শাশুড়ির সহযোগিতায় আজমিনাকে ধর্ষণ ও হত্যা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২১, ১১:২৩ এএম

র‌্যাবের হাতে আটক ৩ জন। ছবি: সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

র‌্যাবের হাতে আটক ৩ জন। ছবি: সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে উপজেলার গৃহবধূ আজমিনা আক্তার হত্যাকাণ্ডের তিনদিন পর চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে র‍্যাবের কাছে।

নিহতের স্বামী শাহনুর মিয়া কৃষিশ্রমিক হিসেবে বাইরে কাজ করতে গেলে হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি গোলাপ মিয়াকে বাড়িতে ডেকে আনতেন আজমিনার শাশুড়ি হেলেনা বেগম। আজমিনার সাথে সম্পর্ক তৈরিতে সহযোগিতাও করতেন হেলেনা। 

র‍্যাব জানায়,ওই গৃহবধূর স্বামী একজন নিরীহ শ্রমিক। হত্যাকাণ্ডের পর তিনি কাউকে সন্দেহ করতে পারছেন না বলে জানান। র‍্যাব ঘটনার পরপরই খুনের বিষয়টি উদ্‌ঘাটনে কাজ শুরু করে। 

শুধু আজমিনাই নয় এর আগেও হেলেনা বেগম টাকা-পয়সা খেয়ে বিভিন্ন মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক তৈরির সুযোগ করে দেয় গোলাপকে। হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি গোলাপ গ্রামের স্থানীয় প্রভাবশালী। দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে হেলেনাকে টাকা-পয়সা দিয়ে হাত করে ইতিপূর্বে কয়েকবার আজমিনাকে ধর্ষণ করে গোলাপ। 

গত মঙ্গলবার রাতে আবারো হেলেনার সহযোগিতায় ধর্ষণের শিকার হন আজমিনা। গোলাপ বাড়ি থেকে বের হবার সময় ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে জুতাপেটা করেন আজমিনা। এরপরই ক্ষিপ্ত হয়ে আজমিনার মাথায় টিউবওয়েলের (লোহার) হাতল দিয়ে আঘাত করে গোলাপ। এ সময় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আজমিনা। চিৎকার দেয়ার আগেই তার মুখ ও গলায় চেপে ধরে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যান গোলাপ। একপর্যায়ে আজমিনা নিস্তেজ হয়ে পড়েন। তখন তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।

এ সময় হেলেনাকে ডেকে বিষয়টি জানান গোলাপ। দুইজন মিলে লাশ লুকানোর সময় সেটি দেখে ফেলেন মো. সোহাগ নামের এক ব্যক্তি। এদিকে সেহরির সময় হয়ে এলে তারা এতে লাশ লুকিয়ে ফেলতে ব্যর্থ হয়। পরে হেলেনার সহযোগিতায় রাতেই বাড়ির পাশে খড়খুটো দিয়ে আজমিনার মরদেহ ফেলে রেখে গোলাপ ও তার অন্য সহযোগীরা চলে যায়।

তিনজনেরই বিপদ হবে জানিয়ে সোহাগকে কিছু টাকা দিয়ে কয়েকদিন লুকিয়ে থাকার জন্য তাকে সুনামগঞ্জে পাঠিয়ে দেন গোলাপ ও হেলেনা। পুলিশ যাতে সোহাগকে সন্দেহ করে, এজন্য ঘটনাস্থলে সোহাগের ব্যবহৃত একটি শার্টও রেখে দেন তারা। 

র‍্যাব প্রথমে সোহাগকে সুনামগঞ্জ শহর থেকে আটক করে। পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী অন্য দুজনকে আটক করা হয়। তবে গোলাপ র‍্যাবের কাছে বলেছেন, আজমিনার সাথে তার আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল। তিনি তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করেননি।

আজমিনা হত্যা রহস্য উদঘাটনের পর গতকাল শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) এসব তথ্য নিশ্চিত করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব-৯ সিলেট সিপিসি ৩ সুনামগঞ্জ ক্যাম্পের উপ-পরিচালক লে. কমান্ডার সিঞ্চন আহমেদ।

উল্লেখ্য, গত বুধবার সকালে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের জামবাগ জৈতাপুর গ্রামের কৃষক শাহনুর মিয়ার নিজ বাড়ির লাকড়ি রাখার মাচার নিচে গাছের ডালপালা ও পাতা দিয়ে ডাকা আজমিনার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় নিহতের শ্বশুর আমির হোসেন আমিরুল বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে বুধবার রাতে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার একদিন পরেই তথ্য-প্রমাণাদি সাপেক্ষে র‍্যাব তিনজনকে আটক করেন। তারা হলেন- জৈতাপুর গ্রামের নাজির হোসেনের ছেলে গোলাপ মিয়া (৩৬), আকরম আলীর ছেলে মো. সোহাগ (২২) ও আজমিনার শাশুড়ি হেলেনা বেগম (৪৫)। 

র‍্যাবের সুনামগঞ্জ কোম্পানির (সিপিসি-৩) অধিনায়ক সিঞ্চন আহমেদ, র‍্যাব কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ রাসেলের নেতৃত্ব অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের তাহিরপুর থানায় সোপর্দ করেছে র‌্যাব। পুলিশ জানায়, এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। মঙ্গলবার গভীর রাতে টিউবওয়েলের হাতল দিয়ে আজমিনার মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে হত্যা করে ঘাতকরা। এরপর খড়খুটো দিয়ে লাশ ঢেকে রেখে যায়। আজমিনা হত্যায় আসামিরা তাদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছেন।

তাহিরপুর থানার ওসি মো. আব্দুল লতিফ তরফদার জানান, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত জব্দ করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh