জমি অধিগ্রহণ: মিথ্যা তথ্যে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২১, ০২:৩৪ পিএম | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২১, ০২:৩৫ পিএম

ছবি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ছবি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেলওয়ের জমি অধিগ্রহণে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে কসবা উপজেলার বায়েক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন বেলালের বিরুদ্ধে। 

জেলা প্রশাসকের কাছে গত সোমবার (১৯ এপ্রিল) কয়েকজন ভুক্তভোগী তার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। যা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে এলাকায়। 

রেলওয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশে অধিগ্রহণকৃত অন্য জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত অংশের ডাবল লাইন নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালে কসবা উপজেলার বালিয়াহুড়া মৌজার ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ৩নং খতিয়ানের ২নং দাগের প্রায় দুই একর জমির মালিকানা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এই জমিটি সাবেক চেয়ারম্যান বিল্লাল তার বাবা ফজলু মিয়ার মালিকানা দাবি করে এর ক্ষতিপূরণ বাবদ এক কোটি ৭৪ লাখ ১৮ হাজার ৪২২ টাকা গ্রহণ করেন।

এছাড়া অধিগ্রহণকৃত ফজলু মিয়ার মালিকানাধীন ৯৩ নং দাগের জমিতে কোনো গাছপালা ছিলো না বলে অভিযোগ করা হয়। কিন্তু ওই জমিতে আকাশি জাতের ১৫৭০টি ছোট গাছ (১৫৭০ ঘনফুট), মাঝারি ধরণের ২৮০টি (২৮০ ঘনফুট), বড় আকৃতির ৫০টি গাছ (১২৫০ ঘনফুট) ও ১০০টি কাঁঠাল গাছ (২৫০০ ঘনফুট) দেখিয়ে প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন তিনি। 


বায়েক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুন্নবী আজমল বলেন, বিল্লাল চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিটি তার বাবার নামে খারিজ করেন। এরপর রেলওয়ে ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে্ন। অপর জমটিতে গাছের কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও গাছের ক্ষতিপূরণ বাবদ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। 

বায়েক ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আল মামুন ভূইয়া বলেন, অধিগ্রহণকৃত জমিটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। সরকারি সম্পদ অপব্যবহার করে বিল্লাল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। আমি এ বিষয়ে সুষ্ঠ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই।

বায়েক ইউনিয়নের কইখলা গ্রামের বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী নূরে আলম ভূইয়া সাকিব বলেন, যে জমির অধিগ্রহণের টাকা নিয়েছেন বিল্লাল, সেটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। এছাড়া আমার জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি তুলে নিয়ে রেলওয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেছেন তিনি।

মো. সোহেল আলম নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের পাশে থাকা তার জমি অধিগ্রহণ করে রেলওয়ে। ক্ষতিপূরণ বাবদ তার সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা আসে। কিন্তু বিল্লাল তার কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করে বলেন, এই টাকা না দিলে ক্ষতিপূরণের চেকটি বাতিল হয়ে যাবে। পরবর্তীতে বিল্লালকে আড়াই লাখ টাকা দেন। এ নিয়ে বিল্লালের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তিনি। 

সাবেক চেয়ারম্যান বিল্লাল বলেন, এই সম্পদগুলো আমার দাদার আমলের। আমার বাবার নামে রেকর্ড রয়েছে। ৮৫ শতাংশ জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত নেয়া হয়েছিল। ১৯৮৮-৮৯ সালের বান্দোবস্ত অনুপাতে ওনার নামেই রেকর্ড হয়েছে। এই রেকর্ডভুক্ত জমি থেকেই রেলওয়ে অধিগ্রহণ করেছে। তিনটি সংস্থা জমি দেখে বিল দিয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, জমি অধিগ্রহণ বা গাছের ক্ষতিপূরণের কোনো টাকা আমি পাইনি। আমার বাবা পেয়েছেন। সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। রেলেওয়ের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। প্রত্যেকে নিজ নিজ বিল তুলেছেন। আমাকে রাজনৈতিভাবে হেয় করার জন্য এই অভিযোগ তোলা হয়েছে।

জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা অঞ্জন দাস বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। এটি ২০১৬ সালে অধিগ্রহণ করা। তাছাড়া জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেয়ার বিষয়টিও আমার জানা নেই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন স্থানে আমাদের ১২৪৫ একর জমি আছে। কসবার বালিয়াহুড়া মৌজাতেও জমি আছে। অধিগ্রহণকৃত জমির দাগ নম্বরসহ অন্যান্য তথ্যগুলো চিঠি দিয়ে রেলওয়েকে জানিয়ে দেয়া হবে। যারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমির বিপরীতে অধিগ্রহণের টাকা নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh