বিদেশ ফেরত অর্ধেকই বেকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২১, ০৮:৫৫ পিএম

বছর পেরিয়ে গেলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ফেরত আসা প্রবাসী কর্মীদের ৪৭ শতাংশ এখনো কাজের সন্ধান পায়নি। বিদেশ ফেরতদের ৯৮ শতাংশ এখনো তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম পরিচালিত ‘বিদেশফেরতদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি অন্বেষণ এবং বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) অনলাইনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান প্রতিবেদনটি তুলে ধরে জানান, বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ শুরুর পর গত বছরের মার্চ-এপ্রিলে ফেরত আসা প্রবাসী কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ওই বছরের ২২ মে একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ব্র্যাক। একবছর পর পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হয়েছে, সেটা জানতেই ফের জরিপ করা হয়।

ব্র্যাক জানায়, গুণগত এবং পরিমাণগত উভয় পদ্ধতিতেই দেশের সাতটি বিভাগের অভিবাসনপ্রবণ ৩০ জেলায় এ বছরের মার্চ ও এপ্রিলে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। গতবছর যাদের সঙ্গে কথা বলেছিল ব্র্যাক, তারাসহ এবার মোট একহাজার ৩৬০ জন বিদেশ ফেরত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে ব্র্যাক। এদের মধ্যে ২০৭ জন ইতোমধ্যেই বিদেশে চলে গেছেন। একটা বড় অংশকেই ফোনে পাওয়া যায়নি। অনেকেই তথ্য দিতে রাজি হননি। তবে ৪১৭ জন বিদেশফেরত বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। তাদের উত্তরের ভিত্তিতেই জরিপ প্রতিবেদনটি করা।

উত্তরতাদাতের বেশিরভাগই সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরে এসেছেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৯৫.৬৮ শতাংশ পুরুষ এবং এবং ৪.৩২ শতাংশ নারী। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই গ্রামে বাস করছেন (৮৮.০১%) এবং বাকিরা শহর এলাকায় বসবাস করছেন (১১.৯৯%)।

জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, গতবছর বিদেশ ফেরতদের ৮৭ শতাংশ বলেছিলেন—তাদের কোনো আয়ের উৎস নেই। এবার দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের প্রায় ৫৩ শতাংশ (৫২.৭৭) কোনো না কোনো কাজে নিজেকে যুক্ত করতে পেরেছেন। এর মধ্যে ২৪ দশমিক ১৯ শতাংশ কৃষি কাজে যুক্ত হয়েছেন, ২২ দশকি ৩৩ শতাংশ দিনমজুরি বা এই ধরনের কোনো কাজে যুক্ত হয়েছেন এবং ৩৫.৩৫ শতাংশ ছোট কোনো ব্যবসা শুরু করেছেন। এছাড়া ১৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ অন্য কোনো না কোনো কাজ করছেন। তবে উত্তরদাতাদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ (৪৭ দশমিক ২২ শতাংশ) বিদেশফেরত ব্যক্তিই গত একবছরেও কোনো প্রকার কাজ জোগাড় করতে পারেননি। তারা তাদের দৈনন্দিন খরচ চালাতে নিজ পরিবারের আয় বা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার নিয়ে চলছেন।

উত্তরদাতাদের ২৮ শতাংশ বলেছেন, তারা ইতোমধ্যেই ধারদেনায় জর্জরিত হয়েছেন এবং ৭২ শতাংশ বলেছেন, তারা ফের বিদেশে চলে যেতে চান।

প্রতিবেদনে প্রবাসীদের বর্তমান মানসিক অবস্থাও উঠে আসে। গতবছর অংশগ্রহণকারীদের ৭৪ শতাংশ জানিয়েছিলেন, তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও ভীতির মধ্যে রয়েছেন। কিন্তু এবার ৯৮ শতাংশ উত্তরদাতাই বলেছেন, অপর্যাপ্ত আয়, বেকারত্ব, পুনরায় বিদেশ যেতে না পারা, পারিবারিক চাপ ইত্যাদি কারণে চরম উদ্বিগ্নতা এবং মানসিক চাপের মধ্যে আছেন।

ফেরত আসা প্রবাসীরা বলছেন, ৭১ শতাংশই প্রতিবেশী বা আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে সহযোগিতামূলক আচরণ পেয়েছেন। তবে ২৯ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা তাদের প্রতিবেশীর কাছ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতামূলক আচরণ পাননি।

ব্র্যাক জানায়, করোনা মহামারি শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পযর্ন্ত প্রায় পাঁচ লাখ প্রবাসী দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে ফিরেছেন আতঙ্কে, অনেক ফিরেছেন চাকরি হারিয়ে, কেউ ফিরেছেন স্থায়ীভাবে, আবার কেউবা কেবল ছুটি নিয়ে দেশে এসেছিলেন। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। ১৯ শতাশ বলেছেন, তারা চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। ১৬ শতাংশ বলেছেন, তারা ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। ১২ শতাংশ বলেছেন, তারা একেবারেই চলে এসেছেন এবং ২ শতাংশ অসুস্থতার কারণে ফিরেছেন।

বর্তমানে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি বিদেশে আছেন। কোভিডের মধ্যেও ২০২০ সালে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। এ বছরের প্রথম তিন মাসে দেড়লাখেরও বেশি বাংলাদেশি বিদেশে কাজ নিয়ে গেছেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh