এইচ আলিম
প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২১, ১০:১৫ এএম
মরিচ সংগ্রহ করে শুকিয়ে নেয়ার কাজ করছে কৃষক
বগুড়ায় শুকনা মরিচে স্বপ্ন দেখছেন যমুনা নদী এলাকার চরের চাষিরা। লকডাউনের কারণে শ্রমিক সংকট থাকায় পরিবারের সদস্যরা মিলিয়ে ক্ষেত থেকে মরিচ সংগ্রহ করে শুকিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন তারা। কৃষি অফিস বলছে, শীতে সবজিতে ভালো ফলনের পর এবার শুকনা মরিচে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন চাষি। উঠোন থেকে শুরু করে জমি, খোলা মাঠ, খোলা স্থানে যে যেখানে পারছেন মরিচ শুকিয়ে হাটে বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মরিচ চাষির উঠান এখন লাল মরিচে রঙিন হয়ে আছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ফলন পেতে যাচ্ছে মরিচচাষি।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২০ মৌসুমে বগুড়ায় মোট মরিচ চাষ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় প্রায় ৭ হাজার হেক্টর। এর বিপরীতে ৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়। ফলন হিসেবে ১৭ হাজার ৫১৫ টন ফলন ধরা হলেও এই ফলন বেড়ে যাবে। মরিচের আবহাওয়া পক্ষে থাকায় ভালো ফলন পাবে চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের ফলন হবে বাম্পার। বগুড়ায় যে পরিমাণ মরিচ চাষ ও উৎপাদন হয়ে থাকে তার সিংহ ভাগ হয়ে থাকে যমুনা নদীর চরে। যমুনা পাড়ের সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার চরে বেশি চাষ হয় মরিচ।
জানা যায়, সারাদেশে বগুড়ার মরিচের সুনাম রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় ভারত থেকে আমদানি করা মরিচকে বগুড়ার মরিচ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হয়। বগুড়ার চরাঞ্চলের মরিচের জুড়ি মেলাভার। তাই মসলা বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বগুড়া থেকে মরিচ কেনার জন্য ফড়িয়াদের নিয়োগ করেছে। তারা হাটে হাটে মরিচ সংগ্রহ কাজে ব্যস্ত।
এদিকে, বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলার যমুনা নদীর চর এলাকায় মরিচ শুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মরিচ চাষিরা। তবে কিছু কিছু এলাকায় মরিচ বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। সোনাতলা উপজেলার পাকুল্লা, আচারের পাড়া, সুজাইতপুর, সারিয়াকান্দি উপজেলার চন্দনবাইশা, তিতপরল, বোহাইল, যমুনা নদীর কয়েক কিলোমিটার বাঁধজুড়ে মরিচ শুকানো হচ্ছে। এ ছাড়া নদীর পূর্বপাড়ে জেগে ওঠা চরের কৃষকদের কাছে ধানের পরই মরিচ অর্থকরী ফসল হয়ে উঠেছে।
এদিকে লকডাউনের কারণে মরিচ চাষিরা শ্রমিক সংকটে পড়ায় পরিবারের সদস্যরা মিলিয়ে ক্ষেত থেকে সর্বশেষ মরিচ সংগ্রহ করে শুকিয়ে নেওয়ার কাজ করছে। বগুড়া শহরের পাইকারি বাজার রাজাবাজার ও ফতেহ আলী বাজার ঘুরে জানা যায়, খোলা বাজারে ৪০০ টাকা কেজি শুকনা মরিচ আর পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার মরিচ চাষিরা জানান, বগুড়ায় সারাবছর মরিচের চাষ হলেও অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত যে মরিচ চাষ হয়ে থকে তা শুকিয়ে বাছাই করা হয়। বছরের অন্য মাসে যে মরিচ উৎপাদন হয় তা সাধারণত কাঁচা মরিচ হিসেবে বাজারজাত হয়ে থাকে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলার চরের এই মরিচ চাষি জানান, তিনি প্রায় ১৩ বিঘা জমিতে হাইব্রিড মরিচের চাষ করেছেন। চাষের পর জমি থেকে কাঁচা মরিচ বিক্রির পর এখন শুকনা মরিচ করে শুকিয়ে নিচ্ছেন। মরিচ তোলা শেষ হলে জমিতে পাটের বীজ বপন করবেন।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. দুলাল হোসেন জানান, বগুড়ায় বরাবরই মরিচের ভালো ফলন হয়ে থাকে। চাষিরা প্রথমে কাঁচা আকারে বিক্রি করে খরচ তুলে নেয়। পরে শুকনা আকারে বিক্রি করে মরিচের পুরোটায় আয় করেন। এখানে লাল মরিচ চাষ ও বাজারজাত হয় তা অন্যান্য জেলার চেয়ে মানে ভালো। সে কারণে এখানকার মরিচের ভালো দাম পায় কৃষক। চলতি বছর ১৭ হাজার ১৬০ টন ফলন ধরা হলেও এর বেশি ফলন পাওয়া যাবে। মাঠে এখনো ফলন রয়েছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, উপজেলায় ১ হাজার ৭৫০ হেক্টরে হাইব্রিড মরিচ এবং ১ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় উফসি মরিচ মিলিয়ে মোট ৩ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা সদরের মরিচ কৃষক শাহাদত হোসেন জানান, এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। বিঘাপ্রতি তার উৎপাদন খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। বিঘাতে ফলন হয়েছে ৬ মণ শুকনা মরিচ। বিঘাতে সে খরচ বাদে ১০ হাজার টাকা আয় করতে পারবে।