গেওরগ ট্রাকলের কবিতা

অনন্ত উজ্জ্বল

প্রকাশ: ০২ মে ২০২১, ০১:১৫ পিএম

কবি গেওরগ ট্রাকল

কবি গেওরগ ট্রাকল

গেওরগ ট্রাকল অস্ট্রিয়ার সলজবার্গ শহরে জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। আলপস পর্বতমালার উত্তর-মধ্যাংশের এই শহরেই অ্যাস্ট্রো-হাংগেরিয়ান অধিবাসী গেওরগ ট্রাকল তাঁর ২৭ বছরের জীবনের ২১ বছর অতিবাহিত করেন। ইউনিভার্সিটি অব ভিয়েনা থেকে ফার্মাসিতে পাস করা এই কবি কিছুদিন ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন।

এক্সপ্রেশনিজম আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ট্রাকল অস্ট্রিয়ার একজন গুরুত্বপূর্ণ এক্সপ্রেশনিস্ট হিসেবে বিবেচিত। পারিবারিকভাবে প্রটেস্ট্যান্ট হওয়া সত্ত্বেও ট্রাকল ক্যাথলিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন এবং এখান থেকে মেট্রিকুলেশন পাস করেন। হাইস্কুলের ছাত্র থাকা অবস্থায় মাত্র ১৩ বছর বয়সে ট্রাকল কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন। এই বয়সেই শুরু হয়েছিল তাঁর পতিতাপল্লিতে যাওয়া-আসা। তিনি মদ্যপান শুরু করেন ১৫ বছর বয়সে, সঙ্গে সেবন করতেন আফিম। ক্লোরোফরমসহ অনন্য আরও নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েন তিনি এই বয়সে। অনেক সমালোচক মনে করেন ট্রাকল সিজোফ্রেনিয়ায় (চিন্তা এবং কাজের মধ্যে সংগতির অভাব এমন রোগে) আক্রান্ত ছিলেন। বিভিন্ন নেশায় আসক্তির কারণে সপ্তম শ্রেণি না পেরোতেই ট্রাকল স্কুল ছাড়তে বাধ্য হন। মানবিক বিদ্যালয় ত্যাগের পর ফার্মাসিস্ট হবার স্বপ্নে বিভোর ট্রাকল লিনজার গেইসে শহরের ‘শ্বেতপরী’ নামক ফার্মাসিতে কার্ল হিন্টারহাবরাস-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে ফার্মাসিতে নিবিড় প্রশিক্ষণ শুরু করেন। 

১৯১৩ সালের বসন্তকালে গেওরগ ট্রাকলের প্রথম কবিতার বই Gedichte প্রথম প্রকাশ করেন। ট্রাকলের মৃত্যুর পর the Dream of sebastian শিরোনামে তার দ্বিতীয় বই প্রকাশিত হয় ১৯১৫ সালে। ১৯১৪ সালের ৩ নভেম্বর মারা যান। এই কবির একগুচ্ছ কাবতা ভাষান্তর করেছেন : অনন্ত উজ্জ্বল


রাত

আজ রাতে নিঃস্ব হয়েছে আমার চোখের নীলাভতা

আমার হৃদয়ের লাল রক্ত

ওহ! কীভাবে তোমার স্মৃতি এখনো পোড়ায়!

তোমার দুঃখবোধের ছদ্মবেশ,

দূরত্বের বৃত্ত আরও বাড়িয়ে দেয়।

তোমার লালরঙা ঠোঁট আমাকে হতাশ করে!


মুখোমুখি

পথে অপরিচিত একজন- আমরা একে অপরকে দেখছি

এবং আমাদের ক্লান্ত চোখের প্রশ্ন :

তুমি কী করেছো তোমার জীবনের সঙ্গে?


চুপ করো! চুপ করো! বন্ধ করো এই সমস্ত বিলাপ!


ইতিমধ্যে শীতল হয়েছে আমাদের চারপাশ,

মেঘেরা ভেসে যাচ্ছে সুবিশালতায়।


আমার ধারণা আমরা আরও অনেক কিছু জানবো 

এবং এই রাতে- আমাদের উদ্ধার করার জন্য

কোথাও কেউ নেই!


ছায়া

অতঃপর সকালে আমি বসেছিলাম ফুল বাগানের মধ্যে-

নীল ফুলে প্রস্ফুটিত গাছগুলো দাঁড়িয়ে,

গায়ক পাখিদের চিৎকার এবং স্পন্দিত ধ্বনিতে পূর্ণ-


আমার ছায়া দেখলাম ঘাসের মধ্যে,

দৃঢ়ভাবে দোমড়ানো অদ্ভুত এক প্রাণী

দুঃস্বপ্নের মতো শায়িত!


আমি খুব ভয়ে পাশ কাটিয়ে গেলাম,

এদিকে একটি নীলাভ ঝরনা গান গাইলো

একটি রক্তবর্ণ মুকুল ফুটে উঠলো

আর পশুটিও পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।


শোকসংগীত

প্রেমিকা প্রতারণা করেছে সবুজ ফুলের সঙ্গে

তার খামখেয়ালি খেলার এই বাগানে-

ওহ! এখনো জ্বলছে জোনাকির মিটিমিটি আলো;

উইলো গাছের আড়ালে!


কিডরন ভ্যালির ছোট নদীর ওপারে

আমার নিথর দুটো ঠোঁট-

স্বর্ণময় মুখে নড়েচড়ে ওঠে 

নক্ষত্রের মতো। 


কিন্তু তারা আর নীহারিকারা ডুবে যায় ওপারের সমতলে,

বন্য নাচ নাচতে নাচতে... ডুবে যায় অব্যক্ত কথারাও।


ওহ! আমার প্রেমিকা 

তোমার ঠোঁট

আমার খোলা মুখের মধ্যে পরিপক্ব হয়;

তারপর- আমাদের মধ্যে বয়ে যায়

সহজ শান্তির নির্মম সোনালি নীরবতা!


দেখ, খুন হওয়া শিশুর রক্ত

ঘাম হয়ে উড়ে যাচ্ছে স্বর্গের দিকে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh