মানিক রাইহান বাপ্পী
প্রকাশ: ০৬ মে ২০২১, ০৫:০১ এএম | আপডেট: ০৬ মে ২০২১, ০৫:০২ এএম
অ্যান্টিবায়োটিক ফ্রি ব্রয়লার মুরগির মাংস উৎপাদন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন গবেষক অ্যান্টিবায়োটিক ফ্রি ব্রয়লার মুরগির মাংস উৎপাদনে সক্ষম হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যেও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে উৎপাদিত অ্যান্টিবায়োটিক ফ্রি ব্রয়লার। গবেষকরা যার নাম দিয়েছেন ‘গ্রিন ব্রয়লার’।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিভাগের দুই শিক্ষক ড. শরিফুল ইসলাম ও ড. হাকিমুল হকের নেতৃত্বে একদল গবেষক গবেষণা কাজটি করছেন। গবেষকরা বলছেন, সরকারি সহযোগিতা পেলে জেলা পর্যায়ে তারা খামারিদের অ্যান্টিবায়োটিক ফ্রি ব্রয়লার মুরগির মাংস উৎপাদনের জন্য প্রশিক্ষণ দিতে প্রস্তুত। যা অ্যান্টিবায়োটিক ফ্রি ব্রয়লার উৎপাদনে দেশে এক নবদিগন্ত সূচনা করবে বলেও প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
গবেষক অধ্যাপক হাকিমুল হক জানান, প্রথম পর্যায়ে ২৫০টি মুরগি দিয়ে গবেষণা শুরু করি। সর্বশেষ আমরা পাঁচশ ব্রয়লার মুরগির ওপর গবেষণা করেছি। খামারিদের মতো আমরাও ভ্যাক্সিন ব্যবহার করে। তবে রোগ-প্রতিরোধ ও দ্রুত বৃদ্ধির জন্য খামারিরা বাজারের যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয় তার পরিবর্তে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি ওষুধ ব্যবহার করেছি। সাধারণ ব্রয়লারের মতো এসব মুরগিও দ্রুত বাড়ছে। সাধারণত ২৫-২৭ দিন বয়সের একটি গ্রিন ব্রয়লারের ওজন হয় দেড় থেকে দুই কেজি। স্বাদ ও মানের দিক থেকে সাধারণ ব্রয়লারের চেয়ে ভালো বলেও দাবি এই গবেষকের।
গবেষক ড. হাকিমুল হক আরও বলেন, কৃমিনাশক ওষুধের পরিবর্তে নিমপাতা এবং দ্রুত বৃদ্ধির জন্য বাজারের গ্রোথ হরমোনের পরিবর্তে সজিনার পাতা ব্যবহার করা হয়েছে। সজিনা পাতায় অ্যান্টিঅক্সিজেন রয়েছে যা দ্রুতবৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধে কাজ করে। শীতকালে মুরগির শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে আদা খাওয়ানো হয়েছে। এ ছাড়া কোয়ালিটি ফিড নামে বাজারে এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ফ্রি খাবার পাওয়া যায়। আমরা এটি ব্যবহার করেছি।
গবেষক দলের সদস্য ড. শরিফুল ইসলাম বলেন, সাধারণ ব্রয়লারের মতো অ্যান্টিবায়োটিক মুক্ত গ্রিন ব্রয়লার ২৭ দিনে ১.৭ থেকে ১.৯ কেজি ওজনের হয়। ৩২ দিনে প্রতিটি মুরগির ওজন দুই কেজির ওপরে এবং ৩৬তম দিনে পৌনে তিন কেজি থেকে তিন কেজি ওজনের হয়।
গ্রিন ব্রয়লারের মৃত্যুর হার দুই শতাংশের কম বলে দাবি করে এ গবেষক বলেন, এন্টিবায়োটিক কম ব্যবহার করায় ব্রয়লার মুরগির মৃত্যু হারও কমেছে। আমরা প্রথম ধাপে ২৫০টি ব্রয়লার মুরগির ওপর পরীক্ষা করি যেখানে মাত্র ৫টি মুরগি মারা যায়। সর্বশেষ ৫০০টি মুরগির মধ্যে মৃত্যুর হার ছিলো দুই শতাংশের কম।
ব্যয়ের প্রসংগ জানতে চাইলে অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করলেও ম্যানেজমেন্টে হাই করতে হয়। অন্যান্য খামারিরা যেখানে দুই কিংবা তিন দিন পর মেঝে পরিষ্কার করে সেখানে আমাদেরকে প্রতিদিনই পরিষ্কার করতে হয়। যাতে স্যাঁতসেঁতে না হয়। ফলে আমাদের অধিক জনবলের প্রয়োজন পড়ে। যার কারণে সাধারণ ব্রয়লারের ন্যায় উৎপাদন ব্যয় সমান হয়। এন্টিবায়োটিক মুক্ত ব্রয়লার মাংস উৎপাদনই তাদের প্রধান লক্ষ্য বলে জানান এ শিক্ষক।
ভেটেরিনারি বিভাগে শিক্ষকদের উৎপাদিত ব্রয়লার মুরগির মাংসের গ্রাহক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা। এদের মধ্যে একজন ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আজিজুর রহমান শামীম।
অধ্যাপক শামীম বলেন, একটা সময় বিশ্বব্যাপী পশুপাখির ক্ষেত্রে দ্রুত বৃদ্ধির জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হতো; কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এসব অ্যান্টিবায়োটিক ব্রয়লার, গরু মাংসে চলে যাচ্ছে, যা রান্নার পরও নষ্ট হচ্ছে না। ফলে মানুষ যখন মাংস খাচ্ছে তখন এটি তাদের শরীরের প্রবেশ করছে। অ্যান্টিবায়োটিক প্রোপার ডোজ হিসেবে নিতে হয়, কিন্তু মুরগির মাধ্যমে আসা অ্যান্টিবায়োটিক ডোজ হিসেবে থাকছে না।
ফলে অ্যান্টিবায়োটিক আন্ডার ডোজ হিসেবে গ্রহণে দুটি ঘটনা ঘটে। হয় এটি কোনো কাজ করবে না অন্যথায় আমাদের শরীরে থাকা রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুগুলো স্বল্প পরিমাণ এ অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে রেজিসটেন্স তৈরি করে। যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে হ্রাস করে দেয়। এ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকযুক্ত ব্রয়লার আহারের কারণে গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের নানা সমস্যা সৃষ্টি হয় বলেও জানান অধ্যাপক আজিজুর রহমান।