সিসি ক্যামেরার আওতায় রাজশাহী নগরী

এম ওবাইদুল্লাহ

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২১, ১২:১৪ পিএম

রাজশাহী মহানগরী এখন সিসি ক্যামেরার আওতায়

রাজশাহী মহানগরী এখন সিসি ক্যামেরার আওতায়

রাজশাহী মহানগরী এখন সিসি ক্যামেরার আওতায়। নগরীজুড়ে লাগানো হয়েছে তিনশ’ ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। ফলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সহজেই অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি)। রাজশাহীর কাটাখালীতে যে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছেন, সেই দৃশ্যও ধরা পড়েছে সিসি ক্যামেরায়। দুর্ঘটনার বিষয়টি তদন্তে এখন সুফল পাচ্ছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, রাজশাহী নগরজুড়ে লাগানো হয়েছে ৩০০ সিসি ক্যামেরা। এতে ধরা পড়ছে গুরুত্বপূর্ণ নানা ঘটনা। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে দ্রুত। এমন সুফল পাবার আশা থেকেই নগরজুড়ে সিসি ক্যামেরা বসিয়েছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি)। আরও ২০০ ক্যামেরা বসানোর প্রক্রিয়া চলছে। এর আগে ২০১৭ সালে নগরীতে ৬৫টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছিল সিটি করপোরেশন। জনগুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ১৭ পয়েন্টে বসানো হয়েছিল এসব ক্যামেরা। খরচ হয়েছিল ৬৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কিছুদিনের মধ্যেই বেশিরভাগ সিসি ক্যামেরা অকেজো হয়ে পড়ে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে আরএমপির কমিশনার হয়ে আসেন আবু কালাম সিদ্দিক। এরপর তিনি নগরীর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করেন। এরই অংশ হিসেবে নগরজুড়ে ৫০০টি সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন পুলিশ কমিশনার। এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৬০ লাখ টাকা। যেসব ক্যামেরা বসানো হয়েছে সেগুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে আরএমপির সদর দপ্তর থেকে। নগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ও সহকারী কমিশনার উৎপল কুমার চৌধুরীসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা সিসি ক্যামেরাগুলো মনিটরিং করে থাকেন।

আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক গেল স্বাধীনতা দিবসের আগেই নগরীতে ৫০০ সিসি ক্যামেরা বসানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেটি অবশ্য হয়নি নগরের বিভিন্ন সড়কে উন্নয়ন কাজ চলমান থাকার কারণে। তবে দ্রুতই বাকি ক্যামেরাগুলো বসানো যাবে বলে আশা করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

সহকারী কমিশনার উৎপল কুমার চৌধুরী বলেন, নগরীর প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ৩০০ সিসি ক্যামেরা বসানো হয়ে গেছে; কিন্তু শহরের বিভিন্ন স্থানে সড়কে কাজ চলছে। খুঁটিগুলো তুলে অন্যস্থানে বসাতে হচ্ছে। এ কারণে ২০০ ক্যামেরা লাগানো সম্ভব হয়নি। পর্যায়ক্রমে দ্রুতই সবগুলো ক্যামেরা বসানো হবে। তবে এখনই ৩০০ ক্যামেরার সুফল পাচ্ছেন তারা। গত ২১ মার্চ দুপুরে শহরের লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া এলাকায় মেহেদী হাসান (২৮) নামে এক ব্যক্তি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। তার ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার ওষুধ খোয়া যায়। সেই দৃশ্য ধরা পড়ে পুলিশের সিসি ক্যামেরায়। পরে ফুটেজ দেখেই ক্লু-লেস এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এদিকে, গত ২৬ মার্চ রাজশাহীতে বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে ১৭ জন নিহত হবার দৃশ্যটি ধরা পড়েছে আরএমপির কাটাখালী থানার সিসি ক্যামেরায়। কোন গাড়ি কীভাবে যাচ্ছিল, মাইক্রোবাসে কখন আগুন লেগেছে, দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা কী করছিলেন, ফায়ার সার্ভিস কখন এসেছে, কতক্ষণ পর আগুন নেভানো গেছে- তার সবই রেকর্ড হয়েছে সিসি ক্যামেরায়। এখন সড়ক দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করতে বার বার দেখা হয়েছে ক্যামেরার সেই ফুটেজ। দুর্ঘটনার কারণ তদন্তের জন্য গঠিত কমিটির সদস্যরাও ভীষণ উপকৃত হয়েছেন ফুটেজ পেয়ে।

বিষয়টি স্বীকার করে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমাদের তদন্তকে একেবারেই সহজ করে দিয়েছিল। পুলিশকে ধন্যবাদ, নগরজুড়ে এভাবে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার জন্য। এতে শহরে অপরাধও কমবে।

এ বিষয়ে আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে শুধু অপরাধই কমবে না; আরও নানারকম সুবিধা পাওয়া যাবে। যেমন কোথাও যানজট দেখা দিলে আরএমপি সদর দপ্তর থেকেই দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কাছে নির্দেশনা পাঠানো যাচ্ছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh