জুনায়েদ আহম্মেদ
প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২১, ১০:২১ এএম
লক্ষ্মীপুরে তৈরি হচ্ছে ছোট-বড় নৌকা ও সমুদ্রে চলাচলকারী ফিশিং ট্রলার।
লক্ষ্মীপুরে তৈরি হচ্ছে সব ধরনের ছোট-বড় নৌকা ও সমুদ্রে চলাচলকারী ফিশিং ট্রলার। এ পেশায় নিয়োজিত কারিগরদের কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ না থাকলেও শুধু অভিজ্ঞতা দিয়েই বছরে প্রায় চারশত ট্রলার তৈরি করেছেন তারা। এতে করে এ অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানালেন, বছরে এ খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা।
জানা যায়, সমুদ্রে মাছ ধরার ফিশিং ট্রলারগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা হলেও বর্তমানে লক্ষ্মীপুরেই তৈরি হচ্ছে এ যানটি। এতে করে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি এ অঞ্চলের সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। এ অঞ্চলে সম্ভাবনাময় এ শিল্পটি বিকশিত হলে আরও কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এদিকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার টাংকি বাজার, চরগাজী, আসলপাড়া, আলেকজান্ডার মাছঘাট, কমলনগর উপজেলার মতিরহাট, ভাঙ্গাপুল, জারিরদোনা, লুধুয়া, ফলকন, পাটোয়ারির হাট, সদর উপজেলার মজুচৌধুরীর হাট, বেড়ির মাথা ও রায়পুর উপজেলার চরবংশী, হাজীমারাসহ জেলার প্রায় ১৩টি স্থানে ছোট-বড় নৌকা ও সমুদ্রে চলাচলকারী ফিশিং ট্রলার তৈরি করেন কারিগররা।
রামগতি উপজেলার চররমিজ এলাকার হোসেন মিস্ত্রি জানান, কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ট্রলার ও নৌকা তৈরির মৌসুম। শুকনো মৌসুম ছাড়া নৌকা তৈরি করা যায় না। আবার বর্ষা মৌসুম হচ্ছে মাছ ধরার মৌসুম। তখন নৌকা তৈরি বা মেরামত করা হয় না।
স্থানীয় কারিগররা জানায়, নৌকা ও ট্রলার বানানোর কাজ প্রথমে শুরু করেন কাঠ মিস্ত্রি। কাঠ মিস্ত্রি গলুই, চান্দিনা, ছই, রান্নাঘর, ওয়াশরুম তৈরি করেন। কাঠের জোড়ার ফাঁকে সুতার সলতে ঢুকানো বা ‘গাইনির কাজ’ করেন আরেক দল। গাইনির কাজের পর কেরোসিন তেলের সঙ্গে ধূপ ও পানি মিশিয়ে শুরু হয় পুটিংয়ের কাজ। পরে ট্রলারের নিচের অংশে আলকাতরা লাগাতে হয়। এরপর ইঞ্জিনের সঙ্গে লাগানো হয় পেছনের পাখা। সবশেষে করা হয় রঙের কাজ।
ট্রলার তৈরির কারিগর বেলায়েত মাঝি জানান, ৩০ বছর ধরে এ পেশায় কাজ করছেন তিনি।
আগে ভোলায় কাজ করলেও এখন লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ট্রলারের কারিগর হিসেবে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকা মজুরি পেয়ে থাকি। ট্রলার শ্রমিক ও জেলেরা জানালেন, সমুদ্রের ট্রলারগুলো দ্রুত গতিসম্পন্ন হয়। উত্তাল সমুদ্রের মাঝে ঘণ্টায় ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার এবং অনুকূলে ঘণ্টায় ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে এটি।
লক্ষ্মীপুরের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন জানালেন, জেলায় অনুমোদিত সরকারি বা বেসরকারি কোন ডকইয়ার্ড নেই। লক্ষ্মীপুরে স্থানীয়দের উদ্যোগেই ট্রলারগুলো তৈরি হচ্ছে। লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে প্রায় ৩ হাজার অনুমোদিত ফিশিং ট্রলার রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এ শিল্পের কারিগরদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনলে সম্ভাবনাময় এ শিল্পে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।