নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর জয়, আদালতে যাবেন মমতা

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০২ মে ২০২১, ০৭:৩৭ পিএম

শুভেন্দু অধিকারী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুভেন্দু অধিকারী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে ভোট নিয়ে ব্যাপক নাটকীয়তা দেখা গেছে। ১৭ রাউন্ড ভোট গণনার পর খবর আসে, নন্দীগ্রামে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জয়ী হয়েছেন। কিন্তু সন্ধ্যা গড়াতেই মমতার জয় নিয়ে বিভ্রান্তি শুরু হয়। তারপরই খবর আসে, নন্দীগ্রামে ১ হাজার ৬২২ ভোটে বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী জয়ী হয়েছেন। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফলাফলের বিষয়ে শুভেন্দু জানিয়েছেন, ‘১ হাজার ৬২২ ভোটে আমি জিতেছি।’

এ ঘটনায় কমিশনের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা বলেন, ‘নন্দীগ্রামের মানুষের রায় মেনে নিচ্ছি। কিন্তু ওখানে ভোট লুট হয়েছে। আদালতে যাব আমরা।’

এর আগে রবিববার (২ মে) সকালে ভোট গণনার পর থেকেই নিজ আসনে মমতার হেরে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তা-ও আবার দীর্ঘদিনের সহকর্মী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। এক রাউন্ডে শুভেন্দু এগিয়ে গেলে পরে রাউন্ডে আবার মমতা এগিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে চলেছে ভোট গণনা।

পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয়বারের মতো সরকার গড়তে যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯২টি আসনের ভোট গণনায় দেখা গেছে ২০৯টিতে এগিয়ে আছে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী।

স্থানীয় সময় রবিবার সকাল ৮টা থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯২ আসনের ভোট গণনা শুরু হয়েছে। গত ২৭ মার্চ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত আট দফায় রাজ্য বিধানসভার ২৯২ আসনে ভোট হয়। সেই নির্বাচনের ফলাফল আজ গণনা করা হয়।

গোটা রাজ্যে ভোট গণনা চললেও বাড়তি নজর ছিল নন্দীগ্রামের দিকে। নন্দীগ্রামে যেন সাপ-লুডোর খেলা চলছিল। একবার মমতা এগোচ্ছেন, তো একবার শুভেন্দু। সকাল ৯ টা ২০ মিনিটে প্রথম রাউন্ডে ১ হাজার ৪৯৭ ভোটে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু। দ্বিতীয় রাউন্ডের গণনা শেষে লিড বাড়িয়ে সাড়ে চার হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে যান শুভেন্দু। তৃতীয় রাউন্ড শেষে মমতার সঙ্গে তার ভোটের ব্যবধান দাঁড়ায় সাত হাজার ২৬২। পঞ্চম রাউন্ডের শেষে তিন হাজার ৬৮৬ ভোটে এগিয়ে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। 

১১ রাউন্ডের শেষে ৩৩২৭ ভোটে এগিয়ে যান ছিলেন মমতা। ১২ রাউন্ডের শেষে ফের এগিয়ে যান শুভেন্দু। ১২ রাউন্ড শেষে শুভেন্দুর প্রাপ্ত ভোট ৭৯ হাজার ৯০। অন্য দিকে মমতা পেয়েছেন ৭৪ হাজার ৬৯১ ভোট। সবশেষ পঞ্চদশ রাউন্ডের ভোট গণনা শেষে সাড়ে চার হাজার ভোটে এগিয়ে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রতিটি রাউন্ডে রীতিমতো ওঠানামা চলেছে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে টানটান উত্তেজনা তৈরি হয় নন্দীগ্রামে। গণনায় বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী এগিয়ে থেকেই শুরু করেছিলেন।

নির্বাচনের পর বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছিলেন মমতা ও শুভেন্দু। মমতা বলেছিলেন, তিনি নিশ্চিত, এই আসনে ৯০ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনিই জিতবেন। অন্যদিকে, শুভেন্দু বলেছিলেন, তিনি মমতাকে অর্ধলক্ষ ভোটের ব্যবধানে হারাবেন।

উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতার প্রতিদ্বন্দ্বী শুভেন্দু তারই একসময়ের ডান হাত, মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্য। তিনি গত ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। গত ১ এপ্রিল নন্দীগ্রামে ভোট হয়। এই দফার ভোটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিল নন্দীগ্রাম।

এক সময় মমতার ‘লেফটেনেন্ট’ হিসেবে পরিচিত শুভেন্দু এবারই প্রথম পদ্মফুল নিয়ে লড়েন। ২০১৬ সালে এ আসনে ঘাসফুলের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হওয়া শুভেন্দু গতবছর ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন।

মমতার সরকারে পরিবহন ও পরিবেশ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লোকসভায় তৃণমূলের প্রতিনিধিত্ব করা শুভেন্দু ১৯৯৫ সালে কংগ্রেসের হয়ে কাউন্সিলর নির্বাচনে জেতেন। নন্দীগ্রামে তার ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রভাব সুবিদিত ছিল।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh