কোন দিকে যাচ্ছে গানের তরী?

জয় শিকদার

প্রকাশ: ০১ মে ২০২১, ১০:৪৪ এএম

ঐশী, শহীদুল্লাহ ফরায়েজী ও মনির খান

ঐশী, শহীদুল্লাহ ফরায়েজী ও মনির খান

করোনার কারণে দীর্ঘদিন স্থবির দেশের সংগীতাঙ্গন। কোনো স্টেজ শো নেই। শিল্পীদের একটি বড় অংশ আর্থিকভাবে বিপর্যয়ের মুখে। যারা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, লাইট, সাউন্ডসহ অন্যান্য কাজে লিপ্ত ছিলেন তারা এখন বেকার। 

সংগীতাঙ্গনে হতাশা বিরাজ করছে। স্থিতিশীল নেই গানের বাজার। দেশের সংগীতাঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া নিয়ে। 

কোন দিকে যাচ্ছে গানের তরী? এমন প্রশ্নের জবাবে গীতিকার শহীদুল্লাহ ফরায়েজী বলেন, আগে গানের সংখ্যা কম ছিল এখন সে তুলনায় অনেক বেশি। তখন রেডিও এবং ক্যাসেটনির্ভর ছিল গান শোনার উল্লেখযোগ্য মাধ্যম। এখন ডিজিটাল হয়েছে। সবাই ইউটিউবে গান শোনে। সঙ্গে সঙ্গে গান এখন দেখারও বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আগের গানের আবেদন বেশি ছিল। 

তিনি বলেন, এখন ডিজিটালি গান প্রকাশ হচ্ছে ঠিক আছে। তবে আমি মনে করি একটা নিয়মের মধ্যে সবকিছু চলা উচিত; কিন্তু কোনো নিয়মই দেখতে পাই না। 

বাংলা গানের ওপর করোনার প্রভাব নিয়ে শহীদুল্লাহ ফরায়েজী বলেন, করোনা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এরকম সমস্যা আগেও হয়েছে, ভাইরাসের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে, লাখ মানুষ মারাও গিয়েছে। আমরা করোনা থেকেও উত্তরণ পাব। বাংলা গান বিলুপ্ত হবে না। গান আরও জীবনমুখী হয় কিনা এটাই প্রশ্ন। তবে আমাদের মানবিক গান করতে হবে, নৈতিকতামুখী গান করতে হবে, মানুষকে সাহস যোগানোর গান করতে হবে, ভালোবাসার গান করতে হবে। 

যুগের প্রয়োজন অনুযায়ী গান লিখতে হবে। গানের প্রতি এখনকার শ্রোতাদের আকৃষ্ট হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আকৃষ্ট করতে পারছে না এমন কথা একেবারে বলা যাবে না, মাঝে মাঝে পারছে। আর্থ-সামাজিক অবস্থা, সংস্কৃতি, প্রযুক্তির কারণে অস্থিরতা সব কিছু নিয়েই আমাদের সমাজ। এর মধ্যেও গান মানুষ শুনবে। হয়তো সাময়িক সংকট রয়েছে। দুর্বল লেখা, শক্তিশালী লেখা যুগে যুগে ছিল এখনও আছে। কিন্তু মানুষ সব সময়ই ভালো কিছুই গ্রহণ করে।

বৈশ্বিক এই থাবায় বাংলা সংগীত সংকটকালীন মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করছে মন্তব্য করে মনির খান বলেন, বিশ্বে এখন দুঃসময় যাচ্ছে। হতাশার কোনো কারণ নেই। একশ’ বছর পর পর এমনই ক্রাইসিস পৃথিবীতে আসে। করোনার মতো একটা ক্রাইসিজ একশ বছর পর এসেছে। কিছু সময় আমাদের ধৈর্য সহকারে এটি সহ্য করতে হবে। পৃথিবীর কোনো মানুষই বিনোদন ছাড়া থাকতে পারে না। বিনোদন বিহীন মানুষের জীবন কখনো রসালো থাকে না। এ কারণে হয়তো এই সময়টা আমরা ধাক্কা খাচ্ছি। তবে আমার আহ্বান নতুন যারা রিয়েলিটি শোতে কিংবা এসএমএসের মাধ্যমে আসছে তারা হয়তো চর্চা করার সুযোগ সেভাবে পেত না। এখন তারা যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে চর্চা করতে হবে নিয়মিত। চর্চা করলে তারাও টিকে থাকবে সংগীতও টিকে থাকবে। এটা না টিকে থাকার আর কোনো কারণে নেই। এই করোনা সময়টি সবার জন্য একটা পরীক্ষা বলা যায়। 

এ প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পী ঐশী বলেন, প্রথমত স্টেজ শো বন্ধ হওয়ায় অনেকেই বিপাকে পড়েছে। কণ্ঠশিল্পী, যারা গানের সঙ্গে বিভিন্ন যন্ত্র বাজায় সবাই একটা কঠিন সময়ের মুখোমুখি। পাশাপাশি আমি অনুভব করি আমরা যখন স্টেজ শো করতাম তার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে যারা ছিলেন, যারা লাইট, সাউন্ড করতেন তারা এখন পুরোপুরি বসে আছেন। কারণ, স্টেজ শো ছাড়া ওনাদের ব্যবহার নেই। আমার মনে হয় এই পুরো সেক্টরটি খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, বাংলা গানের জন্য এই ইফেক্টটা হয়তো থাকবে না। কারণ, যারা ভাল কাজ করে তারা সবাই কিন্তু ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এই লকডাউনেও আমি অনেক গানের রেকর্ড করেছি। ঈদ বা অন্যান্য অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে যেভাবে গান বের হয়, সেভাবেই গান প্রকাশ হয়েছে। গত এক বছরে কিন্তু গান থেমে থাকেনি। গত ঈদে কিন্তু প্রচুর গান বের হয়েছে। স্টেজ শোয়ের দিকে ফোকাছ কমে গেছে ঠিকই, ওটা আর হচ্ছে না। কিন্তু ঘরে বসে থেকে শিল্পীদের গান তৈরির কাজ থেমে নেই।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh