধরে কবরের পাশে বিরতিহীন চলছে কোরআন তিলাওয়াত

নওশাদ রানা সানভী, টাঙ্গাইল

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২১, ১১:৪৭ এএম

নওয়াব আলী চৌধুরী কবরের পাশে ৯২ বছর ধরে বিরতিহীনভাবে চলছে কোরআন তিলাওয়াত। ছবি: টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

নওয়াব আলী চৌধুরী কবরের পাশে ৯২ বছর ধরে বিরতিহীনভাবে চলছে কোরআন তিলাওয়াত। ছবি: টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী নওয়াব বাড়ির পাশেই ঐতিহ্যবাহী নওয়ার শাহী জামে মসজিদ। মসজিদের পাশের সমাহিত আছেন নওয়াব আলী চৌধুরী। সেই ১৯২৯ সাল থেকে আজ অবধি কবরের পাশেই পাঠ করা হচ্ছে কোরআন তিলাওয়াত। সেই ৯২ বছরের পুরানো করবের পাশে এত বছর ধরে চলছে কোরআন তিলাওয়াত। পাঁচজন হাফেজ এই তিলাওয়াত পরিচালনা করছেন।

ঝড়, বৃষ্টি, দুর্যোগ বা যুদ্ধকালীন সময়েও বাদ দেয়া হয়নি তিলাওয়াত। অবিরাম চলছে তো চলছেই। একজন পড়ে উঠে গেলে, অন্যজন কোরআন নিয়ে বসছেন। কোরআনের আয়াতের সেই সমধুর সুর সেই কবরের চারিপাশে প্রতিনিয়তই ধ্বনিত হয়েছে ও এখনো হচ্ছে।

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর সেই নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী ১৯২৯ সালের ১৭ এপ্রিল ৬৫ বছর বয়সে তিনি মারা গেলে নিজ বাড়ির মসজিদ চত্বরে সমাহিত করা হয় তাকে। সেই সময় থেকেই তার কবরের পাশে বসে এই তিলাওয়াত চলছে।

জানা যায়, নওয়ার আলীর শেষ ইচ্ছায় তার কবরের পাশে এই তিলাওয়াত করা হয়। ধনবাড়ীর এই নওয়াব আলী চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। তিনি যুক্তবাংলার প্রথম মুসলিম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।


১৯১১ সালের (২৯ আগস্ট) ঢাকার কার্জন হলে নবাব সলিমুল্লাহর পাশাপাশি নওয়াব আলী চৌধুরীও ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।

সেদিন বাংলার এ দুই নবাব ল্যান্সলট হেয়ারের বিদায় ও চার্লস বেইলির যোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৃথক দুইটি মানপত্রে এ দাবি পেশ করেন। এরপর ১৯১৭ সালের ৭ মার্চ ইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সভায় ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি উপস্থাপন করেন নওয়াব আলী চৌধুরী।

শুধু দাবিই নয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে অর্থাভাব দেখা দিলে নিজ জমিদারির একাংশ বন্ধক রেখে এককালীন ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে সাহায্য করেন ধনবাড়ীর এই নবাব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিনেট ভবনের নাম সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন নামকরণ করেন।

ওই এলাকার মনছুর মিয়া জানান, আমার বয়স এখন ৫৬ বছর। আমি ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি এখানে কোরআন পাঠ চলছে। দাদার মুখেও শুনেছি তার কথা।

মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মোহাম্মদ ইদ্রিস হোসাইন জানান, আমি ২৯ বছর এই মসজিদের দায়িত্বপালন করে আসছি। তার সমাধিস্থলে ২৪ ঘন্টা কোরআন তিলাওয়াত হয়। যা বিশ্বে কোথাও নেই। এটি এখন পর্যটন এলাকা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। এখানে দেশ ও বিদেশ থেকেও লোকজন আসে। অনেকেই এখানে মান্যত করে থাকেন। বড় পীড় আব্দুর কাদের জিলানীর বংশধর তিনি। তৎকালীন বিদেশ থেকে আসা এখানে ধর্ম প্রচারকারীদেরও কবর রয়েছে।

হাফেজ মো. আব্দুস সামাদ জানান, সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৮টা, সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ১১টা, বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা, দুপুর দেড়টা থেকে বিকাল ৪টা ও বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা। এভাবে আবার রাতেও শুরু হয়। একেক শিফটে একেকজন কোরআন পাঠের দায়িত্ব থাকেন।

তবে এ পাঁচজনের কেউ অসুস্থ হলে অথবা ছুটিতে থাকলে মসজিদের পাশেই হিফজখানা থেকে ছাত্রদের দিয়ে কোরআন তিলাওয়াত করানো হয়।

তিলাওয়াতকারীরা এখানে কোরআন তিলাওয়াতের পাশাপাশি হিফজখানায় শিক্ষকতা করেন। আর সেখান থেকেই তাদের সম্মানী দেয়া হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh