নদীর লবণাক্ততা কমতে শুরু করেছে

রহিম রেজা

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২১, ১১:০৭ এএম

সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানির লবণাক্ততা কমতে শুরু করেছে

সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানির লবণাক্ততা কমতে শুরু করেছে

হঠাৎ করে লবণাক্ত হয়ে যাওয়া ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানির লবণাক্ততা কমতে শুরু করেছে। বৃষ্টি না হলেও আগামী পূর্ণিমায় জোয়ারের পানিতে পুরোপুরি স্বাভাবিক মিষ্টি স্বাদের পানিতে রূপ নেবে সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানি এরকম প্রত্যাশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এপ্রিল মাসের শুরু থেকে হঠাৎ করেই সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর ওপর নির্ভরশীল মানুষরা পানি লবণাক্ততা অনুভব করতে শুরু করেন। নদী তীরবর্তী মানুষ দৈনন্দিন কাজে এ নদীর পানি ব্যবহার করলেও এখন তা স্বাভাবিকভাবে সম্ভব হচ্ছে না। আর মিঠাপানির এ দুটি নদীতে বর্তমানে যে কিছুটা লবণাক্ততা রয়েছে তা নিশ্চিত করেছেন পরিবেশবিদরাও। বিশেষজ্ঞদের মতে শুষ্ক মৌসুমে উজানের পানি কম প্রবাহিত হওয়া এবং বৃষ্টিপাত না হওয়া, দূষণসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই সুগন্ধা ও বিষখালী মতো মিঠা নদীর পানিও এখন লবণাক্ত হয়ে উঠেছিল। এতে করে জীব বৈচিত্র্যের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়বে, ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কাও রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফজলুল হক মিয়া জানান, গত পূর্ণিমার জোয়ারে সাগরের লবণ পানি ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে পানির চাপ কম থাকায় প্রবেশ করায় পানি লবণাক্ত হয়ে যায়। ইতিপূর্বে পানিতে কিছুটা লবণাক্ততা ছিল কিন্তু তা ছিল ক্ষতিসীমার নিচে। নদীর পানি লবণাক্ত হলেও পার্শ্ববর্তী পুকুর, খাল ও ডোবার পানি স্বাভাবিক রয়েছে। সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানির লবণাক্ততা কমে স্বাভাবিক না হলে তা দিয়ে সেচ কাজ না করার অনুরোধ জানান তিনি। পুকুর, খাল ও ডোবার স্বাভাবিক পানি দ্বারা সেচসহ অন্যান্য কাজ করার পরামর্শ দেন। তবে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, এতে আতংকিত হবার কিছুই নেই। 

স্থানীয় চায়ের দোকানি সোহেল রানা জানান, প্রথমে নদীর পানি লবণাক্ত হয়ে ওঠার কথা ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের কাছ থেকে শুনেছেন। পরে তিনি নিজেও মুখে নিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হন। 

স্থানীয় বাসিন্দা জসিম জানান, প্রথমে ধারণা করা হচ্ছিল শহরের ভেতর থেকে বয়ে আসা বাসন্ডা খালের কাঠপট্টি খালের মুখের পাশের জায়গাতে নদীর পানি লবণাক্ত। তাই এটা স্বাভাবিক ধরে নিয়েছিল অনেকে। পরে বিভিন্নস্থান থেকে নদীর পানি লবণাক্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পরে। এমনকি এক চায়ের দোকানি একদিন নদী থেকে পানি এনে চা বানাতে গিয়ে তাতে লবণের উপস্থিতি পেয়ে ফেলে দিতে বাধ্য হন। 

স্থানীয় যুবকরা বলছেন, শুধু পানি লবণই নয়, গোসল করার পর চুলগুলো কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে, যা আগে হয়নি। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন ও বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী রফিকুল আলম জানান, ২০১০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তারা একটি সার্ভে করেছিলেন, যেখানে দেখতে পান শুষ্ক মৌসুমে সাগরের পানি তেঁতুলিয়া নদী পর্যন্ত চলে আসছে। তখন পরিবেশ অধিদপ্তরসহ দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে বিষয়টি নিয়ে ভাবার জন্য বলা হয়েছিল। 

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বেশ কিছু মাধ্যমে শুনতে পাচ্ছি বরিশালের কীর্তনখোলা, ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানিতে লবণাক্ততা আসছে। এ জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে কীর্তনখোলা নদীর পানি পরীক্ষা করতে হবে এবং কার্যকর পদক্ষেপ যেটুকু নেওয়া প্রয়োজন তা নিতে হবে। তা না হলে আমাদের জলজ সম্পদের ক্ষতি হবে, পাশাপাশি মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে এবং জীব-বৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পরবে। প্রতি মাসেই নদীর পানি পরীক্ষা করা হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারি বায়োকেমিস্ট মো. মুনতাসীর রহমান। 

তিনি বলেন, পরীক্ষার হিসেব অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাসে কীর্তনখোলা, সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানির অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে। এটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়, তাই নিয়মিত মনিটরিং রাখা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে অধিকতর বিশ্লেষণ করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh