খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২১, ০৩:৪১ পিএম
করোনায় মৃতদের গোসল করাতে গিয়ে বিড়াম্বনায় পড়ছেন দাফন টিমের সদস্যরা। ছবি: খুলনা প্রতিনিধি
করোনাভাইরাস মহামারি রোধে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও রোগীদের চিকিৎসাসহ সরকারি-বেসরকারি ভাবে নানা পদক্ষেপ থাকলেও খুলনায় এ রোগে মৃতদের গোসলের জন্য নেই কোনো স্থান বা ব্যবস্থা। ফলে করোনায় মৃতদের গোসল করাতে নানা প্রতিকূলতা ও বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।
এমনকি খুলনা করোনা হাসপাতাল চত্বরেও গোসল করাতে গিয়ে হেনস্থার মুখে পড়ছেন দাফন টিমের সদস্যরা।
এমন পরিস্থিতিতে করোনা হাসপাতাল চত্বরে অস্থায়ী শেড নির্মাণ করে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের গোসলের ব্যবস্থাসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছেন খুলনায় স্বেচ্ছাসেবীর ভিত্তিতে গড়ে ওঠা (দক্ষিণ ডুমুরিয়া ইমাম ও উলামা পরিষদ কর্তৃক গঠিত) দাফন টিমের সদস্যরা।
গত রবিবার (২৫ এপ্রিল) খুলনা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন তারা।
দাবিগুলো হচ্ছে- খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের যেকোনো স্থানে অস্থায়ী ভিত্তিতে একটি গোসল করানোর শেড নির্মাণ, দাফন টিমের সদস্যদের যাতায়াতের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্য উপকরণ নিয়মিত সরবরাহ, দাফনে যাতায়াতের জন্য সড়কে পুলিশ হয়রানি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে টিমের সদস্যদের আইডি কার্ড (পরিচয়পত্র) প্রদান, দাফন টিমের অভাবগ্রস্থ অসচ্ছল সদস্যদের প্রণোদনা ও আর্থিক সহায়তা প্রদান, স্বাস্থ্য উপকরণসহ ব্যবহারের মালামাল সংরক্ষণের জন্য একটি অফিসের বন্দোবস্ত করা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আপদকালীন ও বিভিন্ন উৎসবকালীন সময়ে ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণে দাফন টিমের সহায়তা গ্রহণ।
এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়রকেও অবহিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে তারা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, করোনায় মৃত ব্যক্তিদের গোসল ও দাফন নিয়ে তৈরি হয়েছে ভীতি ও আতংকের পরিবেশ। ভয়ে লাশের কাছে যেতে চান না নিজ সন্তান, আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা। প্রথম দিকের চরম মহাসংকটে ছেলে পিতার মরদেহ গ্রহণ করেনি।
এ মহাসংকটের শুরুতে ২০২০ সালের ১২ মে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় কিছু সাহসী মানবিক, মুফতী, মুহাদ্দীস, আলেম, হাফেজ ও কলেজের ছাত্রদের নিয়ে একটি দাফন টিম গঠন করা হয়। দাফন টিম খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে ৫৮টি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করেছেন। কোনো প্রকার সরকারি সাহায্য ছাড়াই রাত-দিন নানা প্রতিকূলতা ও বাধার মুখে কাজটি করছেন তারা।
দাফন টিমের সমন্বয়কারী হাফেজ মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আমরা একাধিকবার করোনায় মৃতদের গোসল করাতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। খুলনা মেডিকেলের স্টাফ ও আনসার সদস্যদের দ্বারা চরম হেনস্তার শিকার হয়েছি। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোথাও গোসল করাতে দিতে চায় না। পানির লাইনও বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। কোনো উপায় না পেয়ে মৃতের অভিভাবকরা বোতলজাত পানি (মিনারেল ওয়াটার) কিনে দিলে তা দিয়েই গোসল সম্পন্ন করে দাফন শেষ করতে হয়েছে। এর আগে দৌলতপুরেও মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাতে গেলে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বাঁধা দেয়। এ কারণে একটি নির্দিষ্ট জায়গা হলে ভালো হয়।
টিমের সদস্য সচিব মুফতী মো. ফয়জুল করীম বলেন, মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে গঠিত দাফন টিম অদ্যাবধি খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে ৫৮টি মরদেহ দাফন করেছে। কোনো প্রকার সরকারি সাহায্য ছাড়াই রাত-দিনে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও অব্যাহতভাবে এ কাজটি আমরা করে যাচ্ছি। এ কাজ করতে গিয়ে খুলনা পেরিয়ে যশোর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, পিরোজপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও যেতে হয়। আমাদের দ্রুত ও নিরাপদে যাতায়াতের জন্য ভাল কোনো পরিবহন ব্যবস্থা নেই। এ অবস্থায় উল্লিখিত দাবিগুলো দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, করোনায় মৃতদের গোসলের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি শেড নির্মাণের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। এছাড়া শহরে দাফন টিমের যাতায়াতের ব্যবস্থা ও তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপকরণও সরবরাহ করা হবে।