মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২১, ১১:৫৯ এএম

হেফাজতে ইসলামের আলোচিত নেতা মাওলানা মামুনুল হক

হেফাজতে ইসলামের আলোচিত নেতা মাওলানা মামুনুল হক

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের আলোচিত নেতা মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার বাদী মামুনুল হকের দাবি করা সেই দ্বিতীয় স্ত্রী।

শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) সকালে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, শুক্রবার সকালে থানায় এসে দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা নারী মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি লিপিবদ্ধ হয়। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।

মামলার এজাহারে ওই নারী বলেছেন, আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। আমাকে গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরির নাম করে নিয়ে গিয়ে তার পরিচিত বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্টে রাত্রিযাপন ও বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তার যৌন লালসা চরিতার্থ করে। আমি বিয়ের কথা বললে সে আমাকে ‘করবো-করছি’ বলে নানান অজুহাতে কালক্ষেপণ করতে থাকে।

গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানাধীন রয়েল রিসোর্টে ওই নারীসহ মামুনুল হককে আটক করে স্থানীয় লোকজন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হলে ঝর্ণাকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে দাবি করেন মামুনুল।

এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মামলার এজাহারে ওই নারী বলেছেন, সর্বশেষ গত ৩ এপ্রিল আমাকে ঘোরাঘুরির কথা বলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ রয়েল রিসোর্টে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অবস্থানকালে স্থানীয় জনগণ আকস্মিকভাবে আটক করে এবং আমাদের (মামুনুল হক ও আমার) পরিচয় জানতে চায়। আমরা কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় স্থানীয় জনতার রোষানলে পড়ি। পরবর্তীতে মামুনুল হকের অনুসারীরা রিসোর্টে হামলা করে আমাদের নিয়ে যায়।

এজাহারে তিনি বলেন, এই ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠলে মামুনুল হক আমাকে আমার নর্থ সার্কুলার রোডের ভাড়া বাসায় যেতে না দিয়ে তার পরিচিত একজনের বাসায় অবৈধভাবে জোরপূর্বক আটকে রাখে। এ সময় আমি আমার আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। একপর্যায়ে সুকৌশলে আমার বড় ছেলে আব্দুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করে আমার দুরবস্থার কথা জানাই এবং আমাকে এই বন্দিদশা থেকে উদ্ধারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে বলি। পরবর্তীতে ডিবি পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে বাবার জিম্মায় দেয়।

মামুনুল হকের সাথে পরিচয়ের বর্ণনা দিয়ে ওই নারী এজাহারে বলেন, আমার সাবেক স্বামী শহীদুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে ২০০৫ সালে মামুনুলের সাথে আমার পরিচয় হয়। মামুনুল হকের সাথে পরিচয়ের আগে আমাদের দাম্পত্য জীবন অত্যন্ত সুখে-শান্তিতে অতিবাহিত হচ্ছিল। স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে আমাদের বাসায় মামুনুল হকের অবাধ যাতায়াত থাকায় পরিচয়ের শুরু থেকেই আমার ওপর তার লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। যার ফলে আমাদের ছোটখাটো সাংসারিক মতানৈক্যের মধ্যে সে সু-কৌশলে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে থাকে। মামুনুল হকের কু-মন্ত্রণায় আমাদের দাম্পত্য জীবন চরম বিষিয়ে ওঠে। সাংসারিক এই টানাপড়েনের মধ্যে মামুনুল হকের পরামর্শে ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।

এজাহারে বলা হয়েছে, বিচ্ছেদের পর আমি পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অসহায় হয়ে পড়ি। আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক আমাকে সহযোগিতার নাম করে কৌশলে ঢাকায় আসার জন্য আমাকে প্ররোচিত করে। আমি একজন আলেমকে ভরসা করে সরল বিশ্বাসে তার সাথে ঢাকায় চলে আসি। ঢাকায় আসার পর শুরুতে আমাকে তার পরিচিত বিভিন্ন অনুসারীদের বাসায় রাখে এবং নানানভাবে আকার ইঙ্গিতে কুপ্রস্তাব দিতে থাকে। একপর্যায়ে আমার পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তার প্রলোভনে পা দিতে বাধ্য হই। এরই ধারাবাহিকতায় তার পরামর্শে আমি কলাবাগানের নর্থ সার্কুলার রোডের একটি বাসায় সাবলেট ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করি এবং তার ঠিক করে দেয়া একটি বিউটি পার্লারে কাজ শিখতে থাকি।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh