পশু চিকিৎসায় কাজ করে স্বীকৃতি পেলেন যে বাংলাদেশি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২১, ০২:৩৯ পিএম

পশু চিকিৎসার শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখায় এশিয়ার শত বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান পেলেন সালমা সুলতানা। ছবি: বিবিসি বাংলা

পশু চিকিৎসার শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখায় এশিয়ার শত বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান পেলেন সালমা সুলতানা। ছবি: বিবিসি বাংলা

বিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণায় অবদানের জন্য এশিয়ার শত বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান পাওয়া তিন বাংলাদেশি নারীর একজন সালমা সুলতানা। পশু চিকিৎসার শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখার জন্য তাকে এই স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী এশিয়ান সায়েন্টিস্টে ১০০ জন বিজ্ঞানীর এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

এই তালিকায় আরো যে দুই বাংলাদেশি নারী বিজ্ঞানী আছেন তাদের একজন হলেন- আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র-বাংলাদেশের ফেরদৌসি কাদরী। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিশুদের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে কাজ করেন তিনি। অন্যজন হলেন- বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সায়মা সাবরিনা। ন্যানো ম্যাটেরিয়্যালের ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করেন তিনি।

সালমা সুলতানা একজন কৃষিবিদ। তিনি মূলত খামারি ও ক্ষুদ্র কৃষকদের নিয়ে কাজ করেন। তিনি পশুর রোগ নির্ণয়ের জন্য ল্যাবরেটরিসহ একটি ভেটেরিনারি হাসপাতালও গড়ে তুলেছেন। পাশাপাশি ‍তিনি বাংলাদেশের বেসরকারি প্রাণী চিকিৎসা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মডেল লাইভস্টক অ্যাডভান্সমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান।

সালমা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় দেখি বাংলাদেশে পশু চিকিৎসায় একটা শূন্যতা রয়ে গেছে। সেই কারণে এ বিষয়ে কাজ করার ব্যাপারে উৎসাহী হই। আমাদের দেশে পশু চিকিৎসক রয়েছে। কিন্তু তাদের জন্য যথেষ্ট সংখ্যায় সহকারী বা ভেটেরিনারি নার্স নেই। ডাক্তাররা কিন্তু সবকিছু করতে পারে না। আমাদের ল্যাবরেটরির ক্ষেত্রেও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে দেখি কেউ নেই যিনি আমাকে সাহায্য করতে পারেন। তখন মনে হলো যে এখানে কাজের একটা বড় সুযোগ রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, পর্যাপ্ত জ্ঞান ও প্রশিক্ষণের অভাবের কারণে খামারিরা তাদের গবাদি পশু ঠিক মতো প্রতিপালন করতে পারছে না। এর ফলে তারা যেমন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়ছে। আমাদের কৃষি খাতে অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু গবাদি পশু চাষের বেলায় কৃষকরা এখনো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে না। এ বিষয়ে তাদের সাধারণ জ্ঞানেরও অভাব রয়েছে।

এ বিষয়ে একটি উদাহরণ দিতে গিয়ে সালমা বলেন, গরু যেখানে রাখা হয় সেই গোয়াল ঘরের পরিবেশ খুব একটা উন্নত নয়। একটা গোয়াল ঘরের ছাঁদ যে ১৪ থেকে ১৮ ফুট উঁচু হতে হবে সেটাও অনেকে জানে না। এমনকি গবাদি পশুর প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়ে তাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই। এ বিষয়ে তারা কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছে না, যার ফলে তাদের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গরুচাষিরা আগে ভুসির সাথে পানি মিশিয়ে গরুকে খাওয়াতো। গরুকে ভাত খাওয়ানো হতো। জাউ রান্না করে খাওয়াতো। এ সব খাদ্য গরুর পেটের জন্য অনেক ক্ষতিকর। গরুকে শুকনো খাবার দিতে হবে। কিন্তু এ সব বিষয়ে তাদের জ্ঞান নেই।

তিনি আরো বলেন, আপনারা দেখেন চালের কেজি কতো করে, ভাল চাল ৬০/৭০ টাকা কেজি, মাছের কেজি কতো দেখেন, কিন্তু এক কেজি গরুর মাংসের দাম ৫০০/৫৫০ টাকা। ফলে তাদের জন্য এটা অনেক লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। কিন্তু জ্ঞানের অভাবের কারণে তারা সেটা অর্জন করতে পারছে না।

সালমা বলেন, পশু চিকিৎসায় জ্ঞানের অভাব প্রভাব ফেলছে মানুষের স্বাস্থ্যখাতেও। শুধু উৎপাদন করলেই তো হবে না, উৎপাদিত পণ্য মানুষের জন্য নিরাপদ কি না সেটাও তো চিন্তা করতে হবে। গরুর মাংস বা দুধ, হাঁস মুরগির ডিম নিরাপদ হচ্ছে কি না সেটাও তো জরুরি।

আমাদের দেশে অনেক অসুস্থ গরু জবাই দেয়া হয়। সেই সময় হয়তো গরুর চিকিৎসা চলছে। এই অবস্থায়ও জবাই করা হচ্ছে। ফলে ওষুধের উপাদানগুলো গরুর দেহেই থেকে যাচ্ছে। সেই মাংসটা আমরা খাচ্ছি। ফলে আমাদের স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে।

তবে গত কয়েক বছরের কাজের ফলে কৃষকদের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন চোখে পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন তারা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারেও আগ্রহী। তারা এখন অনেক কিছু জানতে চেষ্টা করছে। তারা ইউটিউব ঘাঁটছে। একজন খামারি যখন দেখবেন দুধের উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে তখন তিনি নিজেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চাইবেন। এ ধরনের প্রচারণা ও প্রশিক্ষণের ফলে গরু চাষিদের মধ্যে যেসব কুসংস্কার ছিল সেসবও ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। -বিবিসি বাংলা

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh